বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শুরুতে শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে রাবির গণইফতারে ছাত্রলীগ

  • প্রতিনিধি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়   
  • ১৪ মার্চ, ২০২৪ ১২:০২

ইফতার আয়োজনের পর জোহার বক্তব্যে জানতে তার মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে অপর পাশ থেকে তার বন্ধু পরিচয় দিয়ে একজন বলেন, ‘জোহা সারা দিনের ধকল নিতে পারেনি। এ ছাড়া ইফতারের সময় ঝামেলার কারণে সে ঠিকমতো ইফতার করতে পারেনি। এই কারণে সে হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়েছে। আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি।’

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) ইফতার পার্টির ওপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) গণইফতার কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রাবির শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বুধবার সন্ধ্যায় এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

এ কর্মসূচি শুরুর আগেই ছাত্রলীগ দাবি করে এতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সংশ্লিষ্টতা আছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তারা গণইফতার আয়োজন হবে না বলে শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে দেন। একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে আসেন কর্মসূচির আয়োজক জায়িদ হাসান জোহা।

এরপর জোহার সঙ্গে শিবিরের সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, সেটি যাচাই করতে তাকে জেরা করেন ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা, কিন্তু তাঁদের কাছে জোহাকে শিবিরের কর্মী মনে না হওয়ায় ‘ক্যাম্পাসের পাহারাদার’ হিসেবে গণইফতার কর্মসূচিতে অংশ নেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

ইফতারে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক গোলাম কিবরিয়া ফেরদৌস, রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব এবং তাদের নেতা-কর্মীসহ দুই শতাধিক শিক্ষার্থী।

প্রত্যক্ষদর্শী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে জানা যায়, বুধবার বিকাল পাঁচটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার চত্বরে শিক্ষার্থীরা গণইফতারে অংশ নিতে আসতে থাকেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে কয়েকজন নেতা শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘গণইফতার হবে না।’

একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে আসেন গণইফতার কর্মসূচির আহ্বায়ক জায়িদ হাসান জোহা। এরপর শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা জোহাকে শহীদ মিনার মুক্তমঞ্চের পেছনে নিয়ে কথা বলেন। কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে বেরিয়ে এসে দুই ছাত্রলীগ নেতা গণইফতার কর্মসূচির আয়োজন শুরু করতে বলেন। এরপর শামিয়ানা বিছিয়ে গণইফতার শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

ইফতার পার্টি শেষে কর্মসূচির আহ্বায়ক জায়িদ হাসান জোহাকে আবার জেরা করার জন্য ছাত্রলীগের নেতারা নিয়ে যেতে চান। তখন শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন খান ও গোলাম কিবরিয়া ফেরদৌস তাদের বাধা দেন, কিন্তু তাদের বাধা উপেক্ষা করে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জোহাকে জোর করে নিয়ে যেতে চাচ্ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা।

ওই সময় দুই শিক্ষক ছাত্রলীগ নেতাদের বলেন, ‘জোহাকে তোমাদের জিম্মায় ছেড়ে দিলাম। ওর যদি কোনো কিছু হয় তাহলে তোমাদেরকে দায়ভার নিতে হবে।’

পরে জোহাকে নিয়ে শেরে বাংলা হল সংলগ্ন দোকানের পেছনে নিয়ে যান ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সেখানে জোহার সঙ্গে ২০ মিনিট কথা বলেন তারা। এরপর তাকে ছেড়ে দিয়ে ছাত্রলীগ নেতারা আবার রাত ১০টার দিকে ক্যাম্পাসের বুদ্ধিজীবী চত্বরে জোহাকে দেখা করতে বলেন। এরপর জোহা রিকশা নিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের হন।

ইফতার আয়োজনের পর জোহার বক্তব্যে জানতে তার মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে অপর পাশ থেকে তার বন্ধু পরিচয় দিয়ে একজন বলেন, ‘জোহা সারা দিনের ধকল নিতে পারেনি। এ ছাড়া ইফতারের সময় ঝামেলার কারণে সে ঠিকমতো ইফতার করতে পারেনি। এই কারণে সে হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়েছে। আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি।’

এর আগে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইফতার পার্টির ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে রাবির আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী জায়িদ হাসান জোহা নিজেকে আহ্বায়ক ঘোষণা দিয়ে ফেসবুকে গণইফতার কর্মসূচির ডাক দেন এবং এ বিষয়ে ‘ব্যানার’ তৈরি করে প্রচার করেন।

সেখানে জোহা লিখেন, ‘সকলে সাধ্য অনুযায়ী ইফতারি আনার চেষ্টা করবেন। এ ছাড়া কেউ চাইলে সরাসরি অর্থনৈতিক অংশগ্রহণও করতে পারবে।’

ইফতারির আগে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আমরা গণইফতার নামে একটি আয়োজন দেখতে পাই। এই বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ক্রিয়াশীল কোনো ছাত্র সংগঠন অবগত ছিল না। এখানে এসে দেখলাম অনেক জটলা বেঁধে আছে। শিক্ষার্থীরা ইফতারি করবে।

‘তাদের সঙ্গে কথা বলে আমরা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অংশগ্রহণ করেছি, যাতে ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না ঘটে। সে জন্য ক্যাম্পাসের পাহারাদার হিসেবে আমরা শহীদ মিনারে অবস্থান করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য আছে, আজ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা নোমানীর মৃত্যুবার্ষিকী। তারা আজ নামে-বেনামে ক্যাম্পাসে কোনো একটা কর্মসূচি পালন করবে। গণইফতার কর্মসূচির আহ্বায়ক জোহা এর সঙ্গে জড়িত আছে কি না, জানি না, তবে তার সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে সে জড়িত না।

‘আপাতত আমরা সবাই একসঙ্গে ইফতার করব। তারপর জোহার সঙ্গে আবার কথা হবে, সে শিবির বা নোমানীর মৃত্যুবার্ষিকীর কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত কি না।’

এ বিষয়ে ইফতার শুরুর আগে জায়িদ হাসান জোহা নামের ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘বাঙালির চিরায়ত মুসলিম সংস্কৃতি রমজান, সেহরি ও ইফতার। এই সংস্কৃতি ও ধর্মীয় রীতির ওপর হস্তক্ষেপ কাম্য নয়।

‘সম্প্রতি শাবিপ্রবি ও নোবিপ্রবিতে ঘটে যাওয়া ঘটনায় দুই ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংহতি জানিয়ে আমরাও আয়োজন করছি গণইফতার কর্মসূচি, তবে ছাত্রলীগের ভাইয়েরা বিষয়টি না জানায় আমাকে ডেকে নিয়ে কথা বলেছেন। এখন ভাইয়েরা মিলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইফতারি করতে বসেছি। কোনো বাধা দেয়ার ঘটনা ঘটেনি।’

কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে সন্ধ্যায় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘জোহা নামে একজন ছেলে আমাকে কল দিয়ে দাওয়াত দিয়েছে। তারপর আরেকজন কল দিয়ে বলল, একটা সংগঠনের ছেলেরা আমাদের দাঁড়াতে দিচ্ছে না। সেটি শুনেই মূলত এখানে এসেছি। পরে এসে দেখলাম ঝামেলা মিটে গেছে। ’

ইফতারের শেষে ঝামেলার বিষয়ে জানতে চাইলে রাত সাড়ে আটটার দিকে অধ্যাপক ফরিদ মুঠোফোনে আরও বলেন, “ছাত্রলীগের নেতারা জোহাকে তাদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোড় করছিল। তখন তাকে দেখে মনে হলো সে অনিরাপত্তা বোধ করছে। তাই তাকে এক শিক্ষকের বাইকে করে মেসে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত তারা জোহাকে জোর করে নিয়ে গেছে।

“তখন বাবু-গালিবকে আমি বলেছি, ‘তোমাদের জিম্মায় ওকে দিয়ে দিলাম। কোনো সমস্যা হলে এর দায়ভার তোমাদের নিতে হবে।’”

এ বিভাগের আরো খবর