বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না

  •    
  • ১৭ মার্চ, ২০২৪ ১৮:৪৬

শুক্রবার রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে আগের অবস্থান থেকে অন্তত ৫০ মাইল সরিয়ে নেয়া হয়। ওই সময় জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলের গদবজিরান শহরের কাছাকাছি অবস্থান করছিল।

সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ আবদুল্লাহর ২৩ নাবিকের সঙ্গে দুদিন ধরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। তাদের পরিবার বা জাহাজ মালিক কারও সঙ্গেই যোগাযোগ করেননি নাবিকরা। এ ছাড়া জলদস্যুরা কোনোও মুক্তিপণও দাবি করেনি।

আবদুল্লাহর মালিকপক্ষ কেএসআরএম সূত্রে রোববার এ তথ্য জানা গেছে।

শুক্রবার রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে আগের অবস্থান থেকে অন্তত ৫০ মাইল সরিয়ে নেয়া হয়। ওই সময় জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলের গদবজিরান শহরের কাছাকাছি অবস্থান করছিল।

সেদিন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএমওএ) জানিয়েছিল, জাহাজটি বৃহস্পতিবার যেখানে নোঙ্গর ফেলেছিল, শুক্রবার সেখান থেকে ৪৫ থেকে ৫০ মাইল উত্তরে সরে গেছে। সেটি সোমালিয়ার গদবজিরান উপকূল থেকে প্রায় ৪ মাইল দূরে নোঙ্গর করা হয়। এরপর শুক্রবার রাতের পর থেকে তাদের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ নেই।

সূত্র বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর দুটি যুদ্ধ জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে। জাহাজ দুটি জিম্মি হওয়া জাহাজটির কয়েক মাইলের মধ্যে অবস্থান করছে।

শিপিং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জিম্মি হওয়া নাবিকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ওই দুটি জাহাজ থেকে কোনো অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। কমান্ডো অপারেশন চালানোর মতো অবস্থাও নেই বলে মনে করছেন তারা।

এদিকে বীমা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে জাহাজটির মালিকপক্ষ এবং তারা পুরোনো অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মধ্যস্থতাকারী খুঁজছে, যাতে দ্রুত জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের জিম্মি ঘটনায় মুক্তিপণের বিষয় তিন ধাপে আলোচনা হয়। জাহাজের মালিকপক্ষ যোগাযোগ করে বীমা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। বীমা প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারী ঠিক করে। তারা যোগাযোগ করে জলদস্যুর প্রতিনিধির সঙ্গে। তিন পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করে।

১৪ বছর আগে এ প্রক্রিয়াতেই ‘এমভি জাহান মণি’ জাহাজের নাবিকরা মুক্ত হয়েছিলেন।

কেএসআরএমের মুখপাত্র ও মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘মূলত শুক্রবার রাতের পর থেকে নাবিকদের সঙ্গে আমাদের আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। হয়তো জলদস্যুরা সেখানে নিরাপদ মনে করছে। ধারণা করছি, জাহাজ মালিক পক্ষকে চাপে ফেলতেই তারা যোগাযোগ করতে দিচ্ছে না। এটা তাদের কৌশলও হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘তবে জলদস্যুদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। নানা উপায়ে ও কৌশলে সে চেষ্টা চলছে। এখনো পর্যন্ত কেউ মুক্তিপণ চায়নি।’

এদিকে জাহাজের ফোন না আসায় জিম্মি হওয়া নাবিকদের স্বজনদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। স্বজনরা কবির গ্রুপের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। কবির গ্রুপের কর্মকর্তারা তাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং নাবিকদের মুক্তির আশ্বাস দিচ্ছেন।

গত ১২ মার্চ বাংলাদেশ সময় বেলা ১২টার দিকে ভারত মহাসাগরে ২৩ নাবিকসহ বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজটি সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। জলদস্যুরা জাহাজের নাবিকদের জিম্মি করে।

জাহাজে থাকা নাবিকেরা হলেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্ম শ্মসুদ্দিন, মো . আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুর উদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।জিম্মি নাবিকদের মধ্যে ১১ জন চট্টগ্রামের ও ২ জন নোয়াখালীর। বাকি ১০ জন যথাক্রমে ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, নওগাঁ, খুলনা, নেত্রকোনা, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, বরিশাল জেলার।

সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে জাহাজটি সংযুক্ত আরব-আমিরাতের দুবাইয়ের আল-হামরিয়া বন্দরে যাচ্ছিল। ১৯ মার্চ গ্রিনিচ সময় রাত ৮টায় জাহাজটি সেই গন্তব্যে পৌঁছানোর কথা ছিল।

কেএসআরএম গ্রুপের মোট ২৩টি জাহাজ আছে, যেগুলো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রুটে চলাচল করছে। ‘গোল্ডেন হক’ নামে পরিচিত ‘এমভি আবদুল্লাহ’ গত বছর কেএসআরএম গ্রুপের মালিকানায় আসে।

এর আগে ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর ভারতের উপকূলে আরব সাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল একই প্রতিষ্ঠানের আরেকটি জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’। ওই জাহাজের ২৫ বাংলাদেশি নাবিকের পাশাপাশি এক ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জনকে ১০০ দিন জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। সরকারি উদ্যোগসহ নানা প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ জিম্মিদের মুক্তি দেয়া হয়। ১৫ মার্চ তারা বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

এ বিভাগের আরো খবর