বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘প্রায় ৪০ বছর মাটির জিনিসপত্র বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি’

জন্টু বলেন, ‘মাটির জিনিসপত্র বিক্রি করতে আমার খুব ভালো লাগে। তাই তো আজও ছাড়তে পারি না এই পেশা। আমার বাড়িতেও আমি মাটির জিনিসপত্র বেশি ব্যবহার করি। শুনেছি প্লাস্টিকের চেয়ে এই মাটির জিনিসগুলো নাকি মানুষের শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।’

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের কুমড়াকাপন (কুমারপাড়া) এলাকার পূর্ব পুরুষের পেশাকে আজও আঁকড়ে ধরে আছেন জন্টু। তাদের ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে এখনও তৈরি করছেন কাদামাটির পণ্যসামগ্রী।

মাটি দিয়ে তৈরি হাঁড়ি-পাতিল, কলসি, থালা-বাসন, সরা বিক্রি করেই সংসার চলে তার।

জীবন সায়াহ্নে এসেও মৃৎশিল্পের পেশাকে আজও জীবনের সঙ্গী বলেই মনে হয় তার। প্রতিদিন ভোর হলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন তিনি। সেই মানুষের নাম জন্টু পাল। মাটিকে ভালোবেসেই তিনি পার করে দিচ্ছেন একটা জীবন।

জন্টুর সংসারে রয়েছে তার স্ত্রী, এক মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে ৬ষ্ট শ্রেণি, ছেলে ২য় শ্রেণিতে পড়ে।

স্ত্রী রত্না পাল মাটির বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করে দেন, আর জন্টু কোনো না কোনো স্থানে ছুটে যান সেগুলো বিক্রি করতে। নিজ গ্রাম থেকে প্রতিদিনই কাঁধে করে এসব মাটির তৈরি জিনিস নিয়ে গ্রাম থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরদূরান্তে হেঁটে হেঁটে এগুলো বিক্রি করেন।

শনিবার সকালে দেখা গেল পাকা সড়কের পাশেই ছুটে চলেছেন ফেরিওয়ালা জন্টু পাল। কাঁধে করে ভারবহনের কারণে তাকে দূর থেকে কিছুটা কুঁজো মনে হলো।

কথাপ্রসঙ্গে তিনি বললেন, ‘প্রায় ৪০ বছর ধরে মাটির জিনিসপত্র বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে জিনিসপত্র রেডি করে বাড়ি থেকে বিভিন্ন গ্রামে ছুটে যাই। সপ্তাহে পাঁচ দিন, দুদিন বাড়িতে থেকে অন্য কাজ করি।’

এই কঠিন পেশা কেন? এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আর তো কোনো কাজ তেমনভাবে শিখিনি। আর মাটির জিনিসপত্র বিক্রি করতেই আমার খুব ভালো লাগে। তাই তো আজও ছাড়তে পারি না এই পেশা। আমার বাড়িতেও আমি মাটির জিনিসপত্র বেশি ব্যবহার করি। শুনেছি প্লাস্টিকের চেয়ে এই মাটির জিনিসগুলো নাকি মানুষের শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।’

জন্টু পাল বলেন, ‘সারা দিনে বিক্রি করতে পারলে মোটামুটি এক হাজার টাকায় সবগুলো মাটির জিনিস বিক্রি করা সম্ভব হয়।তাতে দৈনিক ৫০০-৭০০ টাকা গড়ে আয় হয়, কিন্তু বর্তমান বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের যে দাম, এই আয়ে কোনোভাবে সামলাতে পারি না।’

জন্টু পালের স্ত্রী রত্নার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘এ পেশায় জীবনযাপন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। মৃৎশিল্প তৈরির উপকরণ যেমন মাটি সংকট ও খড়ির দাম বেশি হওয়ায় এর দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে মাটির তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদাও কমেছে।’

রত্না পাল জানান, বাজারে আগের মতো এখন আর মাটির জিনিস বিক্রি হয় না। তার পর কোনো রকম কষ্ট করে সংসার চলছে।

মাটির তৈরি জিনিস বাজারে বিক্রি করে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার জোগান দিচ্ছেন তারা। অনেক সময় ঘরে চাল না থাকার কারণে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করতে হয় বলেও জানান রত্না।

এ বিভাগের আরো খবর