বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঢাবিতে চান্স পেয়েও অর্থাভাবে ভর্তি অনিশ্চয়তায় সাইফুল

  • প্রতিনিধি, নেত্রকোনা   
  • ৩০ মার্চ, ২০২৪ ১৭:০৭

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতি বছর ‘গ’ ইউনিটে যে ৪ হাজার ৫৮২ জন মেধাবী শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন, তাদের মধ্যে ৭২তম হয়েছেন সাইফুল ইসলাম। অদম্য মেধাবী এ শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা অর্জনের লড়াইয়ে বিত্তবান মহৎ ব্যক্তি ও দাতব্য সংস্থা শরিক হলে তার পথটা সহজ হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকার ৭২তম অবস্থানে স্থান পেয়েও অর্থের অভাবে ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন মেধাবী শিক্ষার্থী মো. সাইফুল ইসলাম।

২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষায় সাধুপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ এবং ২০২৩ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় পূর্বধলা সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন নেত্রকোনার সাইফুল ইসলাম।

সাইফুল ইসলাম পূর্ব ভিকুনীয়া গ্রামের মোছা. রিনা বেগমের ছেলে। বাবা পূর্বধলা উপজেলার নিজ-হোগলা গ্রামের মো. জামাল উদ্দিনের সঙ্গে অনেক আগেই ডিভোর্স হয়েছে তার মায়ের।

বর্তমানে মায়ের সঙ্গে নানার বাড়িতে বসবাস করেন সাইফুল। সংসারের ব্যয়ভার মিটিয়ে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে ছেলের পড়ালেখার খরচ বহন করার সামর্থ্য নেই মা মোছা. রিনা বেগমের। প্রাথমিক অবস্থায় ভর্তির জন্য যে টাকা লাগবে সেটাই এখনও জোগাড় করতে পারেননি তিনি।

রিনা বেগম বলেন, ‘এই ছেলে ছাড়া আমার আর কিছু নেই। স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স হবার পর থেকে ছেলেকে নিয়ে বৃদ্ধ বাবার অভাব-অনটনের সংসারে বসবাস করছি। অভাবের কারণে ছেলেকে তেমন কোনো প্রাইভেট কোচিংয়ে পড়াশোনা করাতে পারিনি। কোনোমতে সংসার চলে। সাইফুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) সুযোগ পেয়েছে; এখন খরচ তো আরও বেড়ে গেল!’

দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ‘আমার বয়স যখন দুই বছর পাঁচ মাস, তখন আমার বাবা-মায়ের ডিভোর্স হয়ে যায়। তখন থেকে মায়ের সঙ্গে নানার বাড়িতে থাকি। আমার মা তখন থেকে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যেভাবেই হোক আমাকে পড়াশোনা করিয়ে মানুষের মতো মানুষ করবেন।’

তিনি বলেন, ‘নানার আর্থিক অবস্থা খুবই দুর্বল ছিল। আমাকে পড়াশোনা করানোর জন্য তাই মাকে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হয়েছে। তবে আমার ভাগ্য ভালো যে, আমি আমার নানা- নানু ও মামাদের পাশাপাশি আশপাশে অনেক ভালো মানুষ পেয়েছি। যারা আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন।

‘আমার যখন টাকার প্রয়োজন হয়েছে অথবা কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি, তারা সমাধান করেছেন। আমার শিক্ষকরা আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। আমার এলাকার বড় ভাই ঢাবি ছাত্র শ্যামল চন্দ্র এবং আমার আরেক বড় ভাই জসিম শেখ আমাকে বিশেষ সহযোগিতা করেছেরন।

‘দিলরুবা হাবিব শিক্ষা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ওসমান গনি সুমন স্যার আমার এলাকার একজন সম্মানিত ব্যক্তি। সাংবাদিক মোস্তাক আহমেদ খান সম্পর্কে আমার নানা হন। উনিও আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। এভাবেই আমি পড়াশোনা চালিয়ে গেছি এবং পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করে নিজেও টাকা উপার্জন করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি স্বপ্ন দেখতাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করব। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।

‘ঢাবিতে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি, কিন্তু মায়ের পক্ষে পড়াশোনার খরচ জোগাড় করা অসম্ভব। চান্স পেয়ে খুশি হয়েছিলাম, কিন্তু ভর্তি ও পড়াশোনার টাকার চিন্তায় সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার স্বপ্ন মনে হয় আর পূরণ হবে না।’

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পূর্বধলা ছাত্রকল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রুকন উদ্দিন রানা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পূর্বধলা ছাত্রকল্যাণ পরিষদ মেধাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা ও সহায়তা প্রদান করে। সাইফুল ইসলামকেও সংগঠনের পক্ষ থেকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করা হবে।’

পূর্বধলা সরকারি কলেজের হিসাববিজ্ঞানের প্রভাষক আবু হানিফ তালুকদার রাসেল বলেন, ‘সাইফুল অসম্ভব মেধাবী। আমরা যতটুকু পেরেছি তাকে সহযোগিতা করেছি। পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে সে হয়তো মেধা তালিকায় প্রথম দশের মধ্যে স্থান পায়নি, তবে সে যে মেধাবী, তার প্রমাণ সে দিয়েছে। সমাজের বিত্তবান মহৎ ব্যক্তি, সরকারি বা বেসরকারি দাতব্য সংস্থা পাশে দাঁড়ালে সাইফুলের স্বপ্ন পূরণ হতে পারে।’

তিনি বলেন, “সাইফুলের সঙ্গে ০১৯৯০-৬২৬১৭০ নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতি বছর ‘গ’ ইউনিটে যে ৪ হাজার ৫৮২জন মেধাবী শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেয়েছে, তাদের মধ্যে ৭২তম হয়েছে সে। অদম্য মেধাবী সাইফুলের উচ্চশিক্ষা অর্জনের লড়াইয়ে বিত্তবান মহৎ ব্যক্তি ও দাতব্য সংস্থা শরিক হলে তার লড়াইটা সহজ হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর