রমজানে পণ্যের মান ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে বিএসটিআইয়ের ভেজালবিরোধী বিশেষ অভিযানের ঘোষণা দিয়ে শিল্পমন্ত্রী শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেছেন, ভেজাল, নকল, পরিমাপে কারচুপি এবং সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে পণ্য বিক্রি করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে বিএসটিআই। ভেজালকারী ছোট হোক বা বড় হোক কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স।
রোববার পণ্যের মান প্রণয়ন ও নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এর তেজগাঁওস্থ প্রধান কার্যালয়ে ‘পবিত্র মাহে রমজান মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে বিএসটিআই গৃহীত বিশেষ কার্যক্রম’ বিষয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা, বিএসটিআইর মহাপরিচালক (গ্রেড-১) এস এম ফেরদৌস আলমসহ শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন দপ্তর, সংস্থার প্রধান এবং মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এ সময় শিল্পমন্ত্রী বলেন, রমজানে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ এবং পণ্যের ওজন ও পরিমাপে কারচুপি রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম আরও জোরদার করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগরীতে প্রতিদিন ৩টি বিশেষ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। এ ছাড়া জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনের সহযোগিতায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবে বিএসটিআই। একই সঙ্গে র্যাব ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। এসব কার্যক্রম পরিচালনার সময় অনৈতিকভাবে ব্যবসায়ীরা যাতে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে না পারেন, তা মনিটরিং করবে বিএসটিআই।
মন্ত্রী বলেন, আকস্মিকভাবে পরিচালিত অভিযানে বিশেষ করে রোজাদাররা সচরাচর যে খাবার ও পানীয় গ্রহণ করে থাকেন, সেগুলোর ওপর বিশেষ নজর দেয়া হবে। ফলমূল, পানীয়, ফলের সিরাপ, মুড়ি, খেজুর, কোমল পানীয় পাউডার, কার্বোনেটেড বেভারেজ, ভোজ্যতেল, সরিষার তেল, ঘি, পাস্তুরিত দুধ, নুডলস, সেমাই, পানি, ডেক্সট্রোজ মনোহাইড্রেট এবং ইফতার সামগ্রীর মান ও দাম নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
তিনি বলেন, সারা দেশ থেকে মোট ৬১৬টি খাদ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এরমধ্যে এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৫৬২টি। যার মধ্যে মানসম্মত নমুনা ৫১১টি, নিম্নমানের নমুনা ৫১টি । এ ছাড়া আরও ৫৪টি নমুনা পরীক্ষাধীন রয়েছে। নিম্নমানের পণ্য সরবরাহকারীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। শোকজের পর ১০টি প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যের মান উন্নয়ন করে বিএসটিআইকে অবহিত করায় তাদের পণ্য পুনরায় পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিতে প্রেরণ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হাইকোর্টের আগের নির্দেশ থাকায় নির্দেশে এবং জনস্বার্থ বিবেচনা করে বিএসটিআই ফলমূলে ফরমালিন পরীক্ষা করে থাকে। এ বছর ১৯২টি নমুনা বাজার থেকে ক্রয় করে ফরমালিনের উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয়। তবে কোনোটিতে ফরমালিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।
শিল্পমন্ত্রী জানান, জুলাই ২০২৩ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত (৮মাস) বিএসটিআই পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও পণ্যের ওজন ও পরিমাপে কারচুপি রোধকল্পে ১৫৫৩টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে ১৫৪৩টি মামলা দায়ের করে এবং ৪ কোটি ৮৪ লাখ ২৮ হাজার টাকা জরিমানা করে। এ সময়ে ২৩টি কারখানা সিলগালা করা হয় এবং পরিমাপে কম দেয়ায় প্রেট্রোল পাম্পের ৩৯২টি ইউনিট সিলগালা করা হয়। এ ছাড়া ওই সমেয় ড্রিংকিং ওয়টার, ভোজ্যতেল (ফর্টিফাইড এডিবল ওয়েল) ও অবৈধ প্রসাধনীর বিষয়ে বিশেষ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়।
শিল্পমন্ত্রী আরও জানান, বিএসটিআই পণ্যের হালাল সনদ প্রদান শুরু করছে। ইতোমধ্যে ৮৪টি পণ্যের হালাল সার্টিফিকেট প্রদান করেছে। বিএসটিআই হালাল সনদ প্রদানকালে ধর্মীয় দিকের পাশাপাশি পণ্যের স্ট্যান্ডার্ড এন্ড সেফটির বিষয়টি একদল অডিট টিমের মাধ্যমে যাচাই করে দক্ষতার সাথে দেখে থাকে। যার ফলে বিএসটিআইর হালাল সনদ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।
অনলাইনে পণ্য কেনার আগে বিএসটিআইর অনুমোদন নিশ্চিত হয়ে পণ্যের অর্ডার করার পরামর্শ দেন শিল্পমন্ত্রী। প্রয়োজনে বিএসটিআইর হটলাইন (১৬১১৯) এ ফোন দিয়ে নিশ্চিত হওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।