বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভুয়া এনআইডি তৈরি করে ৩০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ৬ এপ্রিল, ২০২৪ ২২:৪৫

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত জয়নাল প্রতিটি ঋণের আবেদনে তার এনআইডি ও একটি জমির দলিল ব্যবহার করেছেন। এনআইডিতে তার নাম পরিচয় ঠিক রেখে সিরিয়াল নম্বর পরিবর্তনের জন্য পল্লব দাসের সহায়তা নিতেন তিনি।’

একই নামে একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি করে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ৩০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার অভিযোগে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন চারজন।

তারা হলেন- ৪২ বছর বয়সী জয়নাল আবেদীন ওরফে ইদ্রিস, ৩৬ বছর বয়সী পল্লব দাস, ৩৮ বছর বয়সী রফিকুল ইসলাম খান ও ২৩ বছর বয়সী আলিফ হোসেন।

ডিবির তথ্যানুসারে, এদের মধ্যে পল্লব দাস রংপুর বিভাগীয় নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে আউটসোর্সিয়ের মাধ্যমে আইটি সেকশনে খণ্ডকালীন নিযুক্ত ছিলেন। আর জয়নাল আবেদীন তার মাধ্যমে নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিয়ে পরিবর্তন করিয়ে নিতেন।

সম্প্রতি জয়নাল আবেদীন নন ব্যাংকিং ফিন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি থেকে ৫০ লাখ টাকা ঋণ পান। ঋণপ্রাপ্তির কাগজপত্র মেঘনা ব্যাংকে জমা দিয়ে তার নামে প্রায় ৩ কোটি টাকার ঋণের আবেদন করেন। মেঘনা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের তার কাগজপত্র দেখে সন্দেহ হলে তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে পাঠায়।

এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে ডিবি রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার হুমায়ন কবীরের নেতৃত্বে একটি দল জয়নালের ঋণ জালিয়াতির তথ্য পায়। পরবর্তীতে শুক্রবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

শনিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার জয়নাল এ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক থেকে কয়েক কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। প্রতিটি ঋণের আবেদনে তিনি তার এনআইডি ও একটি জমির দলিল ব্যবহার করেছেন।

‘এনআইডিতে তার নাম পরিচয় ঠিক রেখে সিরিয়াল নম্বর পরিবর্তনের জন্য পল্লব দাসের সহায়তা নিতেন তিনি। পল্লব দাস রংপুর বিভাগীয় নির্বাচন কমিশনের আইটি সাইটটি দেখতেন। এ কারণে পল্লব দাস কমিশনের সার্ভারে ঢুকে তথ্য পরিবর্তন করতে পারতেন। সেই সুযোগটি জয়নাল কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে তার এনআইডি জমা দেন।

‘এর সঙ্গে জমির দলিল একটাই দেয়া হতো। ওই জমির দলিলের বিভিন্ন তথ্য পরিবর্তন করে জাল দলিল জমা দেয়া হতো। এভাবেই তিনি কয়েক কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন।’

তিনি জানান, জয়নালের রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি সাত তলা বাড়ি রয়েছে। এছাড়া ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় তিন-চারটি ফ্ল্যাটও কিনেছেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির ডিবি-প্রধান বলেন, ‘ব্যাংক থেকে ঋণ অনুমোদনের পেছনে হয়ত সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তারা জড়িত থাকতে পারেন। সে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। কয়টি ব্যাংক থেকে তিনি ঋণ নিয়েছেন এবং তার পেছনে আর কারা কারা জড়িত রয়েছেন- সে বিষয়ে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে নিশ্চিত হওয়া যাবে।’

হারুন অর রশীদ বলেন, ‘প্রতারক জয়নালের একসময় কিছুই ছিল না। তিনি ইমিটেশন পণ্যের দোকান করতেন, কিন্তু সেই ব্যবসায় লস করে তিনি ব্যবসা ছাড়েন। এরপর জড়িয়ে পড়েন প্রতারণায়। জয়নাল তার প্রতারণার জন্য একটি কোম্পানি খুলে সেখান থেকে আরও সাতটি কোম্পানির নামে কাগজপত্র তৈরি করে রেখেছিলেন। পরে সেগুলো দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের দিয়ে তিনি ঋণ নিতেন। আমরা তাকেসহ পল্লব দাসকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করব।

‘পল্লব দাস জয়নালের মতো আর কতজনকে সার্ভার ব্যবহারে এমন কার্যকর এনআইডি তৈরি করে দিয়েছেন। এ ছাড়া তারা আর কতটি ব্যাংক থেকে এমন ঋণ নিয়েছেন তা আমরা খতিয়ে দেখব। এই পল্লবের সঙ্গে যদি ইসির আরও কেউ জড়িত থাকে তাদেরও আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসব।’

ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘পল্লব প্রতি এনআইডি বাবদ জয়নালের কাছ থেকে ২-৩ লাখ করে টাকা নিতেন। তবে এই এনআইডি বানিয়ে দিয়ে তিনি কত টাকা নিয়েছেন এবং তিনি অর্থ-সম্পদ করেছেন কি না তা খতিয়ে দেখবে ডিবি।’

ডিবির তথ্য বলছে, জয়নালের কার্যকর ১০টি এনআইডি ছিল। এসব এনআইডি দিয়ে তিনি বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণের জন্য আবেদন করতেন। এনআইডির নাম ও ঠিকানা ঠিক থাকত, শুধু সেটির নম্বর পরিবর্তন করে আরেকটি তৈরি করতেন। পল্লব দাসের কাছে নির্বাচন কমিশনের ব্যবহৃত সার্ভারের পাসওয়ার্ড থাকত। এই সুবাদে তিনি এসব ভুয়া তবে কার্যকর এনআইডি করতেন।

এ বিভাগের আরো খবর