বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘ঋণের চাপে’ কোটালীপাড়ায় আরেক শিক্ষক দম্পতি নিখোঁজ

  • প্রতিনিধি, কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ)    
  • ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ১০:২৩

কোটালীপাড়া থানার ওসি মুহাম্মদ ফিরোজ আলম বলেন, ‘শিক্ষক দম্পতি নিখোঁজের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় ছয় মাসের ব্যবধানে সমর কান্তি রায় ও তৃপ্তি রানী মন্ডল নামে আরেক শিক্ষক দম্পতির নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে। গত কয়েকদিন ধরে এই শিক্ষক দম্পতির কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

নিখোঁজ ৪৫ বছর বয়সী শিক্ষক সমর কান্তি রায় কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ি ইউনিয়নের রুথিয়ারপাড় গ্রামের বাসিন্দা। তিনি মুকসুদপুর উপজেলার কহলদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের হিন্দু ধর্ম বিষয়ের শিক্ষক।

অপরদিকে সমর কান্তি রায়ের স্ত্রী ৪০ বছর বয়সী তৃপ্তি রানী মন্ডল কোটালীপাড়া উপজেলার ১৮২ নম্বর রুথিয়ারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই শিক্ষক দম্পতি কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ি ইউনিয়নের কালিগঞ্জ বাজারে নিজেদের বাড়িতে বসবাস করতেন।

বিভিন্ন মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে সুদের টাকার চাপ সামলাতে না পেরে এই শিক্ষক দম্পতি নিখোঁজ হতে পারেন বলে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি মনে করছেন।

এর আগে গত বছরের জুন মাসে কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের ১২৭ নম্বর গজালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খোকন চন্দ্র রায় ও তার স্ত্রী একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শিখা রানী রায় নিখোঁজ হন। দীর্ঘ ছয় মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত এই শিক্ষক দম্পতির কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এই দম্পতিও সুদি মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ছিল বলে তাদের সহকর্মীদের কাজ থেকে জানা গেছে।

মঙ্গলবার উপজেলার কালিগঞ্জ বাজারে শিক্ষক সমর কান্দি রায়ের বাড়িতে গিয়ে তার বসতঘরটি তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া গেছে। অপরদিকে তার বাড়ির পাকা ভবনটিতে ভাড়াটিয়া তিনটি পরিবারকে পাওয়া যায়।

ভাড়াটিয়া অলক মল্লিক বলেন, ‘আমি কালিগঞ্জ বাজারে কাপড়ের ব্যবসা করি। এখানে ব্যবসা করার কারণে বাজারের পাশে শিক্ষক সমর কান্তি রায়ের বাড়িতে আমি পরিবার নিয়ে ভাড়ায় থাকি। সে আমার কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা নিয়েছে। বিনিময়ে আমার পরিবার নিয়ে এখানে থাকতে দিয়েছে। শুনেছি, সমর কান্তি রায় পিঞ্জুরী গ্রামের বাদল সমাদ্দারসহ অনেক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সুদে টাকা এনেছিল। এই সুদি মহাজনদের চাপে শিক্ষক সমর কান্তি রায় ও তার পরিবার নিখোঁজ থাকতে পারে।’

অপর ভাড়াটিয়া স্বপন কুমার বাড়ৈর স্ত্রী প্রভা রায় বলেন, ‘আমার স্বামী একজন স্কুল শিক্ষক। আমার স্বামীর স্কুলটি কাছাকাছি হওয়ার কারণে আমরা পরিবার নিয়ে এখানে ভাড়া থাকি। বাড়ি ভাড়ার অগ্রীম হিসেবে সমর কান্তি রায় আমার স্বামীর কাজ থেকে লিখিত দিয়ে দেড় লাখ টাকা নিয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে আমরা তার সন্ধান পাচ্ছি না। এখন বাদল সমাদ্দার নামে এক ব্যক্তি এসে এই বাড়িটি তার বলে দাবি করছে। সে আমাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে।’

কালিগঞ্জ বাজারের ঔষধ ব্যবসায়ী বিধান চন্দ্র বালা বলেন, ‘শিক্ষক সমর কান্তি রায় আমার কাছ থেকে সুদে ২ লাখ টাকা নিয়ে ছিল। হঠাৎ কয়েকদিন ধরে সে নিখোঁজ রয়েছে বলে জানতে পারলাম। শুনেছি সে নাকি অনেক লোকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে।’

উপজেলার পিঞ্জুরী ইউনিয়নের পিঞ্জুরী গ্রামের সুদি মহাজন বাদল সমাদ্দার বলেন, ‘সমর কান্তি রায়ের সঙ্গে আমার কোনো সুদের ব্যবসা ছিল না, তবে তার সঙ্গে আমার চেনাজানা ছিল। সে কয়েকদিন আগে তার ১৩ শতাংশ জায়গাসহ ১ টিনের ঘর ও ১টি পাকা ভবন ৯ লাখ টাকায় আমার কাছে বিক্রি করেছে। সমর কান্তি রায় এখন কোথায় আছে আমার জানা নেই।’

১৮২ নম্বর রুথিয়ারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশুতোষ রায় বলেন, ‘তৃপ্তি রানী রায় আমার বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। গত জানুয়ারি মাসের ২৪ এবং ২৫ তারিখ দুই দিনের ছুটি নিয়ে ছিলেন। এরপর থেকে তিনি আর স্কুলে আসেননি।’

মুকসুদপুর উপজেলার কহলদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শরীরচর্চা শিক্ষক শাহ মো. ইলিয়াছ বলেন, ‘সমর কান্তি রায় আমাদের বিদ্যালয়ের হিন্দু ধর্ম বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন। ছুটি না নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে তিনি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন। সমর কান্তি রায়ের মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়ার পর আমরা তার বাড়িতে লোক পাঠাই। এরপর আমরা জানতে পারি তিনি পরিবারসহ নিখোঁজ রয়েছেন।’

কোটালীপাড়া উপজেলার ৭৯ নম্বর পূর্ণবর্তী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, ‘বর্তমানে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে অনেক শিক্ষককে মহাজনদের কাছ থেকে সুদে টাকা নিতে হয়। এরপর অনেক শিক্ষক এই টাকা পরিশোধ করতে না পেরে নিখোঁজ থাকেন বা আত্মগোপনে চলে যান।

‘সরকার যদি বেতন বৃদ্ধিসহ সহজ শর্তে শিক্ষকদের সুদমুক্ত ঋণ দেয় তাহলে কোনো শিক্ষককে সুদি মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে বিপদে পড়তে হয় না। তাই আমি শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধিসহ সহজ শর্তে সুদমুক্ত ঋণ দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

উপজেলা শিক্ষা অফিসার আমজাদ হোসেন বলেন, ‘১৮২ নম্বর রুথিয়ারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক তৃপ্তি রানী মন্ডল গত কয়েক দিন ধরে বিদ্যালয়ের অনুপস্থিত রয়েছেন বলে আমি জানতে পেরেছি। বিষয়টি আমি লিখিতভাবে আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।’

কোটালীপাড়া থানার ওসি মুহাম্মদ ফিরোজ আলম বলেন, ‘শিক্ষক দম্পতি নিখোঁজের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর