মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধার্থে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মতো অভিন্ন মুদ্রা প্রবর্তনের পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তুরস্কের বাণিজ্য উপমন্ত্রী মুস্তাফা তিজকুর নেতৃত্বে ডি-৮ বাণিজ্যমন্ত্রীদের একটি প্রতিনিধিদল মঙ্গলবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।
সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার এম নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধার্থে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো একটি অভিন্ন মুদ্রা চালু করতে পারলে খুব ভালো হবে।’
বিশ্বের আটটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে তাদের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির পাশাপাশি বন্ধুত্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে ডি-৮ গঠন করা হয়েছে। এই জোটে রয়েছে বাংলাদেশ, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও তুরস্ক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন করাই আমাদের লক্ষ্য। এটা তখনই সম্ভব যখন আমরা নিজেদের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে সক্ষম হব। ডি-৮ এর সদস্য দেশগুলোর এটি অর্জনের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
‘আমরা যদি আমাদের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে পারি তাহলে আমাদের অন্যের মুখাপেক্ষী হওয়ার প্রয়োজন হবে না। ডি-৮ এর উচিত ব্যবসা-বাণিজ্যে একটি পরিবারের মতো একসঙ্গে কাজ করা এবং নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নে একে অপরকে কারিগরি সহায়তা দেয়া।’
রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের দু-একটি প্রজন্ম বিপথে চলে যাচ্ছে। অনেকেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে।’
রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এটি দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে। বিশেষ করে মিয়ানমারে বর্তমান অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে তাদের প্রত্যাবাসনের পদক্ষেপ কঠিন হয়ে পড়ছে।’
বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল ডি-৮ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) বাস্তবায়ন এবং এর কার্যকারিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করা।
ডি-৮ দেশগুলোর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপাক্ষিক বাণিজ্য জোরদারে সম্মত হওয়ায় কাউন্সিল অফ মিনিস্টার বৈঠকে ‘ঢাকা ডিক্লারেশন’ পেশ ও গৃহীত হয়।
প্রতিনিধি দলটি ২৭ বছর আগে ডি-৮ জোট গঠনের অন্যতম সূচনাকারী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং বর্তমানেও তিনিই সরকারের একমাত্র প্রতিষ্ঠাতা প্রধান।
প্রতিনিধি দল জানায়, বৈঠকে তারা ডি-৮ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা বর্তমানে ১৪৬ বিলিয়ন ডলারে রয়েছে।
জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও ভরণপোষণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে তারা বলেন, ডি-৮ ও মুসলিম দেশগুলো তাদের জন্য সহায়তা ও সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত রাখবে।
গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিষয়ে আলাপকালে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের সমর্থনে শেখ হাসিনার অবস্থানের প্রশংসা করেন।
বৈঠকে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ উপস্থিত ছিলেন।