বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দেশে উচ্চ তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড হতে পারে মে মাসে

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ২৩:২৩

আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা বলেন, ‘গাণিতিক মডেল বিশ্লেষণ বলছে, মে মাসে দেশে এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হতে পারে। সিলেট অঞ্চল, মধ্যাঞ্চলের কিছু অংশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব চট্টগ্রাম অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকলেও এতে সারাদেশে চলমান তাপপ্রবাহ কমার সম্ভাবনা তেমন একটা নেই।’

দেশের সব স্থানে দীর্ঘতম সময়ব্যাপী তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ‌এই তাপপ্রবাহ শেষ হওয়ার পর আগামী মে মাসে দেশে এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হতে পারে।

আবহাওয়া অফিস শনিবার এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।

দেশ ১ এপ্রিল থেকে ২৫ দিন ধরে তাপপ্রবাহের দীর্ঘতম সময় প্রত্যক্ষ করছে এবং আবহাওয়া অফিস সতর্ক করেছে যে এ অবস্থা পরবর্তী মাসজুড়ে অব্যাহত থাকবে।

আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা বাসসকে বলেন, ‘আমাদের গাণিতিক মডেল বিশ্লেষণ বলছে, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশের কিছু অংশে প্রত্যাশিত বৃষ্টিপাত হলেও মে মাসে দেশে এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হতে পারে।

‘দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সিলেট অঞ্চল, মধ্যাঞ্চলের কিছু অংশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব চট্টগ্রাম অঞ্চলে কিছু স্বস্তির বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও এতে সারাদেশে চলমান তাপদাহ কমার সম্ভাবনা তেমন একটা নেই।’

আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক মন্তব্য করেন, ‘আগের তাপদাহের বিপরীতে এ বছর তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।’ আবহাওয়াবিদ জেবুন্নেসাও একথা সমর্থন করেন।

দৃশ্যত, প্রথমবারের মতো আবহাওয়াবিদরা জলবায়ু বিশেষজ্ঞ এবং অ্যাক্টিভিস্টদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে স্বীকার করছেন যে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়া অস্বাভাবিক আচরণ করছে এবং এর ফলে ধীরে ধীরে তাপপ্রবাহের অঞ্চল ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে।

তারা বলছেন, তাপপ্রবাহ দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ অংশ এবং আংশিকভাবে পূর্ব এশিয়ার দেশ ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামকে প্রভাবিত করেছে।

শনিবার বিকেল ৩টায় জারি করা আবহাওয়া অফিসের সবশেষ বুলেটিন অনুসারে, যশোরে চলতি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করার একদিন পর চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

রাজধানী ঢাকায় তাপমাত্রা ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হলেও উচ্চ আর্দ্রতা নগরবাসীকে ব্যাপক অস্বস্তিতে ফেলেছে।

বুলেটিনে বলা হয়েছে, ‘রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা ও পাবনা জেলার ওপর দিয়ে অতি প্রবল তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং টাঙ্গাইল, বগুড়া, বাগেরহাট, যশোর ও কুষ্টিয়া জেলায় প্রবল তাপপ্রবাহ রয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের বাকি অংশ এবং রংপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগ এবং মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহবয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।

তাপপ্রবাহে পুড়ছে চুয়াডাঙ্গা। প্রখর রোদে কাজ করতে গিয়ে তৃষ্ণা মেটাতে নলকূপের আশ্রয়ে শ্রান্ত কৃষক। ছবি: নিউজবাংলা

দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মতো এপ্রিল মাসে সাধারণত বাংলাদেশে গরম থাকে। তবে আবহাওয়াবিদদের মতে, এ মাসে তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেশি রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মিডিয়াতেও প্রাধান্য পেয়েছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন বলছে, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েক মিলিয়ন মানুষ প্রবল তাপপ্রবাহে ভুগছে। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে, কৃষি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। হিটস্ট্রোক ও সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য জটিলতার ঝুঁকি বেড়েছে।

সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের পরিস্থিতিও বিশেষভাবে স্বীকার করা হয়েছে যে কিছু এলাকায় তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। অতিরিক্ত আর্দ্রতা তাপমাত্রাকে আরও অসহ্য করে তুলেছে।

চরম আবহাওয়ার কারণে সারা দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা বাড়িতেও কিছু করতে পারছে না বা করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।

পরিস্থিতি গৃহিনী এবং মহিলাদের চরম দুর্দশায় ফেলেছে। বিশেষ করে রান্নার ক্ষেত্রে। এক গৃহিণী বলেন, ‘গরমে আমার মাথা ঘুরতে শুরু করে। মনে হয় চুলার কাছে গেলে পড়ে যাব।’

তাপপ্রবাহ হাজার হাজার মানুষকে শহরের মসজিদে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সুবিধা এবং গ্রামীণ খোলা মাঠে জড়ো হতে বাধ্য করছে। প্রচণ্ড গরম থেকে মুক্তির জন্য মানুষ বৃষ্টি কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করছেন।

তাপপ্রবাহের কারণে এপ্রিলের শুরু থেকে হাসপাতালগুলো বিশেষ স্বাস্থ্য সেবা দিতে বাধ্য হচ্ছে। এ সময়টাতে তাপজনিত অসুস্থতা নিয়ে বেশিসংখ্যক রোগী হাসপাতালে আসছে। এই দীর্ঘায়িত গরম আবহাওয়ায় শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে প্রতীয়মান হয়েছে।

রাজধানীর মুগদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, ‘হিটস্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন, ক্লান্তি ও শ্বাসকষ্টে বিপুলসংখ্যক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তারা গরমজনিত অন্যান্য রোগেও ভুগছে।’

শিশু হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশসহ (আইসিডিডিআর,বি) অন্যান্য হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানও একই ধরনের নাজুক পরিস্থিতির কথা বলছে।

আইসিডিডিআরবি’র মুখপাত্র একেএম তারিফুল ইসলাম খান দু’দিন আগে বলেন, আইসিডিডিআর, বি-তে প্রায় ৫০০ ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে। প্রতিদিন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রোগী এখানে ভর্তি হচ্ছে।’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে সংকট মোকাবেলায় অতিরিক্ত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ জারি করেছে।

ডাক্তাররা হিটস্ট্রোক থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে যতটা সম্ভব বাড়ির ভেতরে থাকা, সূর্যের সংস্পর্শে আসার সময় আবহাওয়ার উপযোগী পোশাক পরা, তাপপ্রবাহের সময় পানিশূন্যতা এড়াতে পানির পাশাপাশি বেশি তরল খাবার খাওয়া এবং কাজের সময় এক বা দুই ঘণ্টা পর পর বিশ্রাম নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমাদের মস্তিষ্ক নির্দিষ্ট মাত্রার তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। তা বেশি হলে মানুষ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে, হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারে। ডিহাইড্রেশনের কারণে ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা এবং কিডনির কর্মহীনতাসহ অন্যান্য জটিলতা দেখা দিতে পারে।’

এ বিভাগের আরো খবর