মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের জেরে চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে নতুন করে কোনো রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নবনিযুক্ত মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।
তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি বিজিবির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা নতুন করে আর কোনো রোহিঙ্গা নাগরিককে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেব না।
মঙ্গলবার দুপুরে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় বিজিবির একটি সুসজ্জিত দল গার্ড অফ অনার প্রদান করে। এরপর ফাতেহা শরীফ পাঠ ও বিশেষ মোনাজাত করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের রূহের মাগফিরাত কামনা করা হয় এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের দীর্ঘায়ু ও কল্যাণ কামনা করে দোয়া করা হয়।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘গতকাল দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আমি সবচেয়ে বেশি এই সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে ইনভলভ আছি। বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) আমি নিজে সরেজমিনে সীমান্ত পরিদর্শনে যাচ্ছি। আমরা ধৈর্য ধারণ করে, মানবিক দিক বিবেচনা করে এবং আন্তর্জাতিকভাবে সুসম্পর্ক বজায় রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করছি।
‘আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সেরকমই। গতকাল প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে কথাও বলেছেন। তিনি ধৈর্যধারণের নির্দেশনা দিয়েছেন।’
সোমবার রাত পর্যন্ত ১১৫ জন বিজিপি সদস্য বিজিবির কাছে আত্মসমর্পণ করে আশ্রয় নিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার সকালে আরও ১১৪ জন যুক্ত হয়েছে। দুপুর পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিল ২২৯। দুপুরের পর বিজিপিসহ দেশটির অন্যান্য বাহিনীর আরও ৩৫ জন যোগ হয়ে ২৬৪ মোট জন আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের আমরা থাকা ও খাবারের ব্যবস্থা করেছি।
‘তাদের মধ্যে ১৫ জন আহত ছিলেন, যার ৮ জনের অবস্থা ছিল গুরুতর। এই ৮ জনের মধ্যে চারজনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে বিজিবির ব্যবস্থাপনায় ভর্তি করা হয়েছে। বাকি চারজনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বিজিবির ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
মঙ্গলবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বিজিবির নবনিযুক্ত মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। ছবি: ফোকাস বাংলা
সীমান্তে উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে কাজ চলছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। আশ্রিতদের প্রত্যাবর্তন বা ফেরানোর বিষয়ে কীভাবে সমাধান করা যায় তা নিয়ে কাজ চলছে।
‘মিয়ানমার এ ব্যাপারে সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছে। তারাও প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে নোট নিয়েছে। আশা করি, খুব শিগগিরই তাদের প্রত্যাবর্তন করানো হবে।
তিনি বলেন, ‘একইসঙ্গে দুই দেশের দুই সীমান্ত বাহিনীর মধ্যে যোগাযোগ হচ্ছে। সীমান্তের পরিস্থিতি আপনারা জানেন। মিয়ানমারে গোলাগুলির মধ্যে কিছু শেল এসে বাংলাদেশে পড়ছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে গতকাল এক রোহিঙ্গা নাগরিক ও একজন বাংলাদেশি নারী মারা গেছেন। এই মৃত্যু কোনোভাবেই কাম্য নয়।
‘আমরা প্রোটেস্ট নোট দিয়েছি। আমরা বারবার বলেছি, আজকেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি বড় মিটিং হচ্ছে। আর আমি আগামীকাল সরেজমিন সীমান্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে যাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকে মিয়ানমারের ডিএ (ডিফেন্স অ্যাটাচ) আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। সবদিক অ্যাঙ্গেজ করে কীভাবে এর আশু সমাধান করা যায়, সে চেষ্টা আমরা করছি।’
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘আজকে ৬৫ জন রোহিঙ্গা বোটের মাধ্যমে নদীপথে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের প্রবেশের চেষ্টা করে। টেকনাফে বিজিবি সদস্যরা তাদের প্রতিহত করেছে। তাদের পুশব্যাক করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
‘আমরা নতুন করে কোনো রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আর প্রবেশ করতে দেব না। সীমান্তের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত বিজিবির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’
বিজিবি মহাপরিচালকের শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় বিজিবি সদর দপ্তর এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, যশোর রিজিয়ন কমান্ডার, গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, মঙ্গলবার সকালে নবনিযুক্ত বিজিবি মহাপরিচালক পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দপ্তরের ‘সীমান্ত গৌরব’-এ মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে তিনি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।