দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলমকে আওয়ামী লীগের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত বুধবারের এক নোটিশে বিষয়টি জানানো হয়।
নোটিশে বলা হয়, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মাননীয় সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে অসৌজন্যমূলক বক্তব্য রাখায় ও ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণের জন্য চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব জাফর আলম এমপিকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে তার সভাপতির পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি প্রদান করা হইল এবং কেন তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না, তা আগামী সাত দিনের মধ্যে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ বরাবরে তা কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হইল।
‘সাত দিনের মধ্যে যদি জবাব না দেয়া হয়, তবে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বরাবরে সুপারিশ করা হইবে।’
এমপি জাফর আলম পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ট্রাক প্রতীক নিয়ে লড়ছেন তিনি।
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বুধবার রাত ১০টার পর এক পোস্টে জাফর আলম লিখেন, ‘সবাই শান্ত থাকুন। ধৈর্য ধরুন। দিনশেষে সত্যেরই বিজয় হবে, ইনশাআল্লাহ…।’
এ বিষয়ে জানতে এমপি জাফরকে মোবাইল ফোনে কল করেও পাওয়া যায়নি।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে যা বলেছিলেন জাফর
গত ১৯ ডিসেম্বর বিকেল তিনটার দিকে পেকুয়ায় নিজের সমর্থনে আয়োজিত এক সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে জাফর আলম আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বেশ কিছু কথা বলেন।
এমপি বলেন, ‘আমি একবার মনোনয়ন পেয়েছি, কিন্তু আমি শতবার মৃত্যুর মুখে আপনার জন্য গিয়েছি। আমি আপনার জন্য আমার জীবনে সবকিছু উজাড় করে দিয়েছি।
‘আমি কক্সবাজারে এক মিটিংয়ে এক কোটি ২৫ লাখ টাকা খরচ করেছি। আপনাদের থ্রি স্টার হোটেলে রেখেছি। মাতারবাড়ীতে ৪০ হাজার মানুষকে এক দিনের খাবার দিয়ে এক হাজার ট্রাক গাড়ি দিয়ে আমি জনসভাকে সফল করেছি। আপনি (শেখ হাসিনা) সেখানে ঘোষণা করলেন, আশেক উল্লাহ রফিক এমপি প্রার্থী।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, ‘শোনেন...নেত্রী, আল্লাহ ওপরে। আমি দোষ করলে আল্লাহ আমার বিচার করবে, কিন্তু আমি মনে করেছি, এটা আমার প্রতি অবিচার হয়েছে।
‘আমার মতো একজন সহজ সরল কর্মীকে, আমাকে বারবার ঠকিয়ে আরেকজনের কাঁধে নৌকা দিয়ে আমার কাছ থেকে নৌকা কেড়ে নিয়েছিলেন। সেদিনও আমি হাসিমুখে মেনে নিয়েছি। জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে গিয়েছিলাম। সেখানে আমাকে ভোট দিতে না পেরে নেতা-কর্মীরা চোখের জল ফেলে চলে গেছে। সেদিনও আমি আপনার কথা শুনেছি।’
কক্সবাজার-১ আসনের এমপি জাফর আলম আরও বলেন, ‘সুতরাং এখন আপনি বলেছেন, সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র ভোট করতে পারবেন, আমি স্বতন্ত্র ভোট করতেছি। এখানে যদি আমি কারও কোনো ধরনের অশুভ পাঁয়তারা দেখি, আমরা চকরিয়ার মানুষ...শহীদ আবদুল হামিদের চকরিয়া, আবুল কালামের চকরিয়া-পেকুয়া।
‘এটা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চকরিয়া। এখানে কোনো অন্যায় আমরা বরদাশত করব না, করব না, করব না।’