কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে এক শিক্ষার্থীকে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে কুষ্টিয়া যাওয়ার সময় বাসের সিটে বসাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় শনিবার সকালে সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিচার চেয়ে প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবু জাহেদ।
অভিযুক্তরা হলেন- উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের রতন রায় ও রিহাব রেদোওয়ান। তারা উভয়েই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মী ও সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাতের অনুসারী বলে জানা গেছে।
লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ২২ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাস থেকে কুষ্টিয়া শহরে যাওয়ার জন্য দুপুর তিনটার বাসে ওঠেন ভুক্তভোগী। তিনি একটা সিটে বসা ছিলেন, যার পাশের সিটে বসা ছিলেন অভিযুক্ত রতন রায়।
কিছুক্ষণ পরে রতন নিচে গিয়ে কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবী নিয়ে পুনারায় সিটে বসতে আসেন। এ সময় তিনি ভুক্তভোগীকে পাশের সিটে সরে যেতে বললে তিনি এতে অস্বীকৃতি জানান। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে রতন আবু জাহেদের গলা টিপে ধরেন এবং তাকে সহযোগিতা করা রিহাব চোখে আঙুল ঢুকিয়ে দেন। তখন ভুক্তভোগী চিল্লাপাল্লা শুরু করলে তাকে ছেড়ে দেন তারা।
অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী লিখেছেন, ‘আর ৯/১০ সেকেন্ড ধরে রাখলে আমি মারা যেতাম।’
তবে অভিযোগটি মিথ্যা দাবি করেছেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগকর্মী রতন রায়।
তিনি বলেন, ‘যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, সেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। যদি তার গলা টিপে বা চোখ আঙ্গুল দেয়া হতো, তাহলে সেগুলোর চিহ্ন থাকার কথা।
‘আমি দুই প্রত্যক্ষদর্শীর স্বাক্ষরিত এক পাল্টা অভিযোগপত্র দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি ছাত্রলীগের কর্মী, সেটা বড় কথা নয়, বরং সর্বপ্রথম আমি শিক্ষার্থী। আমি কেন ছাত্রলীগের আশ্রয় কোনোকিছু করতে যাবো? এসবের কোনো ভিত্তি নেই।’
অভিযোগ অস্বীকার করেন অপর অভিযুক্ত রিহাব রেদোওয়ানও। তিনি বলেন, ‘মূলত বাসের পেছনের সিটে দুইটি মেয়ে বসা ছিল। সে (ভুক্তভোগী) দুজনের মাঝখানে বসা ছিল। তাই আমরা তাকে ওপাশে সরে বসতে বলেছিলাম।
‘একপর্যায়ে তার সঙ্গে আমাদের বাগবিতণ্ডা হয়। পরিস্থিতি খারাপ পর্যায়ে চলে যাবে ভেবে আমি তাকে একটু ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছেলাম। তখন সে তার বড় ভাই মজুমদারকে কল দিয়ে আনে। তিনি এসে আমাদের বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করেন।’
ভুক্তভোগী আবু জাহেদ বলেন, ‘উনারা বাসে উঠে আমাকে সরে যেতে বললে আমি অস্বীকৃতি জানাই। একপর্যায়ে তারা আমার গলাটিপে ধরেন, চোখ-মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে রাখেন। এভাবে প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে আমাকে শ্বাসরোধ অবস্থায় রাখেন। আর ৫ সেকেন্ড ধরে রাখলে মরে যেতাম। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’
আশপাশে লোক ছিল কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আশেপাশে লোক ছিল, কিন্তু কেউ সহায়তা করতে আসেনি।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাতের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোথায়, কী অভিযোগ হয়েছে, শুনিনি। এরকম অভিযোগ সত্য হয়ে থাকলে এবং ছাত্রলীগের কর্মী হয়ে থাকলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ছাত্রলীগ অপরাধীকে প্রশ্রয় দেয় না বলে জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ এ বিষয়ে বলেন, ‘এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। আমরা আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।’