অন্য সময়ে গ্রামাঞ্চলে বেশি লোডশেডিং থাকলেও সিলেটে এবার বিদ্যুৎ নিয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন শহরের বাসিন্দারা।
সিলেট নগর এলাকায় কয়েক দিন ধরে চাহিদার অর্ধেকের চেয়ে কম বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে, যে কারণে দিনের বেশির ভাগ সময় ভোগ করতে হচ্ছে লোডশেডিংয়ের যাতনা। দিনে-রাতে বিদ্যুৎহীনতার প্রভাব পড়েছে ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসায়।
নগরে বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার এ চক্রের মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম লোডশেডিং হচ্ছে পল্লি অঞ্চলে।
নগর ও গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহের তুলনামূলক চিত্র
সিলেট নগরসহ শহরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।
সিলেটে পিডিবির গ্রাহক সাড়ে চার লাখ, যার মধ্যে নগরেই আছেন প্রায় সোয়া দুই লাখ।
পিডিবির সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেটে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৪৪ মেগাওয়াট, যার বিপরীতে সরবরাহ হয় ৭০ মেগাওয়াট।
আগের দিন বুধবার পিডিবির হিসাব অনুযায়ী নগরে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১২০ থেকে ১৩০ মেগাওয়াট। আর সরবরাহ ছিল ৬৬ মেগাওয়াট। তারও আগে মঙ্গলবার ১৪১ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় ৫৬ মেগাওয়াট।
শহর এলাকায় চাহিদার অর্ধেক সরবরাহ না মিললেও বৃহস্পতিবার গ্রামাঞ্চলের চিত্র তুলনামূলক ভালো ছিল।
গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।
সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. আখতারুজ্জামান লস্কর জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে তার আওতাধীন এলাকায় চাহিদা ছিল ৬৪ মেগাওয়াট, যার বিপরীতে বরাদ্দ মিলেছে ৫৩ মেগাওয়াট।
সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর জিএম সঞ্জিব কুমার রায় জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে ২৭ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ হয় ২৩ মেগাওয়াট।
পল্লী বিদ্যুতে চাহিদা ও জোগানের তেমন পার্থক্য না থাকলেও ভিন্ন সমস্যার কথা জানিয়েছেন এক গ্রাহক।
জেলার বিশ্বনাথের রামপাশা এলাকার গ্রাহক দীপক দেব বলেন, ‘বৃষ্টিতে একটু বাতাস শুরু হলেই বিদ্যুৎ চলে যায়। এরপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকতে হয়। কখনও সারা রাত বিদ্যুৎ থাকে না।’
শহরে লোডশেডিং নিয়ে যা বলছেন গ্রাহকরা
চলতি মাসের শুরু থেকেই লোডশেডিং বেড়েছে জানিয়ে একাধিক গ্রাহক নিউজবাংলাকে বলেন, দিন ও রাতে আট থেকে ১০ বার বিদ্যুৎহীন থাকতে হচ্ছে নগরবাসীকে। রমজানের মধ্যে লোডশেডিং হচ্ছে সেহরি ও ইফতারের সময়ে।
নগরের জিন্দাবাজার এলাকার ব্লু ওয়াটার শপিং সিটির ব্যবস্থাপক মলয় দত্ত মিঠু বলেন, ‘বছরের এ সময়টাতে একটু ভালো ব্যবসা হয়। অথচ এবার লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যবসার অবস্থা খারাপ। দিনের বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না।
‘রাতের অবস্থা তো আরও করুণ। জেনারেটর দিয়ে মার্কেটের সব এসি-লিফট চালানো সম্ভব হয় না। এতে ক্রেতারাও দুর্ভোগে পড়ছেন।’
সেহরি ও ইফতারের সময় লোডশেডিং হচ্ছে জানিয়ে নগরের যতরপুর এলাকার গৃহিণী রোখসানা খানম বলেন, ‘বিদ্যুতের কারণে তো রান্নাবান্না করারই কোনো উপায় নেই। একে তো গরম, তার ওপর সারা দিনই বিদ্যুৎ থাকে না।
‘এমনকি সেহরি বা ইফতার শুরু হলেও বিদ্যুৎ চলে যায়। একেবারে দুর্বিষহ অবস্থা। গরম আরও বাড়লে যে কী অবস্থা হবে!’
গ্রাহকদের ক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে ফেসবুকে পোস্ট পিডিবির
সিলেটে লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় গ্রাহকদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ।
বিদ্যুতের দাবিতে মঙ্গলবার রাতে সড়ক অবরোধ করেন ওসমানী নগরের গ্রাহকরা। এর আগের রাতে দক্ষিণ সুরমায় পিডিবির অফিসে গিয়ে কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিতের ঘটনাও ঘটে।
এমন পরিস্থিতিতে পিডিবির সিলেট বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের পক্ষ থেকে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা জানানো হয়।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির ভাষ্য, হঠাৎ গরম বেড়ে যাওয়া এবং ঈদকে সামনে রেখে শপিং মলে আলোকসজ্জার কারণে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় শহরাঞ্চলে বিদ্যুতের ঘাটতি বাড়ছে, যার ফলে লোডশেডিংও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পিডিবির বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১-এর ফেসবুক পেজ থেকে বৃহস্পতিবার দেয়া পোস্টে বলা হয়, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হওয়ায় লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ক্রমাগত বাড়ছে। এতে বিতরণ ব্যবস্থার কোনো দায় নেই। বিতরণ অঞ্চল, সিলেটের আওতাধীন সকল দপ্তর শুধু বিদ্যুৎ বিতরণ করে।
‘জেনারেশন (উৎপাদন) না থাকলে বিদ্যুতের লোডশেডিং থাকবে। গ্রাহকদের প্রতি অনুরোধ, বাস্তব পরিস্থিতি অনুধাবন করুন। বিদ্যুৎ বিতরণকারী দপ্তর ও এর বিদ্যুৎ কর্মীদের সাথে বাজে আচরণ এবং অযথা বাজে ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।’
এর আগে বুধবার একই পেজ থেকে দেয়া পোস্টে উল্লেখ করা হয়, ‘বরাদ্দের তুলনায় বিদ্যুৎ প্রাপ্তি কম হওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রচণ্ডভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। সম্মানিত গ্রাহকগণকে ধৈর্য ধারণের অনুরোধ করছি।’
গরমের সঙ্গে লোডশেডিং বাড়ার শঙ্কা
বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে পিডিবি সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল কাদির বলেন, ‘ঈদের মৌসুম হওয়ায় বিপণি বিতানসহ অনেক স্থানে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। ফলে শহর অঞ্চলে এখন বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে। এ ছাড়া গরমও অনেক বেড়েছে, কিন্তু চাহিদা বাড়লেও উৎপাদন কম হচ্ছে। তাই সরবরাহ কমে গেছে।
‘এ কারণে লোডশেডিং বেড়ে গেছে। গরম আরও বাড়লে লোডশেডিং আরও বাড়তে পারে।’