বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ছোট যমুনা নদীতে পলো দিয়ে মাছ ধরা উৎসব

  • প্রতিনিধি, নওগাঁ   
  • ৯ এপ্রিল, ২০২৪ ২২:৪৪

চৈত্র মাস। খাল-বিল, নদী নালা ও ডোবার পানি কমতে শুরু করেছে। এসব জলাশয়ে এখন স্বল্প পানি। ইরি-বোরো ধান আধাপাকা অবস্থায়। এ সময়টাতে অনেকের হাতে তেমন একটা কাজ থাকে না। অবসর সময়ে সৌখির মাছ শিকারিরা তাই দলবদ্ধ হয়ে পলো/হাউরি (চাপিজ্বালা) নিয়ে জলাশয়গুলোতে মাছ শিকারের জন্য বের হন।

বাঁশের তৈরি পলো নিয়ে কয়েক গ্রামের শত শত মানুষ দলবেঁধে নেমে পড়ে নদীর হাঁটুপানিতে। তাদের পলোর নিচে ধরা পড়ে নানা জাতের দেশীয় মাছ। এ সময় এক উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। সে উৎসব দেখতে নদীরপাড়ে হাজির হয় অনেক মানুষ।

সীমান্তের নওগাঁ জেলায় পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসবের চিত্র এটি।

চৈত্র মাস। খাল-বিল, নদী নালা ও ডোবার পানি কমতে শুরু করেছে। এসব জলাশয়ে এখন স্বল্প পানি। ইরি-বোরো ধান আধাপাকা অবস্থায়। এ সময়টাতে অনেকের হাতে তেমন একটা কাজ থাকে না। অবসর সময়ে সৌখির মাছ শিকারিরা তাই দলবদ্ধ হয়ে পলো/হাউরি (চাপিজ্বালা) নিয়ে জলাশয়গুলোতে মাছ শিকারের জন্য বের হন।

মাছ পাওয়া বা না পাওয়া বড় কথা নয়। সবাই একসঙ্গে মাছ শিকার করতে বের হওয়াই আনন্দের ব্যাপার। প্রতিবছর এ অবসরে অল্প পানিতে মাছ শিকারের মহোৎসব মেতে ওঠে সবাই।

নওগাঁ সদর উপজেলার ছোট যমুনা নদী। এ নদীর কোথাও হাটু পানি আবার কোথাও বুক সমান। আবার কোথাও শুকিয়ে গেছে।

মঙ্গলবার দুপুরে ছোট যমুনা নদীর শীবপুর এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, একদল সৌখিন শিকারি নদীতে নেমে মাছ শিকার করছে। মাথা ও কোমরে আঁটসাঁট করে গামছা বেঁধে অনেকটা আনন্দ নিয়েই প্রায় শতাধিক মানুষ শখের বসে মাছ ধরার উপকরণ নিয়ে নদীতে নেমেছে। এদের অধিকাংশই যুবক। কেউ আবার উদাম শরীরেও পানিতে নেমেছেন; নেমেছেন মাছ ধরতে। পানিতে নেমে হৈ-হুল্লোড় করে সবাই চাপিজ্বালা দিয়ে মাছ শিকারে ব্যস্ত।

খাল-বিল, নদী-নালা ও ডোবাতে পানি কমে যাওয়ায় এখন বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে দলবেঁধে মাছ ধরার দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। দলবদ্ধ হয়ে পানি শুকিয়ে, আবার কোথায় পলো দিয়ে মাছ ধরা হয়। দিনে-রাতে সুতা-বড়শি দিয়ে নদী থেকে ধরা হচ্ছে বোয়াল মাছ।

বড়শিতে খাদ্য গেঁথে ছুড়ে ফেলা হয় নদীর পানিতে। রাতে বাতি জ্বেলে নদীর পাড়ে সুতার বড়শি দিয়েও মাছ ধরতে দেখা যায়। তবে সুতা-বড়শি দিয়ে মাছ ধরা দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়।

বিভিন্ন নদী ও জলাশয়গুলোতে দল বেধ সারিবদ্ধ হয়ে পানিতে ফেলা হয় চাপিজ্বালা। যেখানে ফাঁদে পড়ে শোল, টাকি ও বোয়াল।

তবে কবে কোথায় মাছ ধরা হবে, উপজেলার হাট ও বাজারে আগেই সবাইকে জানিয়ে দেয়া হয়। অনেকে আবার মোবাইল ফোনে জেনে নেন। গ্রাম থেকে ৮-১০ কিলোমিটার বা আরও দূরে পায়ে হেঁটে দলবদ্ধ হয়ে বেরিয়ে পড়েন মাছ শিকারে।

সদর উপজেলার শীবপুর গ্রামের বাসিন্দা জুয়েল হোসেন বলেন, ‘বাপ-দাদার সময় থেকে আমরা প্রতি বছর পলো দিয়ে মাছ ধরা উৎসব করে আসছি। কারও পলোতে মাছ ধরা পড়ে আবার কারও হয় না। মাছ পাওয়াটা বড় কথা নয়, বড় কথা সবাই আনন্দ করে একসঙ্গে মাছ ধরতে বের হয়। এটাই আনন্দ।’

বদলগাছী উপজেলার বালুভরা গ্রামের নিপেন্দ্রনাথ দত্ত বলেন, ‘গ্রাম থেকে অন্তত ৬ কিলোমিটার দূরে এখানে মাছ শিকার করতে এসেছি আমরা বেশ কয়েকজন। দলবদ্ধভাবে এভাবে মাছ ধরতে আমাদের খুব ভালো লাগে, অনেক আনন্দ পাই আমরা।’

সদর উপজেলার কুমাইগাড়ী এলাকার জাহিদুল হক বলেন, ‘ছোট বেলাতেও বাবার সঙ্গে পলো দিয়ে এভাবে নদীতে মাছ ধরতাম। এখন তো বয়স প্রায় ৬০ বছরের মতো। তবুও মাছ ধরা উৎসব হবে জানার পর না এসে আর থাকতে পারলাম না।

‘আগে তো নদীতে বড় বড় নানা জাতের মাছ পাওয়া যেত। এখন অনেক সময় নদীতে পানি থাকে না, মাছও তেমন পাওয়া যায়না আগের মতো। তবে আনন্দ করছি এটাই ভালো লাগা।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. আমিমুল এহসান বলেন, ‘কৃষির জেলা নওগাঁয় ছোটবড় অসংখ্য নদ-নদী ও খাল-বিল রয়েছে। ছোট যমুনা নদী, পুনর্ভবা নদী, আত্রাই নদী, তুলশীগঙ্গা, শিব নদী, ফকিরনি নদী এবং নাগর নদী। এছাড়া বিল মুসছুর, গুটার বিল, দীঘলির বিল, জবই বিলসহ অসংখ্য ছোট বিলও আছে এখানে।’

তিনি বলেন, ‘মাছ ধরা গ্রামবাংলার প্রাচীন উৎসবের একটি অংশ। নতুন প্রজন্মের অনেকেই আবার এই উৎসবের আনন্দ উপভোগ করে থাকেন। নদীপাড়ে অনেক মানুষ মাছ ধরা উৎসব দেখতে ভিড় জমায়।’

এ বিভাগের আরো খবর