বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঠাকুরগাঁওয়ে অবৈধভাবে সরকারি গাছ কর্তন, নারীদের বাধায় জব্দ

বড়গাঁও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফয়জুর রহমানের দাবি, শুক্রবার ঠিকাদার রাস্তার বক্স কাটিং করার সময় ভেকু মেশিন ব্যবহার করার ফলে গাছগুলো উপড়ে গেছে। গাছ যাতে লুট না হয় এর জন্য ইউনিয়ন পরিষদে নেয়া হচ্ছিল।

ঠাকুরগাঁওয়ে অবৈধভাবে সরকারি গাছ কেটে নেয়ার সময় স্থানীয় নারীদের বাধার মুখে পড়ে একটি অসাধু চক্র। পরে ওই নারীরা সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনও) জানালে তিনি গাছগুলো জব্দ করেন।

সদর উপজেলার বরগাঁও ইউনিয়নে শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

ইউএনও জানান, কার নির্দেশে এবং কী উদ্দেশ্যে গাছ কাটা হয়েছে তাৎক্ষণিক তা জানা যায়নি। পরদিন শনিবার দুপুরের দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন তিনি।

তবে সেখানে কর্মরত গাছ কাটা শ্রমিকরা ইউএনওকে জানান, তারা স্থানীয় চেয়ারম্যানের নির্দেশে গাছ কেটেছেন।

এ সময় গণমাধ্যম কর্মীদের শ্রমিকরা জানান, প্রায় ১০০ গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। গাছ কাটার মজুরি চেয়ারম্যান দেবেন বলেও জানান তারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সড়কের পাশে সরকারি জমিতে চুক্তি ভিত্তিক গাছ রোপণের পর তা ৩০ বছর ধরে পরিচর্যা করে আসছেন স্থানীয় কয়েকজন উপকারভোগী নারী। ভুল্লি বড়গাঁও থেকে ফারাবাড়ি প্রায় ৮ কিলোমিটার এ সড়কে ১৯৯২ সালে গাছ লাগানো প্রকল্পের আওতায় প্রথম পক্ষ ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা পরিষদ, দ্বিতীয় পক্ষ অরগানাইজেশন ফর রুরাল ডেভলপমেন্ট (ওআরডি) ও তৃতীয় পক্ষ বনলতা মহিলা উন্নয়ন দলের স্থানীয় ১০ জন নারীর সঙ্গে চুক্তি নামা হয়।

এ চুক্তিনামায় প্রত্যেক নারী ১৫০ গাছ রোপণ করলে মোট ১ হাজার ৫০০ গাছ রোপণ করা হয়। যা ২০২৬ সাল পর্যন্ত কার্যকর মেয়াদ রয়েছে। এ সময়ের পর গাছগুলো সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কেটে মুনাফার একটি অংশ পাবেন সেসব নারীরা।

সরকারি কোনো নিয়ম নীতি না মেনে শুক্রবার সড়কের প্রায় দুই শতাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে বলেছে নারীদের অভিযোগ।

উপকারভোগী এসব নারীরা জানান, তাদের কাউকে কিছু না জানিয়ে গাছগুলো কাটা হয়েছে। তারা বাধা দিতে গেলে কারো কথা শোনা হয়নি। পরে ইউএনওকে মুঠোফোনে জানালে তিনি গাছগুলো জব্দ করেন, কিন্তু এরই মাঝে কিছু গাছ, গাছের পাতা ও ডালপালা লুট হয়ে গেছে।

বড়গাঁও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফয়জুর রহমানের দাবি, শুক্রবার ঠিকাদার রাস্তার বক্স কাটিং করার সময় ভেকু মেশিন ব্যবহার করার ফলে গাছগুলো উপড়ে গেছে। গাছ যাতে লুট না হয় এর জন্য ইউনিয়ন পরিষদে নেয়া হচ্ছিল।

গাছ ও পাতা বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, ‘পাতা বিক্রি করা হয়েছে, এখনও গাছ বিক্রি করিনি।’

বিক্রির অর্থের হিসাব তিনি তাৎক্ষণিক দিতে পারেননি। কার নির্দেশে পাতা বিক্রি করেছেন জানতে চাইলে তিনি প্রশ্ন এড়িয়ে যান।

তবে ঠিকাদার আব্দুস সামাদ এর দাবি, গাছ উপড়ে ফেলার মতো কোনো নির্দেশনা ভেকু চালকের প্রতি তার ছিল না। যেখানে গাছ কাটা হয়েছে এর আগে কয়েক কিলোমিটার রাস্তা বক্স কাটিং করা হয়েছে। কয়েকদিন ধরেই বক্স কাটিংয়ের কাজ চলছে। কোনো গাছ কাটা বা উপড়ে ফেলা হয়নি।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি ভেকু গাড়ির চালকের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, স্থানীয় কিছু লোকজন জোরপূর্বক তাকে দিয়ে গাছগুলো উপড়ে ফেলিয়েছে এবং বলেছে তারা নাকি গাছগুলো নিয়ে যাবে। আমি ঠিক চিনি না তারা কারা। এ ঘটনায় তদন্তে সব সত্য বেরিয়ে আসবে।’

সড়ক উন্নয়নের কাজে সরকারি গাছ কাটার ক্ষেত্রে কী নিয়ম আছে জানতে চাইলে সদর উপজেলার ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল কাদের কোনো তথ্য জানাতে পারেননি। তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের সব বিষয়ে মাথা না ঢুকাতে বলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সড়ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারি গাছ কাটার প্রয়োজন হলে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার ইউএনওকে চিঠি দেবেন। পরবর্তীতে ইউএনও বন বিভাগকে চিঠি দিয়ে সেসব গাছ চিহ্নিত ও দাম নির্ধারণ করতে বলবেন এবং নিলামে গাছ বিক্রি করবেন। আরও কোনো নিয়ম থাকলে ইউএনও স্যার ভালো জেনে থাকবেন।’

শুক্রবারের ঘটনায় এমন কোনো নিয়ম অনুসরণ করা হয়েছে কিনা- এ তথ্য জানতে যোগাযোগ করা হলে সদর উপজেলার এলজিইডি ইঞ্জিনিয়ারকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘গাছ কার নির্দেশে কাটা হয়েছে বা উপড়ে ফেলা হয়েছে এগুলো তদন্তের বিষয়। তাৎক্ষণিক মন্তব্য করতে চাই না, তবে এতগুলো গাছ কাটার ঘটনায় যা হয়েছে তা অনৈতিক কাজ হয়েছে। আপাতত সড়কের বক্স কাটিং এর কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।’

এ ঘটনায় মামলা হবে, তদন্ত হবে এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর