বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঝগড়ারচর বাজারের টক দই

  •    
  • ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১২:৩৯

দইয়াল মো. রহিম মিয়া বলেন, ‘ম্যালা আগে থাইক্কা আমরা মইষ লালন-পালন করি। দুধ বিক্রি করি না। আমরা দুধ দিয়া টক দই বানাইয়া ঝগড়ারচর বাজারে নিয়া বিক্রি করি। এতে আমাগো সংসার ভালা চলে।’

শেরপুর সদরের অনেক এলাকায় কৃষকের ঘরে ঘরে মাটির পাতিলে গরু ও মহিষের দুধ দিয়ে পাতা হয় টক দই। এ দইয়ে খাঁটি আখের গুড় মিশিয়ে অনেকে চেষ্টা করেন স্বাদে ভিন্নতা আনার।

আগে জেলার সব জায়গায় মিলত এ টক দই, কিন্তু কালের বিবর্তনে সেটি সীমিত হয়ে এসেছে।

বর্তমানে শেরপুরে টক দইয়ের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে ঝগড়ারচর বাজার। এ ছাড়া জেলার বেশ কয়েকটি জায়গায় এ টক দইকে বাঁচিয়ে রেখেছেন দইয়ালরা।

শতাধিক পরিবারের লোকজন সপ্তাহের প্রতি শনি ও বুধবার মহিষের টক দই বিক্রি করে থাকেন ঝগড়ারচর বাজারে। টক দই বিক্রি করে তারা মাসে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করে থাকেন। এতে ভালোভাবেই চলে তাদের সংসার।

দইয়াল মো. রহিম মিয়া বলেন, ‘ম্যালা আগে থাইক্কা আমরা মইষ লালন-পালন করি। দুধ বিক্রি করি না। আমরা দুধ দিয়া টক দই বানাইয়া ঝগড়ারচর বাজারে নিয়া বিক্রি করি। এতে আমাগো সংসার ভালা চলে।’

আরেক দইয়াল মিন্টু মিয়া বলেন, ‘এই বাজারে ম্যালা এলাকা থাইক্কা লোকজন আইয়া টক কিন্না নিয়া যায়। আমরা মাসে বালাই কামাই করি। প্রতি বাজারে আমরা দুই-তিন হাজার টাকার দই বেচি।’

মো. বাবু বলেন, ‘টক খাইলে ম্যালা রোগের উপকার হয়। গ্যাস্ট্রিক, যার পেটে হজমের সমস্যা থাকে, তাদের উপকার হয়। ডায়াবেটিস রোগীদের মিষ্টি দই খাওয়া নিষেধ। তাই তারা টক দই খায়।

‘আমরা সপ্তাহে দুই দিন দই বিক্রি করি। আমাদের দই দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মোবাইলে অর্ডার করে আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে নিয়ে যায়।’

প্রস্তুত প্রণালি

নতুন মাটির পাতিল কিনে ধুয়ে ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে নেয়ার পর আগুনে তা দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা হয়। পরে মহিষ বা গরুর দুধ ওই পাতিলেই রেখে মুখ কাপড় দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়। এর দুই থেকে তিন দিন পর দুধ ঘন হয়ে রূপ নেয় টক দইয়ে। এ কাজটি করে থাকেন গৃহিণীরা।

এ বিষয়ে গৃহিণী মরিয়ম বেগম বলেন, ‘বাজার থেকে মাটির পাতিল কিনে আনার পর ভালোভাবে ধুয়ে রোদে শুকাই। পরে চুলার ওপর আগুন দিয়ে তাপ দিই। আমরা এ কাজে সহযোগিতা করি।

‘এতে আমাদের ভালো আয় হয়। এ টাকা দিয়ে খাই, সংসার চালাই, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাই।’

পাশের জেলা থেকে ঝগড়ারচরে

বাজারে এ টক দই ১৪০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়। দই কিনতে পাশের জেলা থেকেও ঝগড়ারচর বাজারে ছুটে আসেন লোকজন।

জামালপুর থেকে আসা ক্রেতা মো. হোসেন আলী বলেন, ‘আমরা এই বাজার থেকে টক দই কিনে খাই। এ দই খেতে অনেক টেস্ট।’

শেরপুর শহর থেকে আসা মো. হিরা মিয়া বলেন, ‘ডায়াবেটিসের জন্য অনেকে মিষ্টি দই খেতে পারে না। আর এ টক তারা খেতে পারে। পেটের অনেক সমস্যার সমাধান হয়। তাই এর চাহিদা অনেক।

‘ঢাকা থেকে আমাদের আত্মীয়রা এ দই কিনে নিয়ে যেতে বলে। তাই আমরা কিনে তারপর নিয়ে যাই।’

নাইম মিয়া বলেন, ‘এ দই তো এখন সব জায়গায় পাওয়াই যায় না। তাই আমরা যেখানে এ দই পাই, সেখানেই গিয়ে কিনে আনি। শরীরের জন্য এই দই অনেক উপকারী।’

জামালপুর শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ নাদিম হাসান বলেন, ‘দইয়ের সবচেয়ে উপকার হচ্ছে দই সহজপাচ্য। আর দুধ সহজপাচ্য হতে পারে না। কারণ দুধে সুগার থাকে, প্রোটিন থাকে। টক দই খেলে সহজে হজম হয়। এতে হজম শক্তি বাড়ে, কিন্তু দই আর দুধ দুটোর গুণাগুণ একই।

‘আমরা সবসময় বলি মিষ্টি দইয়ের চেয়ে টক দই ভালো। মিষ্টি দইয়ে চিনি মোশানো হয়। আর যে মিষ্টি অনেকের জন্য ক্ষতি, কিন্তু টক দইয়ে কোনো মিষ্টি মেশানো হয় না। আমরা নানান রোগীদের টক দই খাওয়ার জন্য সাজেস্ট করে থাকি।’

এ বিভাগের আরো খবর