বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বরিশালে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় কবি জীবনানন্দ দাশকে স্মরণ

  • বরিশাল ব্যুরো   
  • ২২ অক্টোবর, ২০২৫ ২১:০৮

বরিশাল শহরকে বলা হয় রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের স্বপ্নের শহর। এই আধা গ্রামীণ, আধা শহুরে পরিবেশে কবির শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের অনেকটা সময় কেটেছে। ১৯৪৬ সালে কলকাতা যাওয়ার আগে বরিশালে তার স্থায়ী ঠিকানা ছিল বগুড়া রোডের সর্বানন্দ ভবন, যা তার স্বপ্নের বাড়ি হিসেবে পরিচিত।

বগুড়া সড়ক ধরে শীতলাখোলা পেরিয়ে ব্রজমোহন কলেজ পর্যন্ত যে পথ, সেই সড়ক ধরেই ছিল জীবনানন্দের পৈতৃক নিবাস। বাড়ির নাম এসেছে তার ঠাকুরদা সর্বানন্দ দাশের নামানুসারে। সর্বানন্দ দাশ বরিশাল কালেক্টরেটের কর্মচারী ছিলেন। বর্তমানে সেই বগুড়া সড়ক কাগজে জীবনানন্দ সড়ক নামে পরিচিত।

জীবনানন্দ দাশের স্বপ্নের বাড়ি ছিল গাছগাছালিতে ঢাকা, ফলদ বৃক্ষের সমাহারে ঘেরা। বাড়ির পেছনে ছিল মাঝারি পুকুর এবং নারকেল, সুপারি, আম, কাঁঠাল, জাম ও আনারসের বাগান। তবে বর্তমানে সর্বানন্দ ভবন তিন ভাগে বিভক্ত। বাম পাশে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের গভীর নলকূপ, ডান দিকে দপ্তরের গুদাম ও কলোনি, আর মাঝখানে একটি আবাসিক ভবন। মূল বাড়ির স্থানে দাঁড়িয়ে আছে ধানসিড়ি’নামের একটি বাড়ি। জীবনানন্দের ছোট্ট সমাধিক্ষেত্রও ছিল এই বাড়ির একাংশে, যেখানে একসময় ফুলের বাগান ও স্মৃতির মাঠ ছিল। কবি জীবদ্দশায় এই বাড়িতেই কাটাতেন নিভৃত সময়ে, তার ঘরে ছিল শোয়ার ঘর, গোসলখানা এবং বারান্দা। বড় বারান্দায় কবির হাঁটাচলা ও ভাবনার সময় যাপন হতো।

১৯৪৬ সালের জুলাইয়ে বিএম কলেজ থেকে ছুটি নিয়ে জীবনানন্দ কলকাতায় যান এবং এরপর আর দেশে ফেরেননি। দেশভাগের পর তার পরিবারও কলকাতায় চলে যায়। ১৯৫৫ সালে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিলের মাধ্যমে মূল বাড়ি বিক্রি হয়। পরবর্তীতে এখানে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের কলোনি, গুদাম ও পানির পাম্প বসানো হয়।

বরিশালের সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে কবির বসতবাড়ি সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগ নিয়ে চলেছেন। আন্দোলন, মানববন্ধন ও সভা-সমাবেশের পর কিছুটা উদ্যোগে কবির নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জীবনানন্দ দাশ পাঠাগার ও মিলনায়তন। তবে পাঠাগার ও মিলনায়তন বর্তমানে তালাবদ্ধ এবং ধুলো জমে আছে। কবি জীবনানন্দ দাশ বরিশাল ব্রজমোহন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, বিএম কলেজ থেকে আইএ, এবং কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্সসহ বিএ ও এমএ পাস করেছেন। আইন কলেজে ভর্তি হলেও শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা দেননি। ১৯৫৪ সালে কলকাতায় এক ট্রাম দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর ২২ অক্টোবর তিনি প্রয়াণ বরণ করেন। জীবনানন্দ দাশের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- ঝরাপালক, ধূসর পাণ্ডুলিপি, বনলতা সেন, জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা, রূপসী বাংলা। তার অধিকাংশ কবিতার প্রেক্ষাপট বরিশাল।

বুধবার ছিল রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের ৭১তম মৃত্যুবার্ষিকী। এই উপলক্ষে বরিশালে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় কবিকে স্মরণ করছেন। বরিশালের জীবনানন্দ দাশ স্মৃতি মিলনায়তনে কবির ম্যুরালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন কবিপ্রেমীরা। সকাল সাড়ে ৯টায় কবির পৈত্রিক ভিটায় নির্মিত স্মৃতি মিলনায়তনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর বরিশাল কবিতা পরিষদ ও প্রগতী লেখক সংঘের উদ্যোগে কবি আড্ডা ও সংগীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। আগুনমুখা প্রকাশনীর আয়োজনে দিনব্যাপী কবি আড্ডা ও ভ্রমণের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া উত্তরণ, সংস্কৃতি পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন দিনভর নানা কর্মসূচি পরিচালনা করেছে।

আয়োজকদের মতে, কবি জীবনানন্দ দাশের চিন্তা ও চেতনা নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এ আয়োজন করা হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর