আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মানবজাতিকে মহাপ্লাবন থেকে রক্ষা করেছিলো নূহ নবীর নৌকা। আগামী নির্বাচনে এই নৌকা মার্কায় ভোট দিতে হবে। কারণ ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত স্মার্ট বাংলাদেশ। একমাত্র নৌকা থাকলেই তা সম্ভব। ২১০০ সালে বাংলাদেশ কিভাবে এগিয়ে যাবে ডেল্টা প্ল্যান তৈরি করে সেই পরিকল্পনাও করে দিয়েছি।’
মঙ্গলবার ফরিদপুরে নির্বাচনি সফরে এসে শহরের রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সভা সঞ্চালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফ।
বেলা পৌনে ২টার দিকে ফরিদপুর সার্কিট হাউসে পৌঁছেন শেখ হাসিনা। সেখানে মধ্যাহ্ন ভোজের পর বিকেল ৩টা ১৮ মিনিটের দিকে তিনি জনসভা মঞ্চে উপস্থিত হন।
বিকেল ৩টা ৪৩ মিনিটে বক্তব্য শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পঞ্চাশ মিনিটেরও বেশি সময় তিনি বক্তব্য দেন।
শেখ হাসিনা মঙ্গলবার ফরিদপুরে রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে নির্বাচনি জনসভায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন। ছবি: নিউজবাংলা
প্রধানমন্ত্রী ফরিদপুর-১ আসনে সাবেক ছাত্রনেতা আব্দুর রহমান, ফরিদপুর-২ আসনে সাজেদা চৌধুরীর সন্তান শাহাদাব আকবর লাবু চৌধুরী, ফরিদপুর-৩ আসনে শামীম হক, রাজবাড়ী-১ আসনে কাজী কেরামত আলী, রাজবাড়ী-২ আসনে মো. জিল্লুল হাকিম ছাড়াও ‘ক্রিকেট-রত্ন’ আখ্যায়িত করে সাকিব আল হাসানকে পরিচয় করে দেন।
প্রধানমন্ত্রী শামীম হককে পরিচয় করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নেদারল্যান্ডে থেকেও দিন-রাত পরিশ্রম করে শামীম হক সংগঠনকে গড়ে তুলেছিলেন। মানুষকে টাকা দিয়ে কেনা যায় না। ফরিদপুরের মাটি বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান। টাকা দিয়ে ফরিদপুরের জনগণকে কেউ কিনতে পারবে না। এ মাটি একেবারে খাঁটি। এ মাটির কাউকে টাকা দিয়ে কেনা যায় না।
এদিকে অসুস্থ থাকায় ফরিদপুর-৪ আসনের প্রার্থী আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ জনসভায় উপস্থিত থাকতে পারেননি। এছাড়া মাগুরা-২ আসনে নৌকার প্রার্থী বীরেন শিকদার ফরিদপুরে এসে দেখা করে যান বলে বক্তব্যে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় কোনো মানুষ ক্ষুধার্ত থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না৷ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের উন্নতি করাই আমাদের লক্ষ্য। আমাদের এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। শুধু নৌকা মার্কায় ভোট পেলে আমি ক্ষমতায় আসব। আমি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে পারব। এজন্য এবারের নির্বাচনে সবাই নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাবা-মা, ভাই সবাইকে হারিয়েছি। এই বাংলার মানুষের মাঝেই আমি খুঁজে পাই আমার বাবা, মা, ভাইবোনকে। এজন্য এই দেশের জন্য আমি নিজেকে উৎসর্গ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা চলতে চাই। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে দেশে সবকিছুর দাম বেড়েছে। বিশ্বব্যাপী খাদ্যমন্দা। তাই সবার কাছে আমার একটি অনুরোধ, কারও এক টুকরো জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। যা পারেন আবাদ করেন। আমি নিজেও শুরু করে দিয়েছি।
‘বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমার মাটি আছে, মানুষ আছে। সেই মাটি-মানুষ দিয়েই আমরা উন্নতি করবো। আমি নিজেও তা বিশ্বাস করি। ১৫ বছরে আমরা উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি। আমরা দুর্নীতি করতে আসিনি।
‘নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছি। আমি বলেছিলাম নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করব। অনেকে বিশ্বাস করেনি। জাতির পিতার কন্যা কখনও কারও কাছে মাথানত করে না- সেটি প্রমাণ করে দেখিয়েছি।’
আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। মানুষের যাতে কোনো কষ্ট না হয় সেজন্য আমরা সর্বস্তরের মানুষের বেতন পাঁচ পার্সেন্ট বেতন বৃদ্ধি করে দিয়েছি। গার্মেন্টকর্মীদের মজুরি বৃদ্ধি করেছি।’
ভিজিডিসহ বিভিন্ন ভাতার মাধ্যমে মানুষের কষ্ট লাঘবের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
শিক্ষিত জাতি ছাড়া বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়া যাবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষার উন্নয়নে আমরা ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু খালেদা জিয়া এসব মেনে নেননি। তিনি সবকিছু বন্ধ করে দেন। কারণ তিনি নিজে অঙ্ক ও উর্দু ছাড়া আর কোনো বিষয়ে পাস করেননি।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের ক্ষমতা মানে দুর্নীতি-লুটপাট। তাদের কারণে দেশ অচল হয়ে যায়। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসেছিলেন দেশের গ্যাস বিক্রি করে। আমি গ্যাস বিক্রি করিনি বলেই ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারিনি।
‘আজ আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। হাতে হাতে মোবাইল দিয়েছি। সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে ঘরে ঘরে ইন্টারনেট দিয়েছি।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ৩৩টি জেলার মানুষ সম্পূর্ণভাবে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হয়েছে। হিজড়া, দলিত শ্রেণি, হরিজনদেরও ঢাকা শহরে ফ্ল্যাট করে দিয়েছি। আওয়ামী লীগই প্রথম বয়স্ক ভাতা চালু করেছে। বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, স্বামী নিগৃহীতাদের মোবাইলে ভাতার টাকা পৌঁছে দিচ্ছি। ২৯ লাখ ১০ হাজার প্রতিবন্ধীকে প্রতিমাসে ভাতা দেই। এদের যারা পড়াশোনা করে তাদেরও ভাতা দিচ্ছি।