দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মো. মোসলেম উদ্দিনের নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন তারই মেয়ে সেলিমা বেগম সালমা।
একই আসনে বাবা ও মেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় আলোচনা-সমালোচনা চলছে এ নিয়ে। বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
আওয়ামী লীগের মোসলেম উদ্দিন ১৯৮৬, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর আগে ১৯৭০ সালে তিনি প্রদেশিক পরিষদের সদস্য হিসেবেও নির্বাচিত হয়েছিলেন।
তার মেয়ে সেলিমা বেগম সালমা নব্বইয়ের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামছুন নাহার হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
এ আসনে এবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন বর্তমান সংসদ সদস্য প্রবীণ রাজনীতিবিদ মো. মোসলেম উদ্দিন, তার ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইমদাদুল হক সেলিম এবং মেয়ে সেলিমা বেগম সালমা।
তবে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পান মোসলেম উদ্দিন। ছেলে বাবার পক্ষে অবস্থান নিলেও মেয়ে সেলিমা বেগম সালমা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিযোগিতায় নামেন।উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোসলেম উদ্দিন ও তার মেয়ে আওয়ামী লীগ নেত্রী সেলিমা বেগম সালমা ছাড়া আরও চার প্রার্থী আসনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তারা হলেন সদ্য পদত্যাগী উপজেলার পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. আব্দুল মালেক সরকার (ট্রাক), জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহফুজুর রহমান বাবুল (লাঙ্গল), জাতীয় পার্টি নেতা (রওশন এরশাদপন্থি) ডা. খন্দকার রফিকুল ইসলাম (কেটলি), কৃষক শ্রমিক জনতালীগের প্রিন্সিপাল আব্দুর রশিদ (গামছা)।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, চার দশক ধরে এখানে মোসলেম উদ্দিন প্রায় এককভাবেই রাজনীতির মাঠ সামলেছেন। তার পরিবারের প্রভাব রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এ ধরনের পরিস্থিতিতে একটি পক্ষ নিজেদের বঞ্চিত মনে করছেন। এবার এখানে ভোটের অংক অনেক জটিল। শেষ পর্যন্ত কী হবে সেটা এখনেই বলা যাচ্ছে না।
তারা বলছেন,গৃহবিবাদের জেরে মোসলেমের বড় মেয়ে সেলিমা বেগম সালমা রাজনীতির মাঠে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক সরকার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন। মোসলেম উদ্দিন দলীয় ও পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে অনেকটা বেকায়দার মধ্যে রয়েছেন। আওয়ামী লীগের তিন নেতা মাঠে থাকায় নৌকার ভোট স্বাভাবিকভাবেই ভাগ হয়ে যাবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ফুলবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নির্বাচনে বাবার সঙ্গে মেয়ের প্রতিযোগিতার বিষয়টি সাধারণ ভোটাররা খুব ভালোভাবে নেননি। তবে ফুলবাড়িয়াতে আওয়ামী লীগের নিজস্ব একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে। যার কারণে এখানে নৌকাকে হারানো যে কোনো প্রার্থীর পক্ষে কঠিন হবে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মালেক সরকার বলেন, ‘ফুলবাড়িয়ায় এমপি পরিবারের রাজনীতি হচ্ছে একটি ব্যবসা। তাদের সবই লাগে। বাপও এমপি হতে চায়, ছেলে-মেয়েও চায়। তাদের পরিবারটিকে মানুষ এখন আর ভালোভাবে নেয় না। সাধারণ ভোটারসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা আমার পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রচার চালাচ্ছে। আশা করছি, আমার ট্রাক প্রতীকের বিজয় হবে।’
ঈগল প্রতীকে লড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিমা বেগম সালমা বলেন, ‘আমি ১৯৮৮ সালে থেকে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত আছি। কয়েক বছর ধরেই সরকারের উন্নয়ন চিত্র মা-বোনদের সামনে তুলে ধরে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। তৃণমূলের মানুষ ভালো নেই। তারা উন্নয়ন-বঞ্চিত। শিক্ষায়ও রয়েছে পিছিয়ে। আমি আমার বাবাকে শ্রদ্ধা-সম্মান করি। আমিও মনোনয়ন না পেয়ে সাধারণ মানুষের চাপের মধ্যে প্রার্থী হয়েছি। সাধারণ ভোটাররা যাকে পছন্দ করবেন তাকেই ভোট দেবেন।’
তবে বাবা মোসলেম উদ্দিন মেয়ের প্রার্থিতা সম্পর্কে বলেন, ‘প্রায় এক ডজনের মত নেতা-কর্মী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলাম। এর মধ্যে আমার ছেলে-মেয়েরাও ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ আমার প্রতিই আস্থা রেখেছে। যারা মনোনয়ন চেয়ে পায়নি, তাদের মধ্যে আমার ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমদাদুল হক সেলিমসহ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আমার পক্ষে কাজ করছেন। আমার মেয়েটা অস্ট্রেলিয়ায় ছিল। সে দেশে এসে প্রার্থী হয়েছে। তাতে আমার কষ্ট নেই। মানুষ যাকে পছন্দ করবে তাকেই ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে।’
একটি পৌরসভা এবং ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে ময়মনসিংহ-৬ ফুলবাড়িয়া আসন।মোট ভোটার ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৯৮৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯৪ হাজার ৪৪২ জন। আর নারী ভোটার ১ লাখ ৯১ হাজার ৫৪১ জন।