আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গি নাটক মঞ্চস্থ করে গণতান্ত্রিক বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শুক্রবার বিকেলে ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।
রিজভী বলেন, ‘২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগের সময়ের মতো ৭ জানুয়ারির ভাগ-বাটোয়ারার নির্বাচনের প্রাক্কালে জঙ্গি নাটক মঞ্চস্থ করার পরিকল্পনা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ। এদেশের মানুষ ধর্মভীরু কিন্তু উগ্র নয়। অসংখ্য ছেলেমেয়ে ইসলাম ধর্মের শিক্ষা গ্রহণের জন্য কওমী, আলিয়া, সুন্নি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। এ পর্যন্ত মাদ্রাসায় কোনো ধরনের উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ড কিংবা সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয়নি। অথচ আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী, ছাত্রলীগ সব বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ চর দখলের মতো দখল করে রেখেছে।’
তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে ভারতবিরোধী লেখার জন্য বুয়েটের ছাত্র আবরারকে হত্যা করেছে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীদের ওপর বার বার হামলা হয়েছে। অথচ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রকৃত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করছে না।
‘উল্টো পার্শ্ববর্তী দেশের নির্দেশনায় জঙ্গি নাটক মঞ্চস্থ করে সাধারণ জনগণের মৌলিক অধিকার ভোটাধিকার কেড়ে নেয়ার প্রাণপণ চেষ্টায় মরিয়া হয়ে পড়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। শুধু ফ্যাসিস্ট রক্তপিপাসু সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে আলেম-ওলামাদের বহির্বিশ্বে জঙ্গি হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
রিজভী বলেন, ‘একদল উচ্চ শিক্ষিত, তথাকথিত ও ব্যক্তিত্ব বিক্রি করা বুদ্ধিজীবী ব্যস্ত আছেন নির্বাচনে নৌকা জিতবে কত আসনে সেই হিসাব নিয়ে। প্রশাসন ব্যস্ত পাতানো নির্বাচনের কৌশল নিয়ে। মাফিয়া চক্রের ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ব্যস্ত শেখ হাসিনার (প্রধানমন্ত্রী) হাতে জিম্মি জনগণের এই মহাবিপদের সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কিভাবে বাড়ানো যায় সেই কৌশল নিয়ে।
‘আর জনগণ লড়াই করছে জীবন বাঁচানোর যুদ্ধে। এর মধ্যে ধেয়ে আসছে প্রলয়ংকরী বিপর্যয়। বেপরোয়া ও নজিরবিহীন আওয়ামী লুটপাটে ধ্বংস হয়ে গেছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। দেশের ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ এখন ৯ বিলিয়ন ডলারের নিচে।’
জনগণকে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, “রাষ্ট্রীয় অর্থের বিনিময়ে খরিদ করা ‘কিংস পার্টি’, ভূঁইফোঁড়, তৃণভোজী, ডামি ও খুঁদকুঁড়ো পার্টির কথিত নির্বাচনি নাটক মঞ্চস্থ করার তামাশায় কেউ কোনো প্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন না। ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। ভোট দেবেন না। ‘আমরা আর মামুরা’ মার্কা এই নির্বাচনের প্রার্থী বা তাদের পক্ষভুক্তদের সংসর্গ ত্যাগ করুন। বিএনপি বা অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নির্বাচনের সঙ্গে কোনোভাবে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের গ্রেপ্তার, মামলা, আসামি আহত ও মৃত্যুর সংখ্যা তুলে ধরেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি জানান, এ সময়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮০ জন নেতা-কর্মীকে, আহত হয়েছেন ৪৩৬ জন এবং মামলা করা হয়েছে ৪টি। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৪৩৬ নেতা-কর্মীকে।