দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি-জামায়াত ১৩ জনকে হত্যা করেছে বলে সংসদে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই উদ্দেশ্যে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে সহিংস কর্মসূচির মাধ্যমে সারা দেশে তারা ৬০০টির বেশি যানবাহনও ভাঙচুর করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বুধবার জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো. আবদুল্লাহর এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব তথ্য জানান।
অধিবেশনের সভাপতিত্ব করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে এ ধরনের সহিংস কর্মসূচির মাধ্যমে সারা দেশে ৬০০টির বেশি যানবাহনে ভাঙচুর করেছে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের দোসরার। এর মধ্যে ১৮৪টি যাত্রীবাহী বাস, ৪৮টি ট্রাক, ২৮টি কাভার্ডভ্যান, মালবাহী লরি ও কনটেইনার, ৩টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৪টি প্রাইভেটকার এবং ১১টি পিকআপ ভ্যান রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘একই সময়ে পাঁচটি ট্রেনে (যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেন, ঢাকা কমিউটার ট্রেন, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন, বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন ও টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেন) অগ্নিসংযোগ এবং ১৫টি মোটরসাইকেল, ৩টি লেগুনা, ১টি ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অফিস (মধ্যরামপুরা, ফেনী) ও ১টি অটোরিকশায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘এ সময়ে একটি উচ্চ বিদ্যালয় (চর শাহা উচ্চ বিদ্যালয়, সোনাগাজী, ফেনী), ১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় (ধোলাইপার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চুনারুঘাট, হবিগঞ্জ; পূর্ব চান্দনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জয়দেবপুর গাজীপুর; টি এন টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গাজীপুর সদর; মাস্টারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হাতিবান্ধা, লালমনিরহাট; পড়শীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গফরগাঁও, ময়মনসিংহ; নিশ্চিন্ত পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্দর, চট্টগ্রাম; বাজিতখিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শেরপুর; মৌচাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কালিয়াকৈর, গাজীপুর; হরিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নান্দাইল, ময়মনসিংহ; মনতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ময়মনসিংহ; পুলেরঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাকুন্দিয়া, কিশোরগঞ্জ; দক্ষিণ পাইকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দৌলতপুর, খুলনা); ৪টি বসতঘর, ১টি বৌদ্ধমন্দির (রামু, কক্সবাজার) এবং ১টি নৌকাসহ সর্বমোট ৩২৮টি যানবাহন ও প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করা হয়।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘হরতাল-অবরোধের নামে নাশকতার ঘটনায় সারা দেশে ১৩ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ট্রেনে নাশকতার ঘটনায় নিহত হন ৯ জন। এ ছাড়া বিজিবির ২ সদস্য আহত এবং একটি রিকুইজিশনকৃত যানবাহনের ক্ষতিসাধন হয়। বিভিন্ন জেলায় আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪৫ জন সদস্য আহত হয়েছেন।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিআরটিসি বাস ডিপোর বাস রক্ষা করতে গিয়ে একজন আনসার সদস্য ইট-পাটকেলের আঘাতে আহত হন। দুজন আনসার সদস্য হোসেন আলী ও সুমন আলী বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের হামলায় গুরুতর আহত হন।’
তিনি আরও বলেন, ‘অগ্নিসন্ত্রাস, নাশকতা, অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড প্রভৃতি অপরাধে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য দেশে দক্ষ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিচার ব্যবস্থা ও প্রচলিত আইন রয়েছে। হরতাল ও অবরোধের নামে নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইনে যথাযথ ব্যবস্থাগ্রহণপূর্বক বিভিন্ন আইনি কার্যক্রমও চলমান।’
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, পদ্মাসেতু থেকে গত ১৯ মাসে আয় হয়েছে ১ হাজার ২৭০ কোটি ৮১ লাখ টাকা, যা দৈনিক হিসাবে গড়ে ২ কোটি ১৮ লাখ টাকা।