জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) পানি সরবরাহের একমাত্র নলকূপটি এক বছরের বেশি সময় ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে।
এদিকে ওয়াসা থেকে সরবরাহকৃত পানি পর্যাপ্ত না হওয়ায় প্রতিদিনই ক্যাম্পাসে পানি সংকট দেখা দিচ্ছে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
তাদের অভিযোগ, ক্যাফেটেরিয়াসহ বিভিন্ন বিভাগ এমনকি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোতেও অনেক সময় পানি সরবরাহ বন্ধ থাকে। এ ছাড়াও পানি ফিল্টারের পরেও ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ থেকে যায় এবং ওই পানি পর্যাপ্ত নয়।
এতে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা। ভোগান্তিতে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ হাজার শিক্ষকসহ, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র নলকূপটি রেজিস্ট্রার ভবনের পেছনে অবস্থিত। কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শুরুর প্রথমদিকে গভীর এ নলকূপটি স্থাপন করা হয়। দীর্ঘ এ সময়ে বেশ কয়েকবার নলকূপটি মেরামত করা হলেও গত এক বছর ধরে তা সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে।
একমাত্র নলকূপটি বিকল হয়ে যাওয়ায় বিকল্প হিসেবে ওয়াসার সরবরাহকৃত পানি থেকে রিজার্ভ ট্যাংকে পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। সেই পানি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনে স্থানান্তর করে দেয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ থাকায় সেই পানি ফিল্টারিং মেশিনে ফিল্টার হবার পরেও গন্ধ থেকে যাচ্ছে। এ ছাড়াও ওয়াসার পানি কতটুকু বিশুদ্ধ তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তারা।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যাপ্ত হল সুবিধা না থাকার কারণে পুরান ঢাকায় ক্যাম্পাসের আশেপাশে মেসে থেকে অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাইমুন রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের হল না থাকায় আমাদের পুরান ঢাকার মেসে থাকতে হয়। আর এখানে কয়েকটি সমস্যার মধ্যে প্রধান সমস্যা হচ্ছে বিশুদ্ধ পানির অভাব। এ জন্য ক্যাম্পাস থেকেই বাসার জন্য পানি নিয়ে যাই। ক্যাম্পাস থেকে পানি নিতে গেলে প্রায়ই লক্ষ্য করি পানিতে দুর্গন্ধ থাকে।
‘পরবর্তীতে জানতে পারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নলকূপটি নষ্ট, সরাসরি ওয়াসার পানি ফিল্টার করা হচ্ছে। তাই দ্রুতই নলকূপ সংস্কারের জন্য প্রশাসনের নিকট দাবি জানাচ্ছি।’
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মিজান উদ্দীন মাসুদ বলেন, ‘কিছুদিন আগেই আমি পানিবাহিত রোগে অসুস্থ হয়ে পড়ি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াসার পানি পান করার জন্যই এমনটা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটিমাত্র নলকূপ, সেটাও এক বছর ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। প্রশাসন দ্রুত এটি মেরামত করলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্রী ঊর্মি ইসলাম বলেন, ‘পুরান ঢাকার পানির অবস্থা সবাই জানে। এ জন্য ক্যাম্পাস থেকে মেসে পানি নিতে হয়। আর এখন ক্যাম্পাসের পানির অবস্থাও বাজে। তার ওপর এখন তো ক্যাম্পাসে পানিই থাকে না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারী বলেন, ‘ক্যাম্পাসের ভবনগুলোর পেছনে অনেক কর্মচারী পরিবারসহ বসবাস করে। রমজানে পর্যাপ্ত পানি না থাকলে সেহরি আর ইফতারের সময় প্রচুর সমস্যা হয়ে যাবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মো. হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ‘নলকূপ সংস্কারের জন্য টেন্ডার ও ড্রপিং হয়ে গেছে। অনুমোদনের কাজও প্রক্রিয়াধীন। আশা করছি দু একদিনের মধ্যেই অনুমোদন হয়ে যাবে। রমজানে অনেক পানির প্রয়োজন হয়।’
রমজান শুরু হবার আগেই কাজটা শেষ করার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।