বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দাবদাহ বাড়াচ্ছে পানির সংকট, আম-লিচু চাষিদের মাথায় হাত

  • সোহেল রানা বাবু, মেহেরপুর   
  • ২৮ এপ্রিল, ২০২৪ ১৭:১৭

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ সামসুল আলম বলেন, গত দু সপ্তাহ ধরে তীব্র তাপের কারণেই আমের গুটি ঝরে যাচ্ছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

তীব্র তাপপ্রবাহের ধারাবাহিকতায় রেকর্ড তাপমাত্রায় পুড়ছে কৃষি নির্ভর মেহেরপুরের জনপদ। সপ্তাহ দুয়েক ধরে চলমান তাপদাহের মধ‍্যে বৃষ্টির দেখা তো দূরের কথা, স্থানীয় হস্তচালিত টিউবওয়েলে ও সেচ কাজে ব‍্যবহৃত অন্য মাধ্যমেও দেখা দিয়েছে পানির সংকট।

প্রাকৃতিক কারণেই মেহেরপুরে দেশের অন্য জেলার চেয়ে একটু আগেই বাজারে দেখা মেলে মৌসুমী ফল আম ও লিচুর। তাই একটু আগে থেকেই এসব ফলের বাগান পরিচর্যার কাজে ব‍্যাস্ত সময় পার করেন জেলার আম ও লিচু চাষিরা।

মৌসুমের শুরু থেকেই আবহওয়া অনুকূলে না থাকাই ঝরেছে আম ও লিচুর মুকুল, আর চলমান তাপপ্রবাহের কারণে আম-লিচু আকারে তেমন বাড়তে না পারলেও দাবদাহে ঝরে পড়ছে আম লিচুর গুটি। তাতেই স্বপ্ন ভাঙতে বসেছে চাষিদের।

এ অবস্থায় বাগানে সেচ দেয়াসহ বাড়তি পরিচর্যা করে গাছের লিচু ও আম রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন কৃষকরা। তবে তাপ প্রবাহের কারণে মিলছে না সমাধান। আম ও লিচুর গুটি ঝরা থেকে রক্ষা করতে কৃষি বিভাগ থেকে বলা হচ্ছে, পরিমিত মাত্রায় কিটনাশক স্প্রে ও সেচ দিতে।

কৃষি বিভাগের তথ‍্য অনুযায়ী, জেলায় চলতি মৌসুমে লিচুর বাগান রয়েছে ৮০০ হেক্টর জমিতে। চলতি বছরে লিচুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার টন লিচু। আমের বাগান রয়েছে ৩ হাজার ৩৩৬ হেক্টর। আর চলতি মৌসুমে আম-লিচুর মুকুল বেরিয়েছে ৬৫ শতাংশ। এই জেলায় লিচুর জাতের মধ‍্যে রয়েছে, আঁটি লিচু, বোম্বাই, চিলি বোম্বাই, আতা-বোম্বাই ও চায়না-থ্রি জাতের লিচু। আর আমের মধ্যে রয়েছে ল্যাংড়া, বোম্বাই, হিমসাগর, ফজলি, আম্রপালি, গোপালভোগ। তবে বর্তমানে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে এবার আম-লিচুর ফলন কিছুটা কমার আশঙ্কা আছে বলেও জানায় কৃষি বিভাগ।

লিচু বাগান মালিক মামুন বলেন, এ বছর শুরুতে গাছে মুকুল কম এসেছিল। বতর্মানে লিচু মুকুল থেকে ফলে পরিণত হয়েছে। প্রচণ্ড রোদের তাপে লিচু আকারে কম বেড়েছে, আবার গাছ থেকে লিচু ঝরে পড়ছে মাটিতে। পানি দিয়েও লাভ হচ্ছে না।

আরেক লিচু চাষি বিল্লাল বলেন, আমার ৭০টি লিচু গাছের মধ‍্যে ৪০টিতে ফল এসেছে। অর্ধেক গাছে ফল আসেনি। তারপর এখন রোদের তাপে গাছেই লিচু শুকিয়ে যাচ্ছে। আবার ঝরে পড়ছে। এবছর ফল অনেক কম হবে।

আম চাষি শাখাওয়াত বলেন, আমার ১৫ বিঘা জমিতে আমের বাগান আছে। এ বছর এমনিতে ফল কম ধরেছে, তার ওপর রোদের তাপে গাছ থেকে আম ঝরে পড়ছে। বতর্মান পরিস্থিতিতে গাছে থাকা আম টিকানো যাবে কি না আমার সন্দেহ আছে।

আরেক চাষি পিয়ারুল বলেন, এ বছর যে রোদের হিট। মাঠে থাকা গাছপালার দিকে তাকানো যাচ্ছে না। সব গাছ মনে হবে আওরি গেছে,পানির অভাবে। আমার বাগানের আম গাছের সব আমের গোড়া শুকিয়ে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন সেচ দিছি, তাতেও কাজ হইছে না। এ বছর আমের উৎপাদন অর্ধেক হয়ে যাবে দু-একদিনের মধ‍্যে ওপর বৃষ্টি না হলে। গাছে থাকা বাকি আম গুলোও ঝরে পড়বে।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ সামসুল আলম বলেন, গত দু সপ্তাহ ধরে তীব্র তাপের কারণেই আমের গুটি ঝরে যাচ্ছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। যেসব বাগানে আম ও লিচুর গুটি ঝরে যাচ্ছে, বিকেলের দিকে পরিমিত মাত্রায় বোরন স্প্রে করলে গুটি ঝরা রোধ করা যাবে। যেহেতু তাপমাত্রা বেশি তাই গাছের গোড়ায় পানি দিতে হবে। তাহলে গুটি ঝরা রোধ হয়ে যাবে। এতে কিছুটা হলেও উপকার পাওয়া যাবে। এ ছাড়াও নিয়মিত সেচ দেয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।

এ অঞ্চলের আবহওয়া নির্ণয়কারী চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, দু সপ্তাহ ধরেই চুয়াডাঙ্গাসহ এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় এ অঞ্চলে, যা ছিল ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর রোববার ১২টার দিকে ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আদ্রতা ছিল ২৩%।

এ বিভাগের আরো খবর