রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) মহান শিক্ষক দিবস আজ। ১৯৬৯ সালের এ দিনে গণঅভ্যুত্থান চলাকালে ছাত্রদের রক্ষা করতে গিয়ে পাক সেনাদের গুলিতে শহীদ হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ড. সৈয়দ মুহম্মদ শামসুজ্জোহা। তিনিই এ দেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী।
প্রতিবছর এ দিনটি শহীদ শামসুজ্জোহা স্মরণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষক দিবস’ হিসাবে পালিত হয়।
ইতিহাস জানায়, ১৯৬৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আইয়ুব খান সরকারের আর্মি কাস্টডিতে নিহত হন সার্জেন্ট জহুরুল ইসলাম। এই ঘটনায় বিক্ষোভ-প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ গোটা পূর্ব পাকিস্তান।
সামরিক জান্তারা ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারি করে, কিন্তু তাতে থেমে থাকেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা ১৪৪ ধারা ভাঙার জন্য শোভাযাত্রা বের করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এতে সংঘর্ষ শুরু হয় পুলিশ ও শোভাযাত্রায় অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে। এই ঘটনায় আহত হন অনেকেই।
পরদিন আবার ১৪৪ ধারা ভাঙতে শোভাযাত্রা বের করার ঘোষণা দেয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে সামরিক জান্তারা অনুগত বাহিনী মোতায়েন করে ছাত্র-জনতাকে ঘায়েল করার উদ্দেশ্য নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয়া হয় যেন আন্দোলনকারীরা রাস্তায় বের হতে না পারে।
ছাত্রজনতা এতে আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। প্রাচীর টপকে বাইরে বের হতে থাকলে উপস্থিত শিক্ষকরা প্রধান ফটক খুলে দেয়ার জন্য প্রহরীকে নির্দেশ দেন। এ সময় পাক সেনারা বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতার ওপর গুলি চালানো শুরু করলে প্রক্টর ড. জোহা চিৎকার দিয়ে গুলি বন্ধের আদেশ করে বলেন, ‘ছাত্রদের ওপর গুলি চালানোর আগে আমাকে গুলি করতে হবে!’
ওই সময় পাক সেনাদের বুলেট ক্ষতবিক্ষত করে ড. জোহাকে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেয়ার পথেই শহীদ হন তিনি। এ ঘটনা পরবর্তীতে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে পুরো দেশ বিক্ষুব্ধ হয়, যা পরবর্তীতে ৬৯-এর গণ-আন্দোলনে রূপ নেয়।
এ উপলক্ষে আজ রোববার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মহান শিক্ষক দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসের কর্মসূচিতে ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবন, উপাচার্যভবনসহ অন্যান্য ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।
সকাল ৯টায় উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিকসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ শহীদ ড. জোহার সমাধি ও জোহা স্মৃতিফলকে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে এক মিনিট নীরবতা পালন ও মোনাজাত করেন।
সকাল ১০টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত হয় জোহা স্মারক বক্তৃতা। এতে ‘আমাদের শিক্ষা ভাবনা’ শীর্ষক বক্তৃতা দেন সাবেক শিক্ষা সচিব ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর মো. নজরুল ইসলাম খান।