চাকরি সূত্রে দুজনের পরিচয় ও সখ্য। পরে নিজেদের মধ্যে আর্থিক লেনদেন হয়। একপর্যায়ে পাওনা টাকা ফেরত চাওয়ার জেরে বিরোধ ও বাগবিতণ্ডা। অবশেষে পরিকল্পনা অনুযায়ী ফারুক হোসেনকে হত্যা করা হয়।
গত মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের এশিয়ান হাইওয়ের পাশ থেকে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির চোখ উপড়ানো মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতের পরিচয় শনাক্ত করে এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর উত্তরা, গাজীপুরের টঙ্গী ও লক্ষ্মীপুরের রায়পুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারীসহ জড়িত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।তারা হলেন মো. নিজাম উদ্দিন (৩৬), মো. সোহাগ (৩৮), জহিরুল ইসলাম (৪৮), রনি হোসেন (২৩) ও বাদশা (২৩)।
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার সকালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে এশিয়ান হাইওয়ের পাশে একটি চোখ উপড়ানো অজ্ঞাত পরিচয় মরদেহ দেখে স্থানীয়রা নিকটস্থ র্যাব ক্যাম্পে জনান। র্যাব-১ ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রাথমিকভাবে মৃতদেহের সঙ্গে থাকা মানিব্যাগে বিভিন্ন নথিপত্র এবং ওআইভিএস ডিভাইসের মাধ্যমে নাম-পরিচয় শনাক্ত করে। নিশ্চিত হয় নিহত ব্যক্তির নাম ফারুক হোসেন, বাড়ি চাঁদপুর। পরে পরিবার মরদেহ শনাক্ত করে। ওই দিন তার মা রূপগঞ্জ থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, এই ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারির বাড়ায় র্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় মূল পরিকল্পনাকারী মো. নিজাম উদ্দিনসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত আলামত। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা হত্যাকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে।
র্যাব মুখপাত্র বলেন, ফারুক হোসেন স্ত্রী-সন্তানসহ তুরাগের বাউনিয়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। তিনি গাজীপুরের টঙ্গী চেরাগআলী এলাকায় ঢাকা এক্সপ্রেস পরিবহনের ‘টিকিট কাউন্টার ম্যান’ হিসেবে বেশ কিছুদিন কাজ করতেন এবং নিজাম উদ্দিন কাউন্টার ম্যানেজার হিসেবে কাজ করায় ফারুকের সঙ্গে তার পরিচয় ও সম্পর্ক তৈরি হয়। পরবর্তীতে তার সঙ্গে ভিকটিম ফারুকের বিভিন্ন সময় আর্থিক লেনদেন হয়। একপর্যায়ে এর জেরে সম্পর্কের অবনতি হয় এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের শুরু হয়।
গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, গত ৮ জানুয়ারি নিজাম উদ্দিনের কাছে ভিকটিম ফারুক পাওনা টাকা চাইলে তার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এতে গ্রেপ্তার নিজাম ফারুকের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য সোহাগ, জহিরুল, রনি ও বাদশাসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৮ জানুয়ারি রাতে নিজাম মোবাইলে ফোন করে ফারুককে টাকা নেওয়ার জন্য কাউন্টারে আসতে বলেন। ফারুক টাকা নিতে কাউন্টারে গেলে নিজামের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে সোহাগ, জহিরুল, রনি ও বাদশা তাকে মারধর করেন।
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, একপর্যায়ে নিজামের নির্দেশে সোহাগ, জহিরুল, রনি ও বাদশা ফারুককে ঢাকা এক্সপ্রেসের একটি খালি বাসে উঠিয়ে নিয়ে আবারও ফারুকের শরীরের বিভিন্ন স্থানে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে গুরুতর জখম করে। এরপর সোহাগ ও রনি ফারুকের হাত-পা চেপে ধরে এবং বাদশা বাসে থাকা টুলবক্স থেকে স্ক্রু ড্রাইভার নিয়ে ভিকটিম ফারুকের বাম চোখ উপড়ে ফেলে।
তিনি আরও বলেন, ভিকটিম ফারুকের মৃত্যু নিশ্চিত হলে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হত্যার ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে মরদেহটি বাসে করে রূপগঞ্জের এশিয়ান হাইওয়ে পাশে রঘুরামপুর এলাকার নির্জন রাস্তার পাশে ফেলে দেয়। পরে বাসটি নিয়ে লক্ষ্মীপুরে পালিয়ে যায় তারা। পরবর্তীতে জড়িতরা গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যায়।