বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘শীতের রাতে চুঙ্গাপুড়ার দৃশ্য আর দেখা যায় না’

ঢলুবাঁশ নিয়ে কমলগঞ্জের মুন্সিবাজারে যাওয়া রসময় মল্লিক বলেন, ‘আমি তিন হাজার ঢলুবাঁশ নিয়ে বাজারে আসছি। আগে অনেক বাঁশ আনতাম এখন তেমন চলে না। মানুষ আগের মতো নেয়ও না। শীতের রাতে চুঙ্গাপুড়ার দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না।’

মৌলভীবাজার ও সিলেটের প্রাচীন ঐতিহ্য চুঙ্গাপুড়া পিঠা এখন খুব একটা দেখা যায় না। আগের মতো এখন আর গ্রামীণ এলাকার বাড়িতে বাড়িতে চুঙ্গাপুড়ার আয়োজন চোখে পড়ে না।

বাজারে মাছের মেলা কিংবা নদীর বড় রুই, কাতলা, চিতল, বোয়াল, পাবদা, মাগুর মাছ দিয়ে বানানো চুঙ্গাপুড়া পিঠা খাওয়া ছিল মৌলভীবাজার ও সিলেটের একটি অন্যতম ঐতিহ্য।

স্থানীয়রা জানান, চুঙ্গাপিঠা তৈরির প্রধান উপকরণ ঢলুবাঁশ ও বিন্নি ধানের চাল। ঢলুবাঁশ ছাড়া চুঙ্গাপিঠা তৈরি করা যায় না কারণ ঢলুবাঁশে এক ধরনের তৈলাক্ত রাসায়নিক পদার্থ আছে, যা আগুনে বাঁশের চুঙ্গাকে না পোড়াতে সাহায্য করে। ঢলুবাঁশে রস থাকায় আগুনে না পুড়ে ভেতরের পিঠা আগুনের তাপে সিদ্ধ হয়।

কোনো কোনো জায়গায় চুঙ্গার ভেতরে বিন্নি চাল, দুধ, চিনি, নারিকেল ও চালের গুড়া দিয়ে পিঠা তৈরি করা হয়। পিঠা তৈরি হয়ে গেলে মোমবাতির মতো চুঙ্গা থেকে পিঠা আলাদা হয়ে যায়।

ঢলুবাঁশ সরবরাহ এখন অনেক কমে গেছে। অনেক স্থানে এখন আর আগের মতো চাষাবাদ ও হয় না।

মৌলভীবাজারের বড়লেখার পাথরিয়া পাহাড়, জুড়ীর লাঠিটিলা, রাজনগর, কমলগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলার টিলায় টিলায় ও চা-বাগানের টিলায়, কুলাউড়ার গাজীপুরের পাহাড় ও জুড়ী উপজেলার চুঙ্গাবাড়িতে প্রচুর ঢলুবাঁশ পাওয়া যেতো বলে জানান স্থানীয়রা। তন্মধ্যে চুঙ্গাবাড়ি ও একসময় প্রসিদ্ধ ছিল ঢলুবাঁশের জন্যে।

ঢলুবাঁশ নিয়ে কমলগঞ্জের মুন্সিবাজারে যাওয়া রসময় মল্লিক বলেন, ‘আমি তিন হাজার ঢলুবাঁশ নিয়ে বাজারে আসছি। আগে অনেক বাঁশ আনতাম এখন তেমন চলে না। মানুষ আগের মতো নেয়ও না। শীতের রাতে চুঙ্গাপুড়ার দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না।’

অনেক আগেই বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাওয়ায় হারিয়ে গেছে ঢলুবাঁশ, তবে জেলার কিছু কিছু টিলায় এখন ও ঢলুবাঁশ পাওয়া যায়।

ব্যবসায়ীরা জানান, তারা দূরবর্তী এলাকা থেকে ঢলুবাঁশ ক্রয় করে নিয়ে যান নিজ নিজ উপজেলার বাজার সমূহে বিক্রির আশায়। ঢলুবাঁশের চুঙ্গা দিয়ে ভিন্ন স্বাদের পিঠা তৈরি করা করা হয়ে থাকে। চুঙ্গাপিঠা পোড়াতে আবার প্রচুর পরিমাণে খেঁড় (নেরা) দরকার পড়ে। খড়ও এখন সময়ের প্রয়োজনে দাম একটু বেশি।

একটা সময় ছিল শীতের মৌসুমে গ্রামীণ জনপদে প্রায়ই বাজারে মাছের মেলা বসত, বিশেষ করে সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম উৎসব পৌষ সংক্রান্তির সময় এ বাঁশগুলো কমলগঞ্জ উপজেলার ভানুগাছ, আদমপুর, মুন্সিবাজার বিভিন্ন হাটবাজারে দেখা গেছে।

কমলগঞ্জ উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর ঢলুবাঁশ পাওয়া যেতো। তন্মধ্যে চুঙ্গাবাড়িও একসময় প্রসিদ্ধ ছিল ঢলুবাঁশের জন্যে। বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাওয়ায় হারিয়ে গেছে ঢলুবাঁশ, তবে জেলার কিছু কিছু টিলায় এখনও ঢলুবাঁশ পাওয়া যায়।

পিঠা তৈরির জন্য ঢলুবাঁশ নিতে আসা সাংবাদিক সাজিদুর রহমান সাজু বলেন, ‘আসলে সব সময় তো এই জিনিসগুলো পাওয়া যায় না। পৌষ সংক্রান্তির জন্য এগুলো খুব কম পরিমাণ বাজারে উঠেছে। আজ থেকে ১০ থেকে ১৫ বছর আগে প্রচুর দেখা যেতো। এখন কালের পরিবর্তনে হারিয়ে বসেছে।

‘বাজার আসর সময় পরিবারের সদস্যরা বলল পিঠা তৈরি করার জন্য এই ঢলুবাঁশ পেলে নিয়ে যেতে, তাই কয়েকটা বাজারগুলো ঘুরে দেখলাম পাইনি এখন মুন্সিবাজারে স্বল্প পরিমাণ নিয়ে এসেছে এখন বিক্রেতা আমি সেখান থেকে নিয়ে যাচ্ছি বাসায়।’

জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার লেখক-গবেষক ও উন্নয়ন চিন্তক আহমদ সিরাজ জানান, ‘১০ থেকে ১৫ বছর আগেও কম-বেশি সবার বাড়িতে ঢলুবাঁশ ছিল। এখন সেই বাঁশ আগের মতো নেই। এখন তো এ বাঁশ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। একসময় এই ঢলুবাঁশ দিয়ে চুঙ্গাপুড়ার ধুম লেগেই থাকত।’

এ বিভাগের আরো খবর