বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সম্পর্কে বেনজীর আহমেদের ব্যাখ্যা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ২১ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:২১

ফেসবুকে শনিবার একটি ভিডিও পোস্ট করেন বেনজীর আহমেদ। তাতে তিনি তার বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগের জবাব দেন। একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অসাধু উপায়ে সম্পদ অর্জনের অভিযোগের কোনোটি কোনো ব্যক্তি বা গ্রুপ প্রমাণ করতে পারলে বিনা পয়সায় হাসিমুখে সেগুলো তার বা তাদের নামে লিখে দেব।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এসে নিজের বিরুদ্ধে প্রকাশিত সংবাদকে অসত্য বলে দাবি করেছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ।

শনিবার ‘আমার কিছু কথা’ শিরোনামে এক ভিডিও বার্তায় নিজের বিরুদ্ধে প্রকাশিত সংবাদ প্রসঙ্গে এ দাবি করেন তিনি।

বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আমার পরিবার ও আমার নামে অসত্য তথ্য প্রকাশ হয়েছে। তিলকে তাল বানিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যাচার।

বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশের মহাপরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর অবসরে যান বেনজীর। কর্মজীবনে একজন চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বেনজীর আহমেদ খুবই সাফল্যের সঙ্গে বেশকিছু উল্লেখযোগ্য কাজ সম্পন্ন করেছেন।

তার সুদক্ষ নেতৃত্বে দেশে মাদক, জঙ্গীবাদ নিয়ন্ত্রণসহ খাদ্যপণ্যে ফরমালিন মেশানোর মতো ঘটনা অনেকটা বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে।

বেনজীর আহমেদের বুদ্ধিমত্তার কারণে বিনা রক্তপাতে রাজধানীর মতিঝিলে শাপলা চত্বরে হেফাজতের তাণ্ডবের পর বড় ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে দেশ রক্ষা পেয়েছে। তার সময়েই সুন্দরবনে দস্যু দমন করা হয়েছে।

এছাড়া পুলিশে সঠিক নিয়মে নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতিসহ অনেক বিষয়ে আধুনিকীকরণ ও সংস্কার করেছেন তিনি।

ভিডিওর শুরুতে ঈদুল ফিতর ও নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘সম্প্রতি পত্রিকান্তরে আমার এবং পরিবারের বিরুদ্ধে কিছু খুবই আপত্তিজনক, মানহানিকর, অসত্য এবং বিকৃত সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। সেই সংবাদের সূত্র ধরে কতিপয় আউটলেট একই ধরনের সংবাদ পুনারাবৃত্তিক্রমে পরিবেশন করেছে।

‘তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় এই যে, দেশের মূলধারার ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এই অসত্য ও মানহানিকর সংবাদ পরিবেশনে তেমন কোনো আগ্রহ দেখায়নি।’

বেনজীর বলেন, ‘আমি অবসর গ্রহণের দুই বছর পর আকস্মিকভাবে আমার এবং আমার পরিবারের বিরুদ্ধে এরকম একটি মানহানিকর, অসম্মানজনক, অসত্য সংবাদ কেন পরিবেশিত হলো, আমি সেই আলোচনায় সচেতনভাবে যাব না। এর কারণ রাজধানীর সব সাংবাদিক এবং সচেতন মহলের মুখে মুখে।’

পুলিশের সাবেক এই মহাপরিদর্শক বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে প্রকাশিত সংবাদকে আমরা বিশ্লেষণ করেছি। এতে সব মিলিয়ে ৪৫টি তথ্য, অভিযোগ এবং অপমানজনক বক্তব্য সন্নিবেশিত আছে। এর মধ্যে ২৪টি অভিযোগ বা তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা ও কল্পনাপ্রসূত। দুটি বিষয়কে সাতবার পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে এবং দুটি বিষয়কে ভুল প্রেক্ষাপটে বিকৃতভাবে পরিবেশন করা হয়েছে। বাকি ১০টি অভিযোগ বা তথ্যকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে শুধু তিলকে তাল নয়, তালগাছের ঝাড়সমেত তাল বানিয়ে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।’

কৃষি খাতে তার পরিবারের শত কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে- এমন অভিযোগের বিষয়ে ড. বেনজীর বলেন, ‘গোপালগঞ্জে ২০১৪ সাল থেকে আমাদের পারিবারিক কৃষি খামার ও কৃষিতে বিনিয়োগ আছে। সে সময় থেকে ১০ বছর ধরে কৃষিক্ষেত্রে আমাদের পারিবারিক বিনিয়োগ ও ব্যবসা চলে আসছে।

‘প্রথমে সেখানে আমাদের পরিবারের সদস্যরা একটি ছোট মৎস্য খামার প্রতিষ্ঠা করে। সেই খামারের আয় থেকে আস্তে আস্তে ব্যবসার বৃদ্ধি হয়। পরবর্তীতে মৎস্য খামারের পাশাপাশি সেখানে বিভিন্ন ধরনের বনজ, ফলদ, ঔষধি ও মসলাজাতীয় বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে ব্যাপক বনায়ন করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘কৃষিক্ষেত্রে ব্যবসার জন্য শত কোটি টাকা বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে, যা মিথ্যা। সত্য এই যে, সেখানে যে পরিমাণ জমি কেনা হয়েছে, তার থেকে বেশি আমার পরিবারের ব্যাংক এবং অন্যান্য সূত্র থেকে ঋণ, লোন বা দেনা রয়েছে। এছাড়া এই জমির পরিমাণ ও টাকার উৎসের বিষয়গুলো ট্যাক্স ফাইলে যথাযথভাবে সন্নিবেশিত আছে।’

শত কোটি টাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক তার স্ত্রী- এ সংক্রান্ত অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘এটা পুরো মিথ্যা। পূর্বাচলে ৪০ কাঠা জমির ওপর ডুপ্লেক্স বাড়ির অভিযোগও মিথ্যা। পত্রিকার প্রতিবেদনে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে আমার এবং আমার পরিবারের যে সম্পত্তির কথা বলা হয়েছে তা-ও সম্পূর্ণ মিথ্যা।

বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আমার ৩৫ বছরের চাকরি জীবনের বেতন-ভাতার যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে সেটিও ভুল এবং খুবই অপমানজনক। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে- আমার অবসরের পর তথাকথিত থলের বিড়াল বেরিয়ে এসেছে। এ ধরনের শব্দপ্রয়োগও খুবই আপত্তিকর।

‘আমাদের পারিবারিক ব্যবসা ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং বিগত ১০ বছর ধরে প্রকাশ্যে এবং সর্বসম্মুখে পরিচালিত হয়ে আসছে। আমাদের পারিবারিক মৎস্য প্রজেক্ট জাতীয় পর্যায়ে মৎস্যচাষের জন্য স্বর্ণপদক পেয়েছে। সেটি আরও একাধিক পুরস্কারপ্রাপ্ত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এগুলো একদিনে হয়নি। বছরের পর বছর ধরে সবার শ্রমে-ঘামে এগুলো অর্জিত হয়েছে। এই যে সবার চেষ্টা, এটিকেও এই ধরনের সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে আমি মনে করি অপমান করা হয়েছে।’

গোপালগঞ্জে সাভানা এগ্রো প্রজেক্টে ২৫ কোটি টাকার বিনিয়োগের অভিযোগ সম্পর্কে বেনজীর বলেন, ‘এ অভিযোগ মিথ্যা। গোপালগঞ্জ প্রজেক্টে দুটি কোম্পানির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে একটিতে ২০ কোটি টাকা, আরেকটিতে ৫ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের কথা এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যেন সাধারণ পাঠক মনে করেন যে এই দুটি কোম্পানিতে আমাদের পরিবার ২৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।

‘আসলে অনুমোদিত মূলধন আর পরিশোধিত মূলধন এক জিনিস নয়। এখানে এই দুইটি কোম্পানির এক কোটি টাকাও পরিশোধিত মূলধন নেই।’

তিনি বলেন, ‘মূলত এই দুটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ব্যবসাকে সম্প্রসারণের জন্য। আমাদের পরিবার ওখানে এখন যে ব্যবসা করছে, সেটাকে সম্প্রসারণ করতে চায়; কৃষিক্ষেত্রে বিনিয়োগকে সম্প্রসারণ করতে চায়।’

প্রকল্প এলাকার নাম ‘বেনজীরের চক’ প্রসঙ্গে সাবেক এ আইজিপি বলেন, ‘এটা প্রতিবেদকের নিজস্ব একটি আবিষ্কার। বেনজীরের চক নামের কোনো জায়গা প্রকল্প এলাকায় নেই। প্রকল্প এলাকায় মিটার ছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে- এ অভিযোগও মিথ্যা।

‘এখানে চাপ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে জমি কেনার কথা বলা হয়েছে, যেটি একটি অসম্ভব কল্পনা। এটি প্রধানমন্ত্রীর নিজ জেলা এবং প্রকল্প এলাকাটি প্রধানমন্ত্রীর সংসদীয় আসন সন্নিহিত। ফলে এ ধরনের একটি জায়গায় গায়ের জোরে বা ক্ষমতা দেখিয়ে জমি কেনার চিন্তা একটি অসম্ভব কল্পনা।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমাদের মগবাজারে একটি ৪ হাজার স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাট আছে। এটি একটি মিথ্যা তথ্য। মগবাজার কেন, সিদ্ধেশ্বরী বা রমনার আশপাশে আমাদের কোনো ফ্ল্যাট নেই।

‘আনন্দ হাউজিংয়ে ৪০ কাঠা জমিসহ ৪৫ কোটি টাকার বাড়ি আছে বলে প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে। আনন্দ হাউজিং একটি বেসরকারি সমবায় সমিতি। ২০০৭ সালে আমরা এ সমিতির সদস্য হই এবং একটি প্লট বুকিং দেই। কিস্তির মাধ্যমে আমরা এই টাকা পরিশোধ করি। সেখানে আমাদের ৪০ কাঠার কোনো প্লট নেই। এটা শতগুণ বাড়িয়ে বলা হয়েছে।’

আইজিপি থাকাকালে পূর্বাচলে ১০ কাঠার প্লট কিনেছেন বলে যে তথ্য প্রতিবেদনে উপস্থাপন করা হয়েছে, সেটিকেও মিথ্যা বলে উল্লেখ করেন বেনজীর আহমেদ।

রূপগঞ্জে ২ বিঘা জমি ও বসুন্ধরায় মেয়ের জন্য ফ্ল্যাট সম্পর্কে সাবেক এই আইজিপি বলেন, ‘রূপগঞ্জের নাওড়ায় আমাদের দুই বিঘা জমির একটি প্লট আছে, যার বাজার মূল্য দুই কোটি বলে সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে। বাস্তবে রূপগঞ্জের আনন্দ হাউজিংয়ে একটি প্লট ছাড়া রূপগঞ্জের কোনো ইউনিয়নে আমাদের কোনো জমি নেই। এটা মিথ্যা তথ্য।

‘মেয়ের বিশ্রামের জন্য সাড়ে তিন কোটি টাকার ফ্ল্যাট কিনেছি বলে প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে। আমার জ্যেষ্ঠ কন্যা সবসময় আমার সরকারি বাসা থেকে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করত। তার বিশ্রামের জন্য বাড়ি কেনার প্রয়োজনীয়তা আমরা কখনও অনুভব করিনি।

‘দুবাই, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ায় শত কোটি টাকার ব্যবসা রয়েছে বলে যে তথ্য প্রতিবেদনে দেয়া হয়েছে তার কোনো ভিত্তি নেই।’

বেনজীর বলেন, ‘সিঙ্গাপুরে তথাকথিত একটি জুয়েলার্সে আমাদের মালিকানা আছে বলে দাবি করা হয়েছে। এই ধরনের কোনো জুয়েলার্স আমাদের পরিবারের সদস্যরা পরিচালনা করে না। আমাদের মালিকানাও নেই, বিনিয়োগও নেই। এটি একটি সর্বাংশে মিথ্যা তথ্য।’

প্রতিবেদনে সোনালী ব্যাংক থেকে বিপুল অংকের ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করার অভিযোগটিরও কোনো ভিত্তি নেই বলে উল্লেখ করেন বেনজীর আহমেদ।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপে নারিকেল বাগান দখলের যে অভিযোগ প্রতিবেদনে করা হয়েছে, সেটিও মিথ্যা বলে বর্ণনা করেন তিনি।

বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘শেষ কথা হচ্ছে, আমার এবং আমার পরিবারের যে সম্পত্তি রয়েছে তার প্রত্যেকটির বিপরীতে অর্থের উৎসসহকারে ট্যাক্স ফাইলে যথাযথভাবে সেগুলো বর্ণিত আছে। আমার পরিবার তাদের ব্যবসার জন্য এবং আমি নিয়মিতভাবে কর পরিশোধ করি।

‘আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, আমি ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সেরা করদাতার সম্মানও লাভ করেছি। চাকরি জীবনে আমি ব্যক্তিগতভাবে সবসময়ই ঘুষ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। আইজিপি হিসেবে আমি সরকারের শুদ্ধাচার পুরস্কারে ভূষিত হয়েছি।’

সাবেক এই পুলিশপ্রধান বলেন, “অবসরের পরে আমাকে দুর্নীতিবাজ প্রমাণের চেষ্টা অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক ও দুঃখজনক। যারা সততার সঙ্গে চাকরি করতে চান, জনগণের সেবা করতে চান- এ ধরনের অপপ্রয়াস তাদের নিরুৎসাহিত করবে।

“পত্রিকায় প্রকাশিত যেসব সম্পত্তির কথা আমি বলেছি ‘নেই’- আপনারা যদি কেউ প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে আমি এবং আমার পরিবার হাসিমুখে সেই ব্যক্তিকে বা সেই গ্রুপকে সেই সম্পত্তি বিনা পয়সায় লিখে দেব।”

এ বিভাগের আরো খবর