কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের আল্লাহরদর্গা হাটে খাস ইজারার নামে প্রকাশ্যে চলছে রমরমা চাঁদাবাজি। সরকারিভাবে কোনও ইজারা না থাকলেও, ইজারাদারের পরিচয়ে বহিরাগতরা এ হাটে জোরপূর্বক টাকা আদায় করে আসছে। এতে সরকার লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
হাটের নিয়মিত ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা জানিয়েছেন, সরকারি অনুমোদন ছাড়াই একটি স্থানীয় চক্র হাট ইজারার নামে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রতি হাটবারে বাধ্যতামূলক ও ইচ্ছামতো টাকা নেওয়া হচ্ছে। প্রতিবাদ করলে হুমকি-ধামকি দেওয়া হয়। অনেকেই ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না।
সরজমিনে দেখা যায়, ইমামুল নামে , এক ব্যক্তি তার বাড়ির পালিত কবুতর ৮০০ টাকায় এক পাইকারের কাছে বিক্রি করেন। এ সময় ইজারাদার পরিচয়ে রানা নামের এক ব্যক্তি তার কাছে ৫০ টাকা ইজারা বাবদ দাবি করেন। এত বেশি টাকা নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে, রানা উত্তেজিত হয়ে তাকে হুমকি-ধামকি দেন এবং আটকানোর ভয় দেখান। ভয়ে তিনি ৫০ টাকা পরিশোধ করেন। রশিদ চাইলে রানা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন, ফলে ওই ব্যক্তি ভয়ে রশিদ না নিয়েই স্থান ত্যাগ করেন।
পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রানা নামের ওই ব্যক্তি জাকির হোসেন নামের এক কথিত ইজারাদারের পক্ষে টাকা আদায় করে থাকেন।
এই ঘটনায় হাটের ইজারাদার পরিচয় দানকারী জাকির হোসেন বলেন, আমরা অতিরিক্ত টাকা আদায় করি না, শতকরা ৫ টাকা হারে ইজারা নিয়ে থাকি।
এ ঘটনায় সাচ্চু নামে আরেক ইজারাদার বলেন, এ সকল অভিযোগ মিথ্যা, যে অভিযোগ দিয়েছে তাকে নিয়ে আমার কাছে আসেন।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আল্লাহরদর্গা হাট সরকারিভাবে কাউকে ইজারা দেয়া হয়নি। এই টাকা আদায়ের দায়িত্ব এখন তহশিলদারের।
এ ব্যাপারে তহশিলদার আনিসুর রহমান জানান, সরকারিভাবে কাউকে হাটে ইজারা দেয়া হয়নি, তবে হাট প্রশাসনের নির্দেশে আমি পরিচালনা করছি। আমার লোকবল কম থাকায় বহিরাগতদের মাধ্যমে টাকা আদায় করে থাকি। শতকরা ৫ টাকা আদায় সম্পর্কে তিনি বলেন, এভাবে আদায় সম্পূর্ণ বেআইনি। আমরা এভাবে টাকা আদায় করি না। কেউ আদায় করলে ব্যবস্থা নেব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, হাট কাউকে ইজারা দেয়া হয়নি, সংশ্লিষ্ট তহশিলদারদের মাধ্যমে কালেকশন হচ্ছে। শতকরা ৫ টাকা আদায়ের বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দৌলতপুরের বেশ কয়েকটি হাটে বৈধ নথি বা টেন্ডার ছাড়া একদল প্রভাবশালী চক্র দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় জনগণ ও সচেতন মহল আশা করছেন, দ্রুত এই অবৈধ চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, যাতে হাটের স্বাভাবিক কার্যক্রম সচল থাকে এবং সাধারণ ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা নিরাপদে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারে।