বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পপিকে অব্যাহতি, জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন

  •    
  • ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ ২০:৫৯

বিষয়টি নিয়ে পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, রীতি অনুযায়ী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ছাড়া কাউকে বহিস্কার বা অব্যাহতি দেয়া যায় না। যদি কাউকে এমন শাস্তি দেয়ার প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে ঘটনা এবং অপরাধের উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের কাছে শাস্তির সুপারিশ করবে সংশ্লিষ্ট কমিটি, সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্র।

জামালপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে একটি ঘটনার জেরে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মারুফা আক্তার পপিকে প্রথমে কারণ দর্শানো এবং পরে অব্যাহতি দেয়ার দাবি করেছে জেলা কমিটি। জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে পপিকে অব্যাহতি দেয়ার একটি চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গণমাধ্যমেও প্রকাশ হয়েছে। এ ঘটনা সংশ্লিষ্ট জেলায় যেমন টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে, তেমনি প্রশ্ন উঠেছে জেলা কমিটি কি কাউকে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে?

পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, রীতি অনুযায়ী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ছাড়া কাউকে বহিস্কার বা অব্যাহতি দেয়া যায় না। যদি কাউকে এমন শাস্তি দেয়ার প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে ঘটনা এবং অপরাধের উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের কাছে শাস্তির সুপারিশ করবে সংশ্লিষ্ট কমিটি, সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্র।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৪৭ ধারার (৫) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কারণ দর্শাইবার জন্য সুযোগদানের উদ্দেশ্যে যুক্তিসংগত সময় দিয়া সাধারণ সম্পাদক পোস্টাল রেজিস্ট্রেশনযোগে নোটিস প্রদান করিবে।’

অনুচ্ছেদ (৬) অনুযায়ী, ‘সংগঠনের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শাস্তি প্রদানের জন্য আওয়ামী লীগের নিম্নতম যেকোনো শাখা বা সদস্যের লিখিত অভিযোগপত্র পাওয়ার পর উপজেলা বা থানা আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদ নিজেদের সিদ্ধান্তসহ উক্ত অনুরোধপত্র জেলা কার্যনির্বাহী সংসদের নিকট পাঠাইবেন। জেলা কার্যনির্বাহী সংসদ এ সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়া উক্ত বিষয় বিবেচনাপূর্বক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের নিকট প্রেরণ করিবেন। এতদ্সত্ত্বেও জেলা আওয়ামী লীগ স্বয়ং সংগঠনের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আবশ্যকতা বোধ করিলে জেলা কার্যনির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত জ্ঞাপন করিয়া বিষয়টি বিবেচনাপূর্বক চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের নিকট প্রেরণ করিবে।

‘অনুচ্ছেদ (৭) এর ১৭(৬)-এর বিধান প্রতিপালন সাপেক্ষে প্রতিষ্ঠানের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করিবার ক্ষমতা কেবল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের থাকিবে।’

জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের দেয়া অব্যাহতি বিষয়ে জানতে চাইলে মারুফা আক্তার পপি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য হিসেবে দলের প্রাথমিক সদস্য পদ আছে- এমন কারো সঙ্গেও আমার কাজ করার এখতিয়ার এবং মানসিকতা আছে। জেলা আওয়ামী লীগ যা করেছে, এই মুর্হূতে আমি সেটা নিয়ে ভাবছি না। এখন জাতীয় নির্বাচন চলছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে কাজ করার আহ্বান জনাই। আর যে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জেলা আওয়ামী লীগ আমাকে অব্যাহতি দেয়ার দাবি করছে, তার জবাব আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে ব্যাখ্যা করব। এবং সেটা অবশ্যই ৭ জানুয়ারি নির্বাচন শেষ হওয়ার পরে।’

অব্যাহতি চিঠির বিষয়ে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিজন কুমার চন্দ্র নিউজবাংলার জামালপুর প্রতিনিধিকে বলেন, ‘দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে ব্যাখ্যা চেয়ে তাকে (পপি) চিঠি দেয়া হয়েছিল। তার জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় জেলা আওয়ামী লীগ তাকে সদস্যপদ থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।’

বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের সসভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে দলের গঠনতন্ত্রে সুনিদ্দিষ্টভাবে উল্লেখ আছে। কেউ এর ব্যতিক্রম ঘটালে সেটা তার নিজ দায়িত্বে করেছেন।’

প্রসঙ্গত, এর আগে ২০ নভেম্বর জামালপুর শহরের মির্জা আজম অডিটোরিয়ামে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে একটি মতবিনিময় সভা হয়। এতে জামালপুর-৫ (সদর) আসনে দলের প্রার্থী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদকে পরিচয় করিয়ে দেন সভার প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জামালপুরের সন্তান মির্জা আজম। ওই সভায় আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ না পেলেও দলীয় প্রার্থীর ডাকে অংশ নেন জামালপুরের আরেক সন্তান এবং আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মারুফা আক্তার পপি।

তাকে বক্তব্য দিতে না দেয়ায় নেতাদের বক্তব্য শেষে পপি দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিতে চাইলে সে সময় মির্জা আজম তাকে বসতে বলেন। পপি না বসলে মির্জা আজম তাকে ধমক দেন। এই ঘটনার পর মারুফা আক্তার পপির সমর্থকরা তার সঙ্গে অসদাচরণের প্রতিবাদে পরদিন (২১ নভেম্বর) সদর উপজেলার নান্দিনা, তিতপল্লা ও বারুয়ামারিতে মানববন্ধন করেন।

এ ঘটনায় গত ২৫ নভেম্বর জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেত্রী মারুফ আক্তার পপিকে কারণ দর্শনোর চিঠি দেয়। পপি জবাবে ঘটনার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি বলেন, ‘কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য হওয়ায় ওই ঘটনার ব্যাখ্যা আমি দলের সভাপকি-সাধারণ সম্পাদকের কাছে তুলে ধরব।’ এরপর গত ১৮ ডিসেম্বর সোমবার তাকে অব্যাহতি দেয়ার কথা ঘোষণা করে।

অব্যাহতি দেয়ার এখতিয়ার জেলা কমিটির আছে কিনা জানতে চাইলে সাধারণ সম্পাদক বিজন কুমার চন্দ্র নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে তাদের কোনো বক্তব্য নেই।’

এ বিভাগের আরো খবর