আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
রাজশাহী সার্কিট হাউস মিলনায়তনে বুধবার সকালে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের কাছে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
রাজশাহীর ছয়টি সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন সিইসি।
সভায় সিইসিকে সামনে পেয়ে রাজশাহীর সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীরা নানা সংশয় আর অভিযোগের কথা তুলে ধরেন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারচুপি হবে কি না, সেই প্রসঙ্গও উঠে আসে মতবিনিময় সভায়, তবে সিইসি প্রার্থীদের সুষ্ঠু ভোটের বিষয়ে আশ্বস্ত করেন।
তিনি বলেন, যত প্রভাবশালীই হোক না কেন, নির্বাচনি আচরণবিধি মেনে চলতে হবে সবাইকেই।
মতবিনিময় শেষে এক প্রশ্নের উত্তরে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচন কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে, সেটা এই মুহূর্তে বলা যাবে না, তবে আমরা এবং প্রার্থীরা সকলে মিলে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য চেষ্টা করছি। আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে এবং ভোটাররা আসবেন। এই বিশ্বাস, প্রত্যয় আমাদের আছে।’
তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, যারা প্রার্থী, তাদের সাথে আমাদের মতবিনিময় হয়েছে। তারা কিছু কিছু সমস্যার কথা বলেছেন, তারা অত্যন্ত আন্তরিক। আমরা তাদের কথা শুনেছি, কমিশন শুনেছে। স্থানীয় প্রশাসন শুনেছে। সেই সমস্যাগুলো যদি সত্যি হয়, তাহলে সেগুলো কীভাবে নিরসন করা যায়, সেই গাইডলাইন আমরা দিয়েছি।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আপনারা আশ্বাস রাখুন, সকলের প্রয়াসে নির্বাচন সফল হবে, এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।’
ওই সময় এক সাংবাদিক জানতে চান নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ না হলে সফল হবে কীভাবে। এ বিষয়ে আর কোনো কথা না বলে চলে যান সিইসি।
এদিকে মতবিনিময় শেষে বের হওয়ার পর প্রার্থীরা জানিয়েছেন, তারা সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য যে দাবি জানিয়েছেন, সে বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাদের আশ্বস্ত করেছেন।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী-২ আসনের প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘দুটো জিনিস খুব গুরুত্ব সহকারে আলোচনা হয়েছে। একটা হলো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। আরেকটা হলো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না। নির্বাচনে কোনো কারচুপি হবে কি না, সেই প্রশ্নটা এসছে। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার উদ্বুদ্ধ করেছেন, যেন সকলে ভোট দিতে যায়; ভোটে অংশগ্রহণ করে এবং প্রত্যেকে যেন নিজের ভোট নিজে দেয়, সে ব্যাপারে প্রার্থীদের যারা এজেন্ট থাকবে, ভেতরে তারা কেয়ারফুলি জিনিসগুলো যেন হ্যান্ডেল করে।
‘আপনারা যদি দেখেন যে, একজনের ভোট অন্যজন দিয়ে দিচ্ছে, আপনারা কোনো অভিযোগ করছেন না, তাহলে কিন্তু নির্বাচন কমিশন কিছু করতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে এগুলো আশ্বস্ত করেছেন। অনেক প্রার্থীর নিজ নিজ এলাকা নিয়ে কমপ্লেন ছিল। এলাকায় সন্ত্রাস হচ্ছে। এসব কথা উঠেছে।’
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পবা-মোহনপুর আসনের প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার মহোদয় প্রার্থীদের ডেকেছিলেন শুভেচ্ছা বিনিময় এবং নির্বাচনি বিধিবিধান মেনে চলার বার্তা দেয়ার জন্য। নির্বাচন কমিশনের যেটা মুল বার্তা, সেটা হলো, আপনি যত বড় প্রার্থীই হোন আর যত শক্তিশালী হোন, নির্বাচনের যে আইন আছে সেই আইনের ব্যত্যয় ঘটলে আপনি ছাড় পাবেন না।
‘এটি মেনেই চলতে হবে। আরেকটা ভালো বিষয় হলো বিভিন্ন প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের তারাও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে। এটি একটি ভালো দিক।’
রাজশাহী-১ আসনের প্রার্থী অভিনেত্রী মাহিয়া মাহি বলেন, ‘উনি আশ্বস্ত করেছেন সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে। যত বড়ই ক্ষমতাশীল মানুষ হোক না কেন, ক্ষমতাশীল দল হোক না কেন, কাউকে তারা ছাড় দেবেন না এবং নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, কিন্তু ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আনার দায়িত্বটা আমাদের। কার কত জনপ্রিয়তা সেটা দিয়ে যাতে আমরা ভোটারদের কেন্দ্রে আনি, সেটাই।’
প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা, ইসি সচিব জাহাঙ্গীর আলম, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান হুমায়ুন কবির, পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আনিসুর রহমান, আরএমপি কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ।