আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচিত হয়ে টানা তিনবার রাজশাহী-২ (সদর) আসনে সংসদ সদস্যের (এমপি) দায়িত্ব পালন করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ১৪ দলীয় জোট আওয়ামী লীগের সঙ্গে দরকষাকষির পর এবারও নৌকা প্রতীক নিয়ে এ আসনে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন তিনি, কিন্তু নৌকা পেলেও স্বস্তি মিলছে না বাদশার। একই নামের আরেক বাদশা হয়েছেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী।
জোটের প্রার্থীর নৌকার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুর রহমান বাদশা। আর স্থানীয় আওয়ামী লীগ সরাসরি ঘোষণা দিয়েই তার পক্ষে মাঠে নেমেছে।
জোটের আরেক নেতা জাসদের রাজশাহী মহানগরের সভাপতি আবদুল্লাহ আল মাসুদ শিবলীও মশাল প্রতীক নিয়ে আছেন ভোটের লড়াইয়ে।
এমন বাস্তবতায় অন্য তিনবারের তুলনায় বেশ খানিকটা কোনঠাসা অবস্থানে রয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রভাবশালী নেতা বাদশা।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকা নিয়ে গঠিত সদর আসনে দুই বাদশা ছাড়াও জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বিএনএম, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট ও জাসদের প্রার্থী রয়েছেন, তবে আলোচনার কেন্দ্রে আছেন দুই বাদশা।
বর্তমান এমপি ফজলে হোসেন বাদশা ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকেই নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন, তবে ১৪ দলীয় জোটের সমঝোতার পর ওয়ার্কার্স পার্টিকে আওয়ামী লীগ যে কয়টি আসনে নৌকা প্রতীক দেন, তার মধ্যে রয়েছে রাজশাহীর আসনটি।
দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ আসনে নৌকার মনোনয়ন পাওয়া মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলি কামালের নৌকা চলে যায় ফজলে হোসেন বাদশার কাছে। অন্যদিকে বাছাইপর্বে মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায় মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুর রহমান বাদশার।
পরে ১৮ ডিসেম্বর আদালতের মাধ্যমে মনোনয়ন ফিরে পান শফিকুর রহমান বাদশা। আর ওই দিন থেকেই তিনি ভোটের মাঠে প্রচারে নামেন। কাঁচি প্রতীক নিয়ে তিনি ছুটে চলেছেন শহরের অলিগলিতে।
আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র বাদশার সঙ্গে সরাসরি যোগ দিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগ ছাড়াও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এটা ফজলে হোসেন বাদশার জন্য চিন্তার বিষয়। কারণ গত তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোটের ওপর ভর করেই এমপি হন তিনি।
এ বিষয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুর রহমান বাদশা বলেন, ‘আমি কাঁচি প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে আছি এবং দলের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীকেই পাশে পেয়েছি।’
ভোটে জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী শফিকুর রহমান বাদশা বলেন, ‘গত ১৫ বছর ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী রাজশাহী সদর আসনে ছিলেন ফজলে হোসেন বাদশা। তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। উন্নয়নের ক্ষেত্রে মেয়রের সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাজের যে সমন্বয় থাকা দরকার, সেটা তিনি করেন না।
‘তিনি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করেন না। এ কারণে আওয়ামী লীগ গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটি আর বাইরের কাউকে ছাড় দিতে চায় না। এখানকার সাধারণ কর্মীরাও চায় না এটা।’
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, ‘নৌকার বিপক্ষে নেমে কাঁচির জন্য ভোট করতে হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য কষ্টেরই। তারপরও আমরা এটা করতে বাধ্য হচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘মহানগর আওয়ামী লীগ সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে নৌকার বিপক্ষে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা নৌকার বিপক্ষে না। আমরা নৌকার মাঝি পরিবর্তন চাই।’
মোহাম্মদ আলী কামাল আরও বলেন, ‘এমপি সাহেব বরাবরই আমাদের উপেক্ষা করেন। এমনকি তিনি মনোনয়ন পাওয়ার পর এখন পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে ভোটের বিষয়ে কথা বলেননি। কাজ করতে হবে কি না, কিছু বলেননি।
‘আমরা কি নিজে থেকে গিয়ে তার ভোট করে দেব? এসব নানান কারণেই আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সংগঠনেরর নেতা-কর্মীরা এবার আর তার সঙ্গে থাকবে না। কাঁচি প্রতীক নিয়েই আমরা ভোট করব এবং আমরাই বিজয়ী হব ইনশাল্লাহ।’
এর আগে শুক্রবার বিকেলে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ অডিটরিয়ামে মতবিনিময় করে ঘোষণা দেন, তারা নৌকার পক্ষে নন। আওয়ামী লীগ নেতার কাঁচি প্রতীকের পক্ষেই মাঠে থাকবেন তারা।
এ বিষয়ে এখনই বেশি কিছু বলতে চান না নৌকার প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত পরিবেশ এমন নাও থাকতে পারে।’
আওয়ামী লীগ তার পক্ষে মাঠে নামবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, ফজলে হোসেন বাদশা স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা না বাড়িয়ে কেন্দ্রীয়ভাবেই বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে চান। এ জন্য তিনি ১৪ দলীয় জোটের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথাও বলছেন।