ককটেল-বিস্ফোরক দ্রব্যের কারিগর ও তাদেরকে অর্থ জোগানদাতাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ককটেল বিস্ফোরণে জড়িত অনেককে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রাজধানীর নয়াপল্টনে ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতার পর সামান্য বিরতি দিয়ে হরতাল ও অবরোধ পালন করছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। আর এসব কর্মসূচি ঘিরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে।
১৪ নভেম্বর বোমাসদৃশ বস্তু দেখতে পেয়ে পুরান ঢাকার নবাবপুর রোডের একটি বাড়িতে অভিযান চালায় র্যাব। ভবনটি থেকে লাল ও কালো রঙের স্কচটেপ মোড়ানো ছয়টি ককটেল ও কিছু বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করে বাহিনীটি। এছাড়া রাজধানীসহ সারা দেশে নিয়মিত বিস্ফোরণ হচ্ছে।
র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সোমবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে বেশ কিছু ককটেল ও এসব তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছি। এসব ঘটনায় অনেককেই আটক করতে সক্ষম হয়েছি। অনেকে আত্মগোপনে আছে। তাদেরকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। মূলত বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তারা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।’
র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। ছবি: নিউজবাংলা
কাদের হাত থেকে রুট লেভেলে বিস্ফোরক আসছে জানতে চাইলে র্যাবের মুখপাত্র বলেন, ‘কারা কোন উদ্দেশ্যে এগুলোর ব্যবহার করছে সেই তথ্যও আমরা পেয়েছি। তাদের অনেককেই এখনও আমরা আইনের আওতায় আনতে পারিনি।
‘ককটেল বা বিস্ফোরকের ক্ষেত্রে আমরা প্রাথমিকভাবে যে তথ্য পেয়েছি, বিভিন্ন জায়গা থেকে অল্প অল্প করে সরঞ্জাম সংগ্রহ করে গোপন আস্তানায় বসে ককটেল বা বিস্ফোরক বানানো হচ্ছে। এর পর সেগুলো তারা তাদের অনুসারীদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। এগুলো যারা তৈরি করছে এবং অর্থায়ন করছে তাদেরকেও আমরা নজরদারি করছি।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘যেসব সরঞ্জাম দিয়ে ককটেল তৈরি করা হয় সেগুলো বিক্রির বৈধ লাইসেন্স রয়েছে অনেকের। তারা হয়তো বুঝতে পারছে না এগুলোর অবৈধ ব্যবহার হচ্ছে। কারণ দৃষ্কৃতকারীরা এসব সরঞ্জাম অল্প অল্প করে সংগ্রহ করছে। ককটেলে তারকাটা, রিকশার বিয়ারিংয়ের বলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম অল্প অল্প করে সংগ্রহ করে অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে।
নির্বাচন ঘিরে র্যাবের কার্যক্রম
র্যাবের কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেন কোনো ধরনের সহিংসতা ও নাশকতা না হয় এবং অস্ত্রের ব্যবহার বা ভয়ভীতি প্রদর্শন করা না হয় সে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই র্যাব কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আমাদের গোয়েন্দারা কাজ করছে।’
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা বেশকিছু অস্ত্র উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। যারা সহিংসতা করছে, মিডিয়া বা সোশ্যাল মিডিয়ায় যেসব ফুটেজ এসেছে সেসব পর্যালোচনা করে জড়িতদের চিহ্নিত করে আমরা আইনের আওতায় আনছি।
‘একইভাবে এলাকাভিত্তিক শীর্ষ সন্ত্রাসী বা সন্ত্রাসী যারা আছে, যারা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বা কোনো প্রার্থীর পক্ষে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে পারে তাদের তালিকা করছি। তারা যেন এই অপকর্ম না করতে পারে সেই কার্যক্রম চলছে।’
প্রার্থীদের নিরাপত্তায় র্যাব
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচনে কোনো প্রার্থী যদি মনে করেন তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, আমাদের জানালে আমরা তাকে নিরাপত্তা দিচ্ছি। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে আমরা মাঠে থাকবো।
‘নির্বাচনে কিংবা নির্বাচন যারা পরিচালনা করবেন তাদের ওপর যেন হামলা না হয়, তারা যেন নিরাপদে দায়িত্ব পালন করতে পারেন তা নিশ্চিত করা হবে। একইভাবে ভোটাররা যেন নিরাপদে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেন এবং নিরাপদে ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন সে লক্ষ্যে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে আমরা রাস্তায় থাকব। নির্বাচন-পরবর্তী সময়েও আমরা সহিংসতা রুখতে মাঠে থাকবো। নির্বাচনের আগে-পরে কোনা ধরনের সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না।’
জামিনপ্রাপ্ত আসামিরাও নজরদারিতে
সাজাপ্রাপ্ত অনেক আসামি জামিনে বের হয়ে আসছে। তারা নির্বাচনে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে বা কোনো ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছে কি না, গোয়েন্দা তথ্যে কী আছে- এমন প্রশ্নে র্যাবের মুখপাত্র এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘জামিনে বের হয়ে অনেকে এলাকায় অবস্থান করছে। অনেকে আবার আত্মগোপনে চলে গেছে। যারা এলাকায় অবস্থান করছে তাদের ওপর র্যাবের নজরদারি রয়েছে।
‘তারা কোনো প্রভাব খাটালে আমরা আবার গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসব। আর জামিনে বের হয়ে আত্মগোপনে চলে যাওয়াদেরও আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। তারা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছে কি না তা নিয়েও আমাদের গোয়েন্দারা কাজ করছে।’