গাজীপুরের কাপাসিয়ায় প্রবাসীর স্ত্রীকে হত্যার ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
উপজেলার সিংহশ্রী ইউনিয়নের পূর্ব ভিটিপাড়া গ্রামে নিজ ঘরের ভেতর থেকে মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী শাহনাজ বেগম শিমুর মরদেহ উদ্ধার করে পিবিআই।
পিবিআই গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শুক্রবার দুপুরে এ তথ্য জানিয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঋণগ্রস্ত ভাই ঋণের টাকা পরিশোধ করতে আপন বোনের ঘরে বন্ধুকে নিয়ে চুরি করার পরিকল্পনা করেন। ওই সময় বোন চিৎকার করলে তার হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যা করে টাকা, মোবাইল ও স্বর্ণালংকার লুট করে নেন।
এ ঘটনায় নিহত শিমুর বাবা সিরাজ উদ্দিন ব্যাপারী কাপাসিয়া থানায় একটি মামলা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিমুর আপন ছোট ভাই উপজেলার কুলগঙ্গা গ্রামের কামরুজ্জামান রুবেল (৩৬) ও শেরপুর জেলার শ্রীবরদী থানার মামদাবাড়ি গ্রামের মিনাল ওরফে মিষ্টারকে (২১) গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই।
পিবিআই গাজীপুরের উপপরিদর্শক ও তদন্ত কর্মকর্তা সালেহ্ ইমরান বলেন, ‘মরদেহ উদ্ধারের পরপরই কাপাসিয়া থানা পুলিশের পাশাপাশি গাজীপুর পিবিআইয়ের একাধিক টিম মামলাটির রহস্য উদঘাটনে ছায়াতদন্তে নামে। গোয়েন্দা তথ্য ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আসামি কামরুজ্জামান রুবেলকে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে গাজীপুর মহানগরের গাছা থানা এলাকা থেকে ও পরে তার দেয়া তথ্য মতে একই দিন মিনাল ওরফে মিষ্টারকে ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে তিনি আরও জানান, নিহত শিমুর আপন ছোট ভাই রুবেল গাজীপুরে একটি আবাসিক হোটেলে চাকরি করতেন। পাঁচ মাস আগে রুবেল ওই হোটেলের চাকরি ছেড়ে দিলে আর্থিক সংকটে পড়ে অনেকের কাছ থেকে টাকা ধার করেন। ঋণে জর্জরিত রুবেল ঋণের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে বোন শিমুর বাসায় চুরির পরিকল্পনা করেন এবং দুই দিন আগে অপর আসামি মিনাল ওরফে মিষ্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ঘটনার দিন বিকেলে মিস্টার জয়দেবপুর রেল স্টেশনে আসেন।
ওই সময় রুবেল ও মিনাল একটি ব্যাগের মধ্যে একটি সুইচ গিয়ার চাকু, প্লাস, গামছা, কেচি নিয়ে ট্রেনে করে পাশের এলাকায় শ্রীপুর স্টেশনে নামেন। সেখান থেকে অটোরিকশা ভাড়া করে বরমী পুরাতন বাস স্ট্যান্ড এলাকায় যান। সেখানে কিছু সময় অপেক্ষা করে তারা অটোরিকশা দিয়ে রাত আটটার দিকে বরামা ব্রিজ এলাকায় যান। বরামা ব্রিজ পাড় হয়ে পায়ে হেঁটে তারা শাহনাজ আক্তার শিমুর বাড়ির সামনে আখ ক্ষেতে লুকান। রুবেল ও মিস্টার রাত ১২টার দিকে শিমুর বাড়ির সীমানা প্রাচীরের ওপর দিয়ে বাসার ছাদে ওঠেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছাদ থেকে রান্নাঘরের সিমেন্টের টিন খুলে সেখানে প্রবেশের চেষ্টা করেন দুজন। রান্নাঘর থেকে দরজা খুলে বাইরে এসে বাড়ির পেছনের খোলা জানালায় বাঁশের লাঠি দিয়ে ভেতরের সিটকিনি খুলে ঘরের ভেতরে ঢোকেন তারা। এ সময় তাদের সাড়াশব্দ পেয়ে ঘুম ভাঙলে শিমু চিৎকার শুরু করলে মিনাল সুইচ গিয়ার দেখিয়ে ভয় দেখান, কিন্তু শিমু চিৎকার না থামালে গামছা দিয়ে শিমুর মুখ চেপে ধরেন এবং রুবেল শিমুর হাত রশি দিয়ে বেঁধে ফেলেন।
ওই সময় রুবেলের দুই হাতে শিমুর হাতের নখের আঁচড় লাগে। রুবেলকে যাতে চিনতে না পারেন, সে জন্য শিমুর চোখ, মুখ, গামছা দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। শিমুর সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু করলে মিষ্টার ওই নারীর মুখে আঘাত করেন এবং শিমুর বুকের ওপর বসে গলায় চেপে ধরেন। এরপর রুবেল টেবিলের ড্রয়ার থেকে চাবি নিয়ে আলমারি খুলে স্বর্ণালংকার ও তিন হাজার টাকা লুট করেন। শিমুর মোবাইল নিয়ে রুবেল ও মিষ্টার শিমুর হাত ও পা বেঁধে বাড়ির পকেটগেট দিয়ে বের হয়ে চলে যান।
পরদিন সকালে রুবেল চাকু, প্লাস ও মোবাইল সেট ভেঙে ঝাজর এলাকায় ব্রিজের নিচে খালের পানিতে ফেলে দেন এবং চুরি করা স্বর্ণালংকার দেড় লাখ টাকা বিক্রি করেন।
পিবিআই জানায়, রুবেলকে গ্রেপ্তারের পর স্বর্ণ বিক্রির ৫৭ হাজার টাকা উদ্ধার ও তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী গাজীপুর মহানগরের ঝাজর কবরস্থান ব্রিজের নিচে খাল থেকে প্লাস, সুইচ গিয়ার চাকু ও চুরি করা মোবাইল সেটের খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করা হয়।
পিবিআই গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, ‘নিহতের ভাই রুবেল ও মিস্টার স্বেচ্ছায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। স্বর্ণ বিক্রির অবশিষ্ট টাকা ও স্বর্ণ উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত।’