বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অযত্নে মানিকগঞ্জের প্রথম শহীদ মিনার, ফুল দিল না প্রশাসনও

  • প্রতিনিধি, মানিকগঞ্জ   
  • ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ১৫:৩৭

প্রায় ৭০ বছর আগে ১৯৫৪ সালে ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে খুব গোপনে ভাষা শহীদদের স্মরণে মানিকগঞ্জ শহরের গার্লস্কুলের সামনে সর্বপ্রথম একটি শহীদ মিনার স্থাপন করা হয় এবং ২১ ফেব্রুয়ারি ভোরবেলায় প্রভাত ফেরিতে ফুলের মাধ্যমে ভাষা শহীদদের সেখানে শ্রদ্ধা জানান তৎকালীন ছাত্রজনতা।

মহান শহীদ দিবস ও আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসেও ভাষা শহীদদের স্মরণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুলেল শ্রদ্ধা পড়েনি মানিকগঞ্জের প্রথম শহীদ মিনারে। অথচ জেলার প্রথম শহীদ মিনারের সঙ্গে দীর্ঘ ঐতিহ্য, ইতিহাস ও সংগ্রাম জড়িত।

জেলার প্রথম শহীদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধা না জানানোয় মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈকি ব্যক্তিদের মধ্যে সমালোচনা চলছে। অবশ্য এই শহীদ মিনারে ফুলের শ্রদ্ধা জানিয়েছে মানিকগঞ্জ পৌরসভা ও সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন।

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১ মিনিটে মানিকগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহান শহীদ দিবস ও আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা শহীদদের ফুলের শ্রদ্ধা জানান জেলা প্রশাসক। শ্রদ্ধা জানানো হয় পুলিশ প্রশাসন, রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ৭০ বছর আগে ১৯৫৪ সালে ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে খুব গোপনে ভাষা শহীদদের স্মরণে মানিকগঞ্জ শহরের গার্লস্কুলের সামনে সর্বপ্রথম একটি শহীদ মিনার স্থাপন করা হয় এবং ২১ ফেব্রুয়ারি ভোরবেলায় প্রভাত ফেরিতে ফুলের মাধ্যমে ভাষা শহীদদের সেখানে শ্রদ্ধা জানান তৎকালীন ছাত্রজনতা।

শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠার পর থেকে তৎকালে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে শহীদ মিনার চত্বর, এরপর ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী শহীদ মিনারটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় এবং দেশ স্বাধীনের পর একই জায়গায় শহীদ মিনারটি পুনরায় গড়ে তোলা হয়।

স্বাধীন বাংলাদেশে মানিকগঞ্জ জেলায় এই শহীদ মিনারে সর্বপ্রথম একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানান প্রশাসনসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। দীর্ঘদিন পর ২০০৭ সালে মানিকগঞ্জ শহরের সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে নির্মাণে করা হয় জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। এরপর থেকে প্রথম শদীহ মিনারে শ্রদ্ধা জানানো বন্ধ হয়ে যায়।

অবহেলা অযত্নে এক পর্যায়ে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়ে যায় এই শহীদ মিনার। এর বেশ কয়েক বছর পর মানিকগঞ্জ পৌর কর্তৃপক্ষ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া শহীদ মিনারটি মেরামত করে। এরপর প্রতি বছর ব্যক্তিগতভাবে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে আসলেও প্রশাসন, রাজনৈতিক দল এ শহীদ মিনারে ফুল দিতে আসে না।

মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম ফারুক বলেন, এই শহীদ মিনার স্থাপনের ইতিহাস ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছি। আমার বাবা, চাচা ও ফুফসহ পরিচিতরাই শহীদ মিনারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এই শহীদ মিনারে ফুল দেয়াদের মধ্যে আমার দাদিও ছিলেন একজন। প্রথম শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন, তারা এখন বেঁচে নেই। তবে ৬০-৬২ বছর আগে প্রথম শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন এমন অনেকে এখনো বেঁচে আছেন।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তি আইনজীবী দীপক কুমার ঘোষ বলেন, প্রথম শহীদ মিনারের মাটি নিয়ে জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। কিন্তু প্রথম শহীদ মিনারে সবার একটা বিশেষ স্মৃতি, আবেগ জড়িত আছে। প্রশাসন ইচ্ছে করলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশপাশি প্রথম শহীদ মিনারে ফুলের শ্রদ্ধা জানাতে পারতো, কারণ প্রথম শহীদ মিনার আমাদের আবেগ, স্মৃতি ও ঐহিত্য জড়িত আছে।

শহীদ মিনারের বিষয়ে স্থানীয় টাইগার লোকমান হোসেন বলেন, জেলার প্রথম শহীদ মিনারে প্রশাসন ফুল না নেয়া দুঃখজনক। প্রশাসনের উচিত ছিল প্রথম শহীদ মিনারে ফুলের শ্রদ্ধা জানানো। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিষয়টি অপমান বোধ করছি। কারণ প্রথম শহীদ মিনারে ফুল দিলে তো প্রশাসনের কোনো ক্ষতি হতো না। ফুল দিলে বরং নতুন প্রজন্ম শহীদ মিনারের গুরুত্ব বুঝতে পারতো। কয়েকবছর আগে নিজ হাতে সিমেন্ট বালু দিয়ে শহীদ মিনারের একাশং মেরামত করেছি।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক রেহেনা আকতারের ফোনে চেষ্টা করেও তার মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিভাগের আরো খবর