এ যেন সিনেমাকেও হার মানায়। স্বজনরা মনে করেছিলেন, মফিজুল একদিন ফিরে আসবেন; কিন্তু নিখোঁজের দুই বছর পর জানা গেল তিনি খুন হয়েছেন; প্রেমের সম্পর্কের জেরে খুন হয়েছেন দুবছর আগেই।
এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে নাটোরের গুরুদাসপুরে। রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাটি খুঁড়ে চাঁচকৈড় পুরানপাড়া মহল্লার একটি বালিকা মাদ্রাসার সেপটিক ট্যাংকের পাশ থেকে মফিজুলের পুঁতে রাখা দেহাবশেষ উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত চারজনকে গেপ্তার করা হয়েছে।
নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাইনুল ইসলাম জানান, বিস্কুট ফ্যাক্টরিতে চাকরির সুবাদে গুরুদাসপুর উপজেলার খলিফাপাড়া মহল্লার এক সন্তানের পিতা মাফিজুলের সঙ্গে একই মহল্লার গৃহবধূ তানজিলা খাতুনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ নিয়ে তানজিলার সঙ্গে তার স্বামী আল হাবিবের দাম্পত্যে বিবাদ দেখা দেয়। বিষয়টি নিয়ে তানজিলার বাবা আবু তাহের খলিফার কাছে অভিযোগ করেন হাবিব।
এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে জামাতা হাবিবকে সঙ্গে নিয়ে মফিজুলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন আবু তাহের খলিফা। প্রেমিকের কারণে সংসারে অশান্তি হচ্ছে ভেবে তাদের পরিকল্পনায় শামিল হন তানজিলাও।
পরবর্তীতে ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল কৌশলে মাফিজুলকে তারা চাঁচকৈড় বালিকা দাখিল মাদ্রাসার ভেতরে নিয়ে যান। সেখানে মফিজুলের হাত-পা বেঁধে ও মুখে স্কচটেপ আটকে তারা তিনজনসহ আরও কয়েকজন মিলে দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে তাকে হত্যা করেন। পরে প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে মাফিজুলের মরদেহ মাটিতে পুঁতে রাখেন তারা।
ছেলে নিখোঁজ হয়েছে ভেবে মাফিজুলের মা গুরুদাসপুর থানায় ২০২২ সালের ৭ মে থানায় জিডি করেন।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের পর তানজিলা-হাবিব দম্পত্তির মধ্যে কলহ আরও বেড়ে যায়। এ কারণে ২০২২ সালের মে মাসে স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মামলা করেন তানজিলা। ওই মামলায় নাটোর কারাগারে যান আল হাবিব।
এরপর দীর্ঘদিন কারাবাসে থাকায় গুরুদাসপুরের খলিফাপাড়া মহল্লার জাকির মুন্সি নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে কারাগারে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে আল হাবিবের। আলাপচারিতায় আল হাবিব হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি জাকির মুন্সিকে জানান।
জাকির জামিনে মুক্তি পেয়ে নিহত মাফিজুলের পরিবারকে ঘটনাটি খুলে বলে। সবশেষ দুদিন আগে কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে আসেন আল হাবিব।
শুক্রবার রাতেই নিহত মাফিজুলের মা মাইনুর বেগম বাদী হয়ে গুরুদাসপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার পর পুলিশ ও র্যাব যৌথ অভিযান চালিয়ে আবু তাহের খলিফা, মেয়ে তানজিলা খাতুন, জামাই আল হাবিব সরকার ও তাদের প্রতিবেশী আশরাফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যার শিকার মাফিজুলের পুঁতে রাখা দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘নিহত মফিজুলের স্বজনরা মনে করেছিলেন, অভিমান বা অন্য কোনো কারণে তিনি নিখোঁজ হয়েছেন। একসময় হয়ত বাড়িতে ফিরেও আসবেন।
‘আশায় প্রতীক্ষার প্রহর গুণছিলেন তার স্বজনরা, কিন্তু দুই বছর পর সবাই জানতে পারলেন, খুন হয়েছেন মাফিজুল।’
এ ঘটনায় অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছেন স্থানীয়রা।