বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রকৃতি ধ্বংস বন্ধ করুন, গাছ লাগান: অধ্যাপক ইউনূস

  • ইউএনবি   
  • ২৫ জুন, ২০২৫ ১৭:২৮

সুস্থ জীবনযাত্রার গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সকলকে প্রকৃতি ধ্বংস বন্ধ করে গাছ না কেটে গাছ লাগানো ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও ব্যবহার বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এই সুন্দর পৃথিবী উপভোগ করতে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করারও আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘প্লাস্টিক একটি বিষ। শুধু মানুষের জন্য নয়, এই বিশ্বের সবকিছুর জন্য। আমরা এটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি না, কারণ এটি ধীরে ধীরে এবং ধীরে ধীরে ঘটছে। আসুন আমরা এটির সমাধান করি। আসুন আমরা এই বিষ থেকে নিজেদের রক্ষা করি।’

৫ জুন 'বিশ্ব পরিবেশ দিবস' উপলক্ষে বুধবার (২৫ ‍জুন) বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রেআয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই মন্তব্য করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পরিবেশ রক্ষা করা নাগরিকদের নেতৃত্বাধীন একটি আন্দোলন হওয়া উচিত, কেবল সরকারের উপর নির্ভর করা নয়।

ব্যক্তিগত পর্যায়ে সচেতনতার গুরুত্ব তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এটা আমার পরিবেশ। আমাকেই এটা রক্ষা করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমরা যদি বেঁচে থাকতে চাই—তাহলে আমাদের পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।’

তিনি বলেন, সারা দেশে ব্যাপক বৃক্ষরোপণের প্রচারণার মতো গাছ কাটা বন্ধ করতে একটি অভিযান চালানো উচিত।

নতুন প্রজন্ম ঢাকার কাছাকাছি দূষণমুক্ত নদী এবং সবুজ বন দেখতে পাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন অধ্যাপক ইউনূস।

তিনি বলেন, ‘তরুণরা আমাদের একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে অনুপ্রাণিত করেছে। এই তরুণ প্রজন্ম বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং সৃজনশীল শক্তি।’

জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবং পরিবেশকে দূষণ থেকে রক্ষা করতে তরুণ প্রজন্মকে কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান অধ্যাপক ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা দেশের সকল নাগরিককে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার বন্ধ করার আহ্বান জানান। বলেন, ‘আমাদের আত্ম-ধ্বংসাত্মক চিন্তাভাবনা থেকে মুক্ত থাকতে হবে। অর্থনৈতিক সুবিধার জন্য পরিবেশের ক্ষতি করা যাবে না।’

প্লাস্টিক পণ্যের ক্রমবর্ধমান আধিপত্য বর্ণনা করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে জনগণ যদি এটিকে গুরুত্বের সঙ্গে পরিবর্তন করতে না চায়—তাহলে তাদের অবশ্যই পরাজয় বরণ করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন বন্ধ করলে এর ব্যবহার এড়ানোর প্রশ্নই উঠবে না। এটাই মূল কারণ।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, মানুষ প্রকৃতিকে ধ্বংস করছে, কিন্তু তারা বুঝতে পারে না প্রকৃতিরও একটি ধ্বংসাত্মক রূপ রয়েছে।

গ্রহে প্লাস্টিকের বিরূপ প্রভাব তুলে ধরে তিনি বলেন, প্লাস্টিক জলবায়ু সংকট, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংসকে ত্বরান্বিত করছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সঠিক প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনার অভাবে দেশের জলাশয় এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে।

প্রকৃতিতে প্লাস্টিকের স্থায়িত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, সবকিছুরই একটি আয়ু আছে কিন্তু প্লাস্টিক এমন একটি জিনিস যার কোনো মৃত্যু নেই।

মাইক্রোপ্লাস্টিকের ক্ষতিকারক প্রভাব তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা যদি প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ না করি—তাহলে ধ্বংস আমাদের পিছু ছাড়বে না.....আমরা আত্মঘাতী পথে আছি, কারণ প্লাস্টিক এবং পলিথিনের নির্বিচার ব্যবহার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে।’

অধ্যাপক ইউনূস জুলাইয়ের বিদ্রোহের শহীদদের স্মরণ করেন এবং আন্দোলনে আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।

সবুজ বাংলাদেশ গড়ে তোলা

অধ্যাপক ইউনূস অনুষ্ঠানে পরিবেশ মেলা-২০২৫' এবং 'জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা-২০২৫' উদ্বোধন করেন।

তিনি পরিবেশ সুরক্ষা এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রাপকদের মধ্যে জাতীয় পরিবেশ পুরস্কার, জাতীয় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ পুরস্কার এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ পুরস্কার বিতরণ করেন।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং পরিবেশ সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

পরিবেশ মেলা ২৫ জুন থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত চলবে, আর বৃক্ষমেলা ২৪ জুলাই পর্যন্ত চলবে।

উভয় মেলাই প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

এ বছরের বৃক্ষরোপণ অভিযানের প্রতিপাদ্য হলো: ‘আসুন পরিকল্পিতভাবে গাছ লাগাই, সবুজ বাংলাদেশ গড়ি’।

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনকে রক্ষায় সরকারের উদ্যোগের সফল বাস্তবায়নে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নির্মল পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ রেখে যাব।’

প্রধান উপদেষ্টা ২৫ জুন 'বিশ্ব পরিবেশ দিবস' উপলক্ষে এক বার্তায় এই মন্তব্য করেন, যা মূলত ৫ জুন পালিত হয় এবং প্লাস্টিক দূষণ রোধ করার উপায় বের করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সরকার পরিবেশগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও পুনরুদ্ধারের জন্য পর্যটন সীমিত করার এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘পরিবেশ সুরক্ষা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও 'বিশ্ব পরিবেশ দিবস' পালিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত।’

তিনি বলেন, 'প্লাস্টিক দূষণের অবসান' প্রতিপাদ্যে এবারের জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) নির্ধারিত বিশ্ব পরিবেশ দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গত দশকে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি বলেন, প্লাস্টিক সামগ্রীর বহুমুখী ও অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার, বিশেষ করে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের অত্যধিক উৎপাদন, ব্যাপক ব্যবহার এবং অব্যবস্থাপনা পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমাদের পরিবেশ ও পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্লাস্টিক দূষণের কঠোর নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় প্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন ও ব্যবহার বন্ধ করার জন্য দেশব্যাপী নিয়মিত পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

পলিথিন ব্যাগের পরিবেশবান্ধব বিকল্প উদ্ভাবন, অনুমোদন এবং প্রবর্তনের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ট্রান্সবাউন্ডারি প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং প্লাস্টিক বর্জ্য ও সামুদ্রিক আবর্জনার সুষ্ঠু ও পরিবেশসম্মত ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এছাড়া, ‘কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০২১’-এর আওতায় ইপিআর (বর্ধিত উৎপাদক দায়িত্ব) নির্দেশিকা প্রণয়নের কাজ চলছে, যেখানে উৎপাদনকারী নিজ দায়িত্বে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহপূর্বক তা ব্যবস্থাপনা করবেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলই বর্তমানে পরিবেশ ও প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন।

এ বিভাগের আরো খবর