বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) রাজনৈতিক সংগঠন ও এর কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে হাইকোর্ট।
এ সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোর্টের আদেশ শিরোধার্য। কোর্ট যেটা বলবে, সেটি আমাদের মানতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সেটি করতে গেলে আমাকে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই করতে হবে। কোর্টের অবমাননা আমরা করতে পারব না।’
নিজ কার্যালয়ে সোমবার দুপুরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে উপাচার্য উল্লিখিত কথা বলেন।
হাইকোর্টের রায়ের পর এখন কী প্রক্রিয়ায় বুয়েট এগোবে জানতে চাইলে বুয়েট উপাচার্য সত্য প্রসাদ বলেন, ‘এটি নিয়ে আমরা আমাদের উকিলের সাথে আলোচনা করব। কোর্টের নিয়ম অনুযায়ী তো আমাদের চলতে হবে। আমরা তো এই কোর্টকে ভায়োলেট করতে পারব না।
‘অ্যাজ পার ল’ আমাদের আগাতে হবে। আর কোর্ট কী রায় দিয়েছে, সেটি না দেখে আমি এখন বলতে পারছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমে এটি আমরা দেখব। এরপর আমাদের লিগ্যাল অ্যাডভাইজারের সাথে কথা বলব। তার উপদেশ নিয়েই আমরা এগিয়ে যাব, যেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে ব্যাঘাত না ঘটে। আর রাষ্ট্রীয় মর্যাদাও যেন ক্ষুণ্ন না হয়। দুই দিকেই দেখতে হবে।’
এর আগে এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার বুয়েটে রাজনৈতিক সংগঠন ও এর কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে।
বুয়েটে সব রাজনৈতিক সংগঠন ও এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার বিজ্ঞপ্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রিটটি করেছিলেন।
‘ইমতিয়াজ বহিষ্কার হতে পারতো, কিন্তু আমরা করিনি’
বুয়েট শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগ সদস্য ইমতিয়াজ রাব্বির আবাসিক সিট বাতিলের সিদ্ধান্তটি নিয়ম মেনে করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, রাজনীতি মুক্ত থাকার যে সিদ্ধান্তটা ২০১৯ সালে নেয়া হয়েছিল সে সিদ্ধান্তের একটু রুল অনুযায়ী কেউ রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলে তাকে বহিষ্কার করা হবে। সে অনুযায়ী কিন্তু ইমতিয়াজ রাব্বির বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা সেটি করিনি। আমরা বলেছি, সে পুরোপুরি ইনভল্ভ কি না সেটি নিয়ে তদন্ত হবে। তারপর সিদ্ধান্ত।
উপাচার্য বলেন, ইতোপূর্বে সে নিজেকে ইনভলভ বলেছিল। কমিটিতে (ছাত্রলীগের কমিটি) তার নাম আসছে। তখন তাকে বলা হয়েছে, তুমি নামটা উইথড্রো কর। সে পদত্যাগ পত্র দিয়েছে কিন্তু সেটি এখনো ফাইনাল হয়নি। সে কারণে আমরা তাকে হল এবং সিট বাতিল করেছি। অ্যাকোরিডিং টু রুলস, সে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হতে পারতো। কিন্তু সেটা আমরা করিনি। ২০১৯ সালের যে রুল সেটা আমাকে ফলো করতেই হবে। এটা দেখে দেখেই আমি ডিসিপ্লিনারি একশন নিব। হাইকোর্টে গেলে আমি এটিই দেখাবো।
ছাত্র রাজনীতি চালু হলে বিশ্ববিদ্যালয় বা রাজনৈতিক পরিবেশ ঠিক থাকবে কিনা সেটি জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, এই পরিবেশ ঠিক রাখতে গেলে ছাত্র, শিক্ষক এবং আমরা যারা প্রশাসন আছি সবাই মিলে এটিকে ট্রান্সফরমেশন করতে হবে। কীভাবে এটি করা যায় সেটি আলোচনার মাধ্যমে বের করতে হবে।
তিনি বলেন, আগে আমাদের ছিলো ইউকসু। সেটির কার্যক্রম এখন নেই। এখন শিক্ষার্থীরা কী চায়, শিক্ষক কী চায় সবার মতামত নিয়ে কিছু একটা করতে হবে। আমি একা কিছু করতে চাইলে সেটা কিন্তু ইমপ্লিমেন্ট করা যাবে না। যেটাই করি না কেন সেটি আমার অরডিনেন্সে ইনক্লুড হতে হবে। আর এটার জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় চলবে অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী। এই অর্ডিন্যান্সের প্রতিটি লাইন বাই লাইন আমাকে মেনে চলতে হবে।