বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাগেরহাটের কাঠের সাইকেলের ইউরোপ যাত্রা

  • প্রতিনিধি, বাগেরহাট   
  • ৪ মার্চ, ২০২৪ ১৭:০২

বাগেরহাটে এই সাইকেল তৈরি হলেও বাংলাদেশে কোনো বাজারে বিক্রি হয় না, যা যাচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। কাঠ দিয়ে নিপুণ হাতে বেবি ব্যালান্স সাইকেল তৈরি করছে বাগেরহাটের ন্যাচারাল ফাইবার নামে একটি প্রতিষ্ঠান।

বাগেরহাটে তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব কাঠের বেবি ব্যালান্স বাইক। চাকা থেকে শুরু করে পুরো কাঠমোই কাঠ দিয়ে তৈরি সাইকেল। দেখতে অবিকল খেলনা মনে হলেও দেশের বাইরে এই সাইকেল ব্যবহার হচ্ছে বাহন হিসেবে।

বাগেরহাটে এই সাইকেল তৈরি হলেও বাংলাদেশে কোনো বাজারে বিক্রি হয় না, যা যাচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। কাঠ দিয়ে নিপুণ হাতে বেবি ব্যালান্স সাইকেল তৈরি করছে বাগেরহাটের ন্যাচারাল ফাইবার নামে একটি প্রতিষ্ঠান।

সাইকেল তৈরিতে কাজ করেন স্থানীয় ৪০-৫০ জন নারী-পুরুষ শ্রমিক। প্রতিদিন তৈরি করেন অন্তত ৪০টি সাইকেল। কাঠের তৈরি সাইকেল চলে যাচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। এর ফলে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন বাজার ও কর্মসংস্থান আসছে বৈদেশিক মুদ্রা।

এ সাইকেল তৈরির উদ্যোক্তা বাগেরহাট বিসিক শিল্প নগরীর ন্যাচারাল ফাইবার নামের একটি প্রতিষ্ঠান। শুধু এই বাইসাইকেল নয় কাঠ দিয়ে তারা তৈরি করছে সান বেড, হোটেল বেড, কুকুর বিড়ালের খেলনাসহ পরিবেশবান্ধব আকর্ষণীয় ফার্নিচার। যার চাহিদা তৈরি হয়েছে বিশ্ববাজারে।

প্রথমবারের মতো নিজ দেশের পণ্য ইউরোপের বাজারে রপ্তানি সম্পৃক্ত থাকতে পেরে খুশি কারখানার শ্রমিকরাও। দেশীয় এই পণ্যের বিদেশের বাজারে রপ্তানি করতে ইচ্ছুক উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে বাগেরহাট বিসিক শিল্প নগরীর ন্যাচারাল ফাইবার নামের প্রতিষ্ঠানের কাঠ দিয়ে সাইকেল তৈরি কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, কেউ তৈরি করছেন ফ্রেম, কেউ চাকা, কেউ আবার হ্যান্ডেল, এভাবেই তৈরি হচ্ছে কাঠের তৈরি বাইসাইকেল।

সবশেষে শ্রমিকদের নিপুণ হাতে কাঠের বাইকে রং ও পালিশ করা হচ্ছে। এখান থেকেই কাঠের তৈরি এসব বাইক চলে যাচ্ছে ইউরোপের গ্রিস ও বেলজিয়ামসহ নানা রাষ্ট্রে।

স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা কাঠ দিয়ে গত ৬মাস ধরে তৈরি করা হচ্ছে এসব সাইকের। প্রতিদিন এই কারখানায় তৈরি করা হচ্ছে প্রায় ৪০টি সাইকেল। যার মূল ক্রেতা গ্রিসের বিখ্যাত কোকো মেট কোম্পানি।

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তাদের শোরুম থাকার কারণে আমেরিকা, ইতালি ও ফ্রান্সের মত রাষ্টগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ছে বাগেরহাটের তৈরি এসব সাইকেল।

এ ছাড়া সাম্প্রতি কোকো মেট কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা মিস্টার পলসহ তার কোম্পানির অন্যান্য কর্মকর্তারা ঘুরে দেখেছেন ন্যাচারাল ফাইবার এর কারখানা।

পণ্যের মানে খুশি হয়ে নতুন নতুন পণ্যের অর্ডার দেয়ার পাশাপাশি বেলজিয়ামের একটি চিড়িয়াখানার জন্য কাঠের তৈরি ঘরসহ নানা পণ্য তৈরির কথা জানান পল।

কারখানায় সুপার ভাইজার আব্বাস বলেন, ‘আকাশমণি, মেহগনি ও গামারিসহ বিভিন্ন ভাল মানের কাঠ দিয়ে বিদেশি শিশুদের জন্য বেবি ব্যালান্স সাইকেল তৈরি করি। এই সাইকেল তৈরি করতে দেড় থেকে দুইদিন লেগে যায়। সাইকেলটি তৈরি করতে ১১টি পার্টের প্রয়োজন হয়। কারখানার বিভিন্ন স্থানে পার্টগুলো তৈরি করা হয়। নির্দিষ্ট একটি স্থানে সব পার্ট একত্র করে একটি সাইকেলে রুপান্তরিত করা হয়। পরে রং করে বিদেশি শিশুদের জন্য তৈরি হয় বেবি ব্যালান্স সাইকেল।’

কারখানায় নারী শ্রমিক রুপা সেন বলেন, ‘এখানে বাচ্চাদের সাইকেল তৈরি করতে পেরে আমরা খুশি। আমাদের হাতে তৈরি করা সাইকেল বিদেশে যায়, এটাই আমাদের অনেক আনন্দ দেয়। এই কারখানায় কাজ করে যে, বেতন পাই তাতে আমার সংসার এবং ছেলে মেয়ের লেখাপড়া খরচ চলে।’

রংমিস্ত্রি আনিস শেখ বলেন, ‘কারখানায় শ্রমিকরা মিলে প্রতিদিন তৈরি করা হচ্ছে প্রায় ৪০টি সাইকেল। কাঠের সাইকেল তৈরির কাজ গুলো করে আমরা আনন্দিত। ভাবতেই অবাক লাগে আমার হাতের রঙের ছোঁয়া ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে সত্যিই খুব ভালো লাগে। আমাদের দেশে যদি এসব কাজের সুযোগ আরো বৃদ্ধি পায় তাহলে দেশে থেকেও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।’

বাগেরহাট বিসিক শিল্প নগরীর ন্যাচারাল ফাইবার নামের প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক মুজাহিদ আহম্মেদ বলেন, ‘আমরা সাধারণতো নারিকেলের ছোবড়া দিয়ে পণ্য তৈরি করতাম। সম্প্রতি ইউরোপের কাস্টমার পেয়েছি, যারা পরিবেশবান্ধব পণ্য বাজারজাত করতে আগ্রহী। যারা কাঠের কিছু প্রোডাক্ট নিতে চায়, তাদের কাছ থেকে কাঠের বেবি ব্যালান্স সাইকেল অর্ডার পাই। প্রথমদিকে তারা ৪০ হাজার পিস ওয়ার্ডার দিলে আমরা ২০ হাজার পিস এক্সপোর্ট করেছি আর ২০ হাজার পিস খুব তাড়াতাড়ি যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রপ্তানির জন্য আমাদেরকে সরকার ১০ শতাংশ প্রণোদনা দিতো। সম্প্রতি কমিয়ে দিয়েছে। প্রণোদনা কমিয়ে দিলে মার্কেটে টিকে থাকা মুশকিল হবে। আমাদের দাবি হচ্ছে, আমাদের প্রোডাক্টগুলো সরকারের খরচে প্রচার করতে হবে। সরকারের আন্তরিকতা থাকলে আমাদের প্রোডাক্ট মার্কেটে টিকে থাকবে। শুধু বেবি ব্যালান্স বাইকই নয়, সানবেড, হোটেলবেড, কুকুর বিড়ালের খেলনাসহ বেশ কয়েকটি পণ্য তৈরি করছে আমারদের প্রতিষ্ঠানটি।’

সরকারের আন্তরিকতা ও প্রনোদনা পেলে রপ্তানির পরিমান এবং বৈদেশিক মুদ্রার অর্জন বাড়বে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের বাগেরহাটের প্রমোশন অফিসে শরিফ সরদার বলেন, ‘বাগেরগাটের বিসিক শিল্প নগরীতে ন্যাচারাল ফাইবার নামের প্রতিষ্ঠানটি সবসময়ই ইউনিক আইডিয়ায় নিয়ে কাজ করেন। বর্তমানে তারা কাঠের সাইকেল তৈরি করে ইউরোপে রপ্তানি করছে। এর মাধ্যমে যে শুধু বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে সেটা নয়। স্থানীয়ভাবে অনেক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা সব সময় উদ্যোক্তা সৃষ্টি করে যাচ্ছি। এ ধরনের পণ্য বিদেশে গেলে আমাদের দেশের সুনাম আরও বাড়বে।’

দেশীয় পণ্যের বিদেশের বাজারে রপ্তানি করতে ইচ্ছুক উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে জানান তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর