বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নবজাতকের মৃত্যুতে হাসপাতালে হট্টগোল, ভিডিও করায় সাংবাদিককে মারধর

  • প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ   
  • ৩১ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০৪

রূপগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক খলিল সিকদার বলেন, ‘ইউএস বাংলার বিরুদ্ধে প্রায়ই মানুষ মেরে ফেলার অভিযোগ আসে। মানুষের মৃত্যু হলে সাংবাদিক ঘটনা জানতে সেখানে যেতেই পারেন। ঘটনার ভিডিও করলে সাংবাদিককে এভাবে কেন মারা হবে?’

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ইউএস বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া এক প্রসুতির নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। ভুল চিকিৎসার কারণে ওই শিশুর মৃত্যু হয়েছে দাবি করে শিশুটির স্বজনরা গিয়ে হাসপাতালে হট্টগোল করে। এ সময় হাসপাতালের কর্মচারীদের সঙ্গে রোগীর পরিবারের মধ্যে বাগবিতণ্ডা ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন এক সাংবাদিক। তিনিসহ আরও কয়েকজন হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধরের শিকার হন।

মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় ইউএস বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভেতরে এ ঘটনা ঘটে।

পরে সাংবাদিক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে ও জড়িতদের বিরুদ্ধে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নেয়া না হলে হাসপাতালের বাইরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন রূপগঞ্জের সাংবাদিকরা।

রোগীর পরিবার জানায়, অন্তঃসত্ত্বা মাহফুজা আক্তার নামে এক গৃহবধুকে গত বুধবার ইউএস বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায় পরিবার। পরদিন বৃহস্পতিবার রাতে ওই নারীর প্রসব বেদন উঠলে ডা. সাবিহা শিমুল নামের এক চিকিৎসক তাকে ইনজেকশন দেন। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ওই হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে রোগীর পরিবারকে জানিয়ে দেয়া হয়। পরে তাকে ঢাকার মগবাজারে অবস্থিত আদ্ব-দীন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ওই নারীর মৃত সন্তানের জন্ম দেন।

আদ-দ্বীন হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক নবজাতকের পিতাকে জানান, প্রসুতিকে হাসপাতালে আনার আগেই নবজাতকের মৃত্যু হয়।

নবজাতকের পরিবার আরও জানায়, মঙ্গলবার দুপুরে প্রসুতির স্বজনরা তাকে ওই হাসপাতালে নিয়ে যান। তখন শিশুটির পরিবারের প্রতি শোক প্রকাশ না করে উল্টো বিল দাবি করে হাসপাতালের কর্মকর্তারা। এক পর্যায়ে শিশুটির স্বজনদের সঙ্গে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। উভয়পক্ষের মধ্যে হট্টোগোলের এক পর্যায়ে তারা একে অপরের প্রতি চাড়াও হয়।

হাসপাতালে হট্টোগোলের খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান স্থানীয় কয়েকজন সংবাদকর্মী। তাদের মধ্যে দৈনিক কালবেলার রূপগঞ্জ প্রতিনিধির হিসেবে কর্মরত জাহাঙ্গীর মাহমুদ ঘটনার ভিডিও ধারণ করতে গেলে তাকে হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মারধর করেন।

মাহফুজার স্বামী শাহীন মিয়ার অভিযোগ, ‘হাসপাতালের অবহেলা ও গাফলতির কারণে আমার সন্তান মারা গেছে। এমনকি আমাদের প্রতি শোক প্রকাশ না করে গলা কাটা বিল দাবি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রতিবাদ করায় তাদের মারধর করা হয়।’

হাসপাতালের লোকজনের হামলায় তার কয়েকজন স্বজন আহত হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

আহত সাংবাদিক জাহাঙ্গীর মাহমুদ বলেন, ‘স্থানীয় একজনের মাধ্যমে হাসপাতালে হট্টোগোলের খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যাই। আমি ছাড়াও তিন-চারজন সাংবাদিক সেখানে আসেন। ভেতরে গিয়ে দেখি, একজন নারীকে কয়েকজন লোক টানা হেচড়া করছে। তখনই মোবাইল বের করে ভিডিও ধারণ করতে যাই। এ সময় হাতে মোবাইল দেখে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এগিয়ে এসে ভিডিও করার অপরাধে আমাকে লাঞ্ছিত করে। তারা আমার শরীরে কিল-ঘুষি ও মুখে চড়-থাপ্পড় মারে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগের প্রধান সারোয়ার বলেন, ‘মারা যাওয়ার শিশুর স্বজনরা এসে ডাক্তারের রুমে ঢুকতে চাইলে কর্মচারীরা বাধা দেন। এ সময় সেখানে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।’

তবে সাংবাদিককে কারা মেরেছে তা জানা নেই বলে দাবি করেন তিনি। বরং হাসপাতাল ভাঙচুর করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

হট্টোগোলের খবর পেয়ে হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয় বলে জানান রূপগঞ্জ থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা।

তিনি বলেন, ‘মারা যাওয়া শিশুর পরিবারসহ সাংবাদিকরা থানায় এসেছিলেন। তারা অভিযোগ করে গেছেন। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রীয়াধীন।’

এদিকে, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সাংবাদিক লাঞ্ছনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না হলে ওই হাসপাতালের বাইরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রূপগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক খলিল সিকদার।

তিনি বলেন, ‘ইউএস বাংলার বিরুদ্ধে প্রায়ই মানুষ মেরে ফেলার খবর আসে। মানুষের মৃত্যু হলে সাংবাদিক ঘটনা জানতে সেখানে যেতেই পারেন। ঘটনার ভিডিও করলে সাংবাদিককে এভাবে কেন মারা হবে? হাসপাতালের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী সাংবাদিক লাঞ্ছনার সঙ্গে জড়িত, তাদের শাস্তি চাই।’

এ বিভাগের আরো খবর