এক সময় ছিলেন আওয়ামী লীগের ডাকসাইটে নেতা। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ পদের পাশাপাশি তাদের অন্তত একজন ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের ভিপি। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং আরেকজন ছিলেন জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড়। আরেকজন তাদের মতো না হলেও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ছিলেন উদীয়মান তারকা।
সময় পরিক্রমায় বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তারা আজ আওয়ামী লীগ থেকে দূরে। অথচ তারা প্রত্যেকেই ছিলেন সংসদ সদস্য। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
উল্লিখিত নেতারা হলেন- সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, আখতারুজ্জামান, দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল ও পংকজ দেবনাথ। এই তালিকার আরেকজন হলেন সুলতান মনসুর, যিনি শেষ পর্যন্ত প্রার্থী হননি।
এক/এগারো সময়কালে আওয়ামী লীগ থেকে ঝরে পড়েন অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, আখতারুজ্জামান, ও সুলতান মনসুর। দলের সভাপতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গিয়ে সংস্কারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে পদ হারান তারা। অবশ্য তার আগেই ২০০৮-এর জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন হারান তারা।
আখতারুজ্জামান ও সুলতান মনসুর সে সময় ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ছিলেন দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক। ২০১৭ সালে এসে বাদ পড়া টুটুল ছিলেন ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথের বেলায় অবশ্য ঘটেছে ভিন্ন ঘটনা। তিনি লাইমলাইটে আসেন এক/এগারো ও পরবর্তী সময়ের পারফরমেন্সে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের দু’বারের এই সাধারণ সম্পাদক ২০০৮ সালে দলের মনোনয়ন পেয়ে টানা তিনবার এমপি হন। কিন্তু স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক এক নেতার সঙ্গে দ্বন্দ্ব এবং এলাকায় আওয়ামী লীগের একটি অংশের সঙ্গে কোন্দলে ছিটকে পড়েন তিনি। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে তাকে দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। আর এবার হারিয়েছেন দলীয় মনোনয়ন। হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
পাবনা-১ (সাঁথিয়া ও বেড়ার আংশিক) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের এক সময়ের প্রভাবশালী নেতা অধ্যাপক আবু সাইয়িদ। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সর্বকনিষ্ঠ এই সদস্য ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন অধ্যাপক সাইয়িদ। তিনি পাবনা-৮ ও পাবনা ১ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।
আবু সাইয়িদ ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন পাবনা-৮ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের বাকশাল সরকার কর্তৃক পাবনা জেলার গভর্নর নিযুক্ত হন। হন বাকশালের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকও। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পাবনা-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এক/এগারোর প্রেক্ষপটে তিনি দলে পদ, মনোনয় ও অবস্থান সবই হারান। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ও ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণফোরাম থেকে পাবনা-১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন এই সাবেক শিক্ষাবিদ।
গাজীপুর-৫ (সদর-কালীগঞ্জ) আসনে এবার দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান। তিনি গাজীপুর-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।
আখতারুজ্জামান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। দলটির ২০০৯ সালের সম্মেলনে পদাবনতি হয়ে কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য হন তিনি। মনোনয়নও হারান। হারানো সেই অবস্থান তিনি আর পুনরুদ্ধার করতে পারেননি। পরে গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হন। অবশেষে কেন্দ্রেীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য পদও হারান। অথচ তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি ১৯৭৯-৮০ সালে ডাকসুর জিএস এবং ১৯৮২-৮৪ সালে ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে আখতারুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি এ অঞ্চল থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলাম। এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে আমি একজন পরীক্ষিত মানুষ। আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বিপরীতে প্রার্থী হতে বাধা নেই বলেই এবার প্রার্থী হয়েছি।’
সিংগাইর ও হরিরামপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত মানিকগঞ্জ-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল। এক/এগারোর পর নিজের পদ টেকাতে পারলেও ২০১৭-এর সম্মেলনে তিনি আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদকের পদ হারান।
জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক খেলোয়াড় টুটুল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্তের বদৌলতে প্রার্থী হয়েছি। বলা হয়েছে- কেউ যদি হেভিওয়েট প্রার্থীকে হারাতে পারেন তাহলে আমরা সাধুবাদ জানাবো। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী।’