চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয়নি মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘খুনি, চক্রান্তকারী, যুদ্ধাপরাধী যাদের বিচার করেছি তাদের একটা চক্রান্ত আছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটা চক্রান্ত আছে। নির্বাচনের পর তাড়াতাড়ি কেন সরকার গঠন করা হলো তা নিয়েও কথা হচ্ছে।
শনিবার বিকেলে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে দেশটার প্রতি অনেকেরই নজর আছে। কাজেই এখানে বসে কেউ অন্য দেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাবে, এখান থেকে কোনো দেশে আক্রমণ করবে সেটা তো আমি মেনে নেব না।
‘আমাদের স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ। আমারা স্বাধীনভাবেই চলবো। আমাদের দেশ ছোট কিন্তু জনসংখ্যা আছে। জনগণই আমার সবচেয়ে বড় শক্তি। আমি নির্বাচনটা উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম, যাতে যে কেউ দাঁড়াতে পারে। উদ্দেশ্য ছিলো আমার যাতে ভোট বেশি আসে। আর প্রতিযোগিতাটা হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সতর্কতার সঙ্গে চলতে হবে। আমরা নতুন কেবিনেট করেছি। সেটাও তাদের লাগে। শুনলাম বলছে- এতো তাড়াতাড়ি কেন সরকার করলো। আমাদের তো সব তৈরি আছে, আমরা করবো না কেন?
‘আমরা সিদ্ধান্ত নিতে কখনও পিছপা হই না। জানি ইলেকশন হবে। ইলেকশনে জিতলে কী করবো এটা তো আগেই তৈরি করা থাকবে। তাহলে সময় লাগবে কেন? আমি সময় নষ্ট করবো কেন? আমার কাছে একটা দিনেরও মূল্য আছে। আমাদের তো উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখতে হবে।’
খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘তিনি বলেছিলেন আমরা নাকি একশ’ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবো না। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা কখনও বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারবে না।
‘আসলে আল্লাহ কাকে যে কখন কী করে তা ঠিক করে রেখে দেয়। তার অভিশাপ আমার জন্য আশীর্বাদ হয়ে যায়, আর তার জন্য প্রযোজ্য হয়ে যায়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি যে ইলেকশন করবে না সেটা আমরা জানি। ওদের নেতা কোথায়? যারা নির্বাচন করে তাদের সামনে একজন থাকে প্রধান হয়ে, যে দেশ চালাবে। ওদের কারও তো সে যোগ্যতা নেই।
‘একজন তো দুর্নীতিবাজ। দুর্নীতি আর এতিমের অর্থ আত্মসাৎ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। আরেক জন গ্রেনেড হামলা-মামলা, অস্ত্র চোরাকারবারি, মানিলন্ডারিংয়ে জড়িত। এটা কিন্তু আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই খুঁজে বের করেছে। তারা সাক্ষ্য দিয়ে গেছে। তাদের সাক্ষ্যেই তার সাজাও হয়েছে। তবে এদের লজ্জা নেই। এরা একজনকে এরকম করবে, আবার কখন কাকে পছন্দ করে নিয়ে আসে তার ঠিক নেই।’
আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, বিএনপির যেহেতু সামনে নেতৃত্ব নেই তাই তারা ইলেকশন বানচাল করতে চেয়েছিলো। আগুন দিয়ে পোড়ানো, সবচেয়ে জঘন্য কাজ এই যে রেলে আগুন দিয়ে মা আর শিশু যেভাবে পুড়ে কঙ্কাল হয়ে গেলো, যাত্রীসহ বাসে আগুন দেয়া…। ২০১৩ সালেও এই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, ১৪-তে করলো, ১৫-তে করলো। এবার আবার শুরু করলো।
‘২৮ অক্টোবর পুলিশকে পিটিয়ে মারা, সাংবাদিকদের ওপর হামলা, প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা, জাজেজ কোয়ার্টারে হামলা- জঘন্যতম কাজগুলো করে তারা নিজেদের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।’
তিনি বলেন, ‘যতদিন তারা শান্তিপূর্ণ মিছিল-মিটিং করেছে আমরা বাধা দেইনি। তখন তাদের অবস্থা একটু ভাল ছিলো। কিন্তু ২৮ অক্টোবরের ঘটনার পর তাদের সন্ত্রাসী চেহারাটা বেরিয়ে আসে। তারা রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সে আক্রমণ করলো। রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ঢুকে পুলিশ হাসপাতালে আক্রমণ করলো।
‘হাসপাতালে কি কেউ আক্রমণ করে? ওই ইসরায়েলিরা করছে প্যালেস্টাইনে। আর তারেক জিয়ার হুকুমে বিএনপি-জামায়াত করছে আমাদের দেশের মানুষের ওপর। হাসপাতাল আর অ্যাম্বুলেন্সে আক্রমণ করে তারা দেখালো যে তারা ওদের প্রেতাত্মা বা ওদেরই লোক।’
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, ‘দেখলাম তাদের অফিসের তালা ভাঙছে। সেই রবীন্দ্রনাথের গানটাই মনে পড়ে- ভেঙে মোর ঘরের চাবি, নিয়ে যাবি কে আমারে। আমি ঠিক জানি না রিজভী সাহেব এই গান গাইতে গাইতে তালা ভাঙছিলেন কিনা। আর তালা ভেঙে তারা কাকে বের করলো তা-ও জানি না।
‘বলে যে চাবি খুঁজে পাচ্ছে না। তাহলে তালাটা লাগালো কে? এই তালায় কোনো সিলগালা ছিলো না, কাজেই এটা পুলিশ লাগায়নি। একটা ভালো তালা তারা হাতুড়ি দিয়ে ভাঙছে। এটা একটা নাটক। এই নাটক করে করে মানুষকে কিছুদিনের জন্য ধোঁকা দেয়া যায়। যারা মদদদাতা তারা আবার খুশি হয়ে কাছে টেনে নেয়।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এখন আমাদের সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে এই উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখা; জিনিসের দাম যেটা বেড়ে গেছে সেটা নিয়ন্ত্রণ করা। আমি গ্রাম-গঞ্জে খুব অসুবিধা দেখি না। কিন্তু যারা নির্দিষ্ট আয়ের মধ্যে তাদের একটু সমস্যা।
‘ঢাকার শহরে একটু বেশি। সেখানে জীবনযাত্রার ব্যয় সবসময় একটু বেশি। বাজারে কিন্তু জিনিসের অভাব নেই। খাদ্যের কোনো ঘাটতি নাই। কিন্তু মনে হয়, কেউ জিনিসের দাম বাড়িয়ে মানুষকে হয়রানি করে। সে ক্ষেত্রেও আমাদের যথাযথভাবে নজরদারি বাড়াতে হবে। আর আমাদের উৎপাদনটা বাড়াতে হবে।’