আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মনোনয়নপত্র দেয়ার শুরু থেকেই এবার আলোচনার শীর্ষে রয়েছে ঝালকাঠি জেলা। এ জেলায় বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বীর উত্তম ব্যারিস্টার এম শাহজাহান ওমর দল পাল্টে নৌকায় উঠেছেন। রাজাপুর ও কাঠালিয়া দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত ঝালকাঠি-১ আসনটি তার নির্বাচনি এলাকা। অপরদিকে ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র, আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা আমির হোসেন আমু নির্বাচন করবেন ঝালকাঠি-২ আসনে, যেটি ঝালকাঠি সদর এবং নলছিটি উপজেলা নিয়ে গঠিত।
ঝালকাঠি-১
ঝালকাঠি-১ আসনে নৌকা প্রতীক পেলেও ভোটের মাঠে অনেকটা বেকায়দায় পড়েছেন নব্য আওয়ামী লীগ নেতা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর। ওমরের সঙ্গে এ আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা দিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রস্তুত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য মো. মনিরুজ্জামান। নৌকা না পেলেও ঈগল প্রতীক নিয়ে শাহজাহান ওমরের বিরুদ্ধে নির্বাচনি মাঠে সরব এই আওয়ামী লীগ নেতা।
ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঠালিয়া) আসনটি একটা সময়ে শাহজাহান ওমরের ঘাটি এবং বিএনপির দূর্গ ছিল। তবে গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের টানা ক্ষমতায় থাকা ও বিএনপির নির্বাচন-বিমুখতায় সেই দূর্গে ভাঙন লেগেছে। নিজের দুর্গ ফের নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে এবার কৌশলগত কারণে ধানের শীষ ছেড়ে নৌকায় উঠেছেন শাহজাহান ওমর। এ আসনে শাহজাহান ওমরের শক্তির কথা বিবেচনা করে রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বন করেছে আওয়ামী লীগও, তার হাতে দেয়া হয়েছে নৌকার দাঁড়।
তবে ‘একসময়ের’ শক্তিশালী দুর্গে শাহজাহান ওমর ঠিক কতটা শক্ত হাতে নৌকা বাইতে পারবেন, তা নিয়ে জেগেছে সংশয়। কারণ গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এই আসনে নিজের অবস্থান তিলে তিলে শক্ত করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মনিরুজ্জামান।
ভোটারদের ধারণাও কথা বলল মনিরুজ্জামানের পক্ষে। তাদের মতে, নৌকা পেলেও শাহজাহান ওমরের ভোটজয়ের স্বপ্ন হয়তো তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়তে পারে।
প্রতীক বরাদ্দের পর রাজাপুর-কাঠালিয়ার আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সকলেই মনিরের ঈগল প্রতীকের জন্য ভোট চাইতে নেমে পড়েছেন মাঠে। রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারাও নৌকা ছেড়ে ঈগলের নির্বাচনি পাখায় ভর করেছেন।
এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সভা করে ঈগলের পক্ষে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ। গত ১৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ওই সভার রেজুলেশনের একটি কপি সংগ্রহ করেছে নিউজবাংলা।
রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট খায়রুল আলম সরফরাজ এবং সাধারণ সম্পাদক জিয়া হায়দার লিটন নিউজবাংলার কাছে তাদের ক্ষোভ ঝেড়েছেন। তারা বলছেন, ‘এবার ওমরের দূর্গে হানা দিয়েছে ঈগল। নৌকার মনোনয়ন পেয়েও তিনি (ওমর) তার পুরোনো দল বিএনপির নেতা-কর্মীদের নিয়ে ভোটের কার্যক্রম চালাচ্ছেন। আমাদের (আওয়ামী লীগ) কোথাও ডাকেন না।’
পাশের উপজেলা কাঠালিয়া আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের একই অভিযোগ। তারা বলছেন, ‘বিএনপির ক্ষমতাকালে এ অঞ্চলে ওমরি শাসন চলত। আমাদের ওপর অনেক নির্যাতন করা হয়েছে। সে সময়ে শাহজাহান ওমরের সঙ্গে যেসব গুন্ডারা থাকত, তাদের নিয়েই আবার নৌকায় ভোট চাইতে নেমেছেন তিনি।’
ইউনিয়ন পর্যায়ের ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শাহজাহান ওমরের বদমেজাজ এবং একক সিদ্ধান্তর কারণেই এ আসনে ৭ জানুয়ারি ডুবে যেতে পারে নৌকা।
ঝালকাঠি-১ আসনে নৌকার সঙ্গে আসল লড়াই হবে মনিরের ঈগলের। এ দুজন ছাড়াও এই আসনে আরও হাফ ডজন প্রার্থী রয়েছেন।
তারা হলেন- জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী দলটির মহাসচিবের উপদেষ্টা মো. এজাজুল হক, জাকের পার্টির ওলামা ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক, তৃণমূল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মো. জাসীম উদ্দিন তালুকদার, বাংলাদেশ কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় সদস্য মো. মজিবর রহমান, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের ঝালকাঠি জেলা আহ্বায়ক মো. মামুন সিকদার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কাশেম মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম।
অবশ্য এরা এখনও মনোনয়নপত্র দাখিলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছেন। অনেককে এলাকার মানুষ চিনেন না বা কখনও দেখেননি বলে জানিয়েছেন।
ঝালকাঠি-২
অন্যদিকে ঝালকাঠি-২ আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আমির হোসেন আমু নৌকা প্রতীক নিয়ে আসন্ন নির্বাচনের জন্য প্রচার চালাচ্ছেন। তিনি ছাড়াও এ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাতীয় পার্টির মো. নাসির উদ্দিন এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ফোরকান হোসেন। এ দুই প্রার্থী যথাক্রমে লাঙল ও আম প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।
১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন আমির হোসেন আমু। এরপর যে ক’টি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করেছে, সবগুলোতেই দলের মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি। সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ঝালকাঠি-২ (সদর-নলছিটি) আসনে দলীয় মনোনয়ন পান প্রবীণ এই রাজনীতিক।
ঝালকাঠিতে আমির হোসেন আমুকে অভিভাবক হিসেবে মানেন আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা। তাই তিনিই নৌকার মনোনয়ন পাওয়ায় দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা গেছে।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা দলীয় যেকোনো সিদ্ধান্ত আমির হোসেন আমুর নির্দেশে বাস্তবায়ন করি। তিনি আমাদের অভিভাবক। তার বিচক্ষণ রাজনীতির কারণে আমাদের এখানে দলে কোনো কোন্দল নেই। ঝালকাঠি-২ আসনে আমুর বিকল্পও নেই।’
আমির হোসেন আমুর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে শক্ত কোনো প্রার্থী না থাকায় এবারের নির্বাচনে তিনি অনেকটাই ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন।
আওয়ামী লীগের জেলা নেতুবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারাও ভোট নিয়ে চিন্তামুক্ত আছেন। ভোটের ফলাফলে তাদের নেতা লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে জিতে এমপি হবেন বলেই তাদের বিশ্বাস।