নাশকতার ঘটনা এড়াতে এবার ট্রেনে বসানো হচ্ছে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা। ইতোমধ্যে ট্রেনে সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতে ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে বাকি ট্রেনগুলোও এর আওতায় আনা হবে।
হরতাল-অবরোধ চলাকালে ট্রেনে বেশকিছু নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। এতে দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন অন্তত ৮ জন। আহত হয়েছেন ২০ জনেরও বেশি। লাইনচ্যুত হয়েছে কয়েকটি ট্রেনের বগি। এ অবস্থায় ভবিষ্যতে ট্রেনে নাশকতা এড়াতে রেল পুলিশ সিসি ক্যামেরা লাগানোর এই উদ্যোগ নিয়েছে।
রেলওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি ট্রেনের সামনে ও পেছনে এবং গুরুত্বপূর্ণ সব স্থানে সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। যাত্রীদের কাছে যেসব ট্রেনের চাহিদা বেশি সেসব আন্তঃনগর ট্রেনে প্রথমে সিসি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ১৯ ডিসেম্বর ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে মা ও শিশু সন্তানসহ চারজন জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা যান। আহন হন ৮ জন। এরপর ৫ জানুয়ারি রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে দগ্ধ হয়ে চার যাত্রীর মৃত্যু হয়।
এর আগে ১৬ নভেম্বর রাতে টাঙ্গাইল স্টেশনে টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের কোচে আগুন দেয়া হয়। ওই ঘটনায় ট্রেনটির দুটি কোচ পুড়ে যায়। ১৯ নভেম্বর জামালপুরের সরিষাবাড়ী স্টেশনে যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেয়ার ঘটনায় দুটি কোচ পুড়ে যায়।
২২ নভেম্বর রাতে সিলেট রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি কোচে আগুন দেয়া হয়। ১৩ ডিসেম্বর রেলওয়ের ভাওয়াল গাজীপুর এবং রাজেন্দ্রপুর সেকশনে ২০ ফুট রেললাইন কেটে ফেলা হয়। কেটে ফেলা ওই রেললাইনে দুর্ঘটনায় পড়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন। ট্রেনের ইঞ্জিন এবং ছয়টি কোচ লাইন থেকে ছিটকে পড়লে একজন নিহত হন। আহত হন অনেকে।
একের পর এক এসব ঘটনায় নড়েচড়ে বসে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ট্রেনে সিসি ক্যামেরা লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, ‘বিরোধী দলের কর্মসূচি ঘিরে ট্রেনকে টার্গেট করে নাশকতার বেশকিছু ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন মারা গেছেন। ট্রেনগুলোরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
‘ভবিষ্যতে নাশকতা এড়াতে রেলওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে ট্রেনে সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজ চলছে। প্রথমে কয়েকটি ট্রেনে ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব ট্রেন এর আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, ‘ট্রেনে সিসি ক্যামেরা যুক্ত হওয়ার সুবাদে নাশকতা ছাড়াও পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় জড়িতদেরকেও চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। প্রথম পর্যায়ে সিসি টিভি মনিটরিং করা হবে রেলওয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তূর্ণা নিশিথা, মহানগর প্রভাতী ও সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনে সিসি ক্যামেরা লাগানো সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিটি ট্রেনে ১২টি করে ক্যামেরা লাগানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ওসি এস এম শহিদুল ইসলাম বলেন, ’১০ জানুয়ারি ট্রেনে সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে। কয়েকটি আন্তঃনগর ট্রেনে ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। প্রতিটি ট্রেনে ১২টি করে ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি ট্রেনগুলোতেও এই ক্যামেরা লাগানো হবে।’