মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের চাতলাঘাটে মনু ব্রিজের কাছ থেকে চলছে অবাধে বালু উত্তোলন। এতে একদিকে যেমন রাস্তাঘাটের ক্ষতি হচ্ছে রাস্তাঘাট ও নদীর বাঁধ, অন্যদিকে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে ব্রিজে চলাচল। বালু তুলে নদী তীরবর্তী কৃষিখেত বিনষ্টেরও অভিযোগ উঠেছে বালুখেকোদের বিরুদ্ধে।
আইন অমান্য করে বালু উত্তোলনের পর তা অভারলোড করে বেপরোয়া গতিতে চলাচল করছে ১০ চাকার বালুভর্তি ড্রাম্পার ট্রাক। এতে জনজীবন হুমকির পাশাপাশি শহরে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট।
কমলগঞ্জের ধলাইপাড় এলাকার ধলাই নদী থেকেও একইভাবে বালু উত্তোলন হচ্ছে। ব্রিজের পাশ থেকে বালু উত্তোলন করায় বালুখেকোদের ইতোমধ্যে দেড়লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত।
সরেজমিনে দেখা যায়, মনু নদীর চাতলা ঘাট থেকে বালু উত্তোলন করে কমলগঞ্জের শমশেরনগর-চাতলাপুর সড়ক ব্যবহার করে দিনরাত অভারলোড করে বালু পরিবহন করছে ১০ চাকার ড্রাম্পার ট্রাক। চাতলাঘাট বালু মহাল ইজারা নিলেও চাতলাপুর মনু ব্রিজের এক কিলোমিটার নিচ থেকে বালু উত্তোলনের কথা। তবে দীর্ঘদিন ধরে বেপরোয়া ও যত্রতত্রভাবে বালু উত্তোলন করতে করতে তারা এগিয়ে এসেছে ব্রিজের কয়েকশ’ গজের মধ্যে। এতে চাতলা ব্রিজ মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
এছাড়া বিশাল এলাকা নিয়ে বালু উত্তোলন ও ১০ চাকার ড্রাম্পার ট্রাকে তা পরিবহনে নদীর বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সড়ক ও জনপথের রাস্তার বিভিন্ন স্থানে ইতোমধ্যে ফাটল দেখা দিয়েছে, কয়েক স্থানে দেবে গিয়েছে।
উত্তোলিত বালু স্তুপ করে রাখার পর তা গড়িয়ে পড়ছে স্থানীয় কৃষকদের আবাদি জমিতে। ফলে কৃষিজমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন বেশ কয়েকজন কৃষক।
তাদের অভিযোগ, ট্রাকের কারণে সড়কের ক্ষয়ক্ষতি বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগে লিখিতভাবে জানালেও তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. হেলাল মিয়াসহ কয়েকজন গ্রামবাসী বলেন, বালু উত্তোলনের কারণে আমরা ক্ষেত করতে পারি না। আমাদের কলা গাছ, আকাশি গাছ নষ্ট করে ফেলছে। অনেকবার কওয়ার পরেও তারা বেটাগিরি দেখায়।
তাদের দাবি, ব্রিজের নিচ থেকে এক কিলোমিটার দূর থেকে বালু তোলার কথা। এখন তারা ব্রিজের কাছাকাছি চলে এসেছে।
‘অফিসার বা কেউ আইলেই তারা টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করি দেয়। বালু ধুইয়া ধুইয়া আমাদের জমিনে পড়ে। ফলে কোনো খেতকৃষিও করতে পারি না।’
শমশেরনগর বণিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি আব্দুল হান্নান বলেন, ‘বালু বহনকারী ড্রাম্পার ট্রাক চলাচলের সময় ধুলোবালি উড়ে রাস্তার দুপাশের দোকানপাটে ও চোখে মুখে এসে পড়ে। এছাড়া নিয়মিত যানজটের সৃষ্টি করে এসব পরিবহন।’
সড়ক বিভাগ, মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কায়সার হামিদ বলেন, ‘বালুবাহী অভারলোডকৃত ট্রাকের কারণে রাস্তার ক্ষতি হওয়ায় আমরা ইতোপূর্বে তাদের লিখিতভাবে জানিয়েছি।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চাতলাপুর মনু নদীর বালু মহাল ইজারাদার মো. জুয়েল আহমদ বলেন, ‘আমার বালু উত্তোলনের কারণে কে খেত করতে পারছে না- এগুলো নিয়ে আপনাদের এত মাথাব্যাথা কেন? আপনি নিউজ করেন। অনেক নিউজ হয়েছে। নিউজ করে কোনোকিছু হবে না।’
কুলাউড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেহেদি হাসান বলেন, ‘ব্রিজের কাছাকাছি আসার কারণে অতি সম্প্রতি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে তাদের দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তারপরও বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।’
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘ট্রাকযোগে বালু অভারলোড নেয়ার কথা নয়। তবে বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন, ‘বিষয়টি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হবে।’