মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম হলফনামায় পেশায় নিজেকে কণ্ঠশিল্পী ও ব্যবসায়ী উল্লেখ্য করেছেন। কিন্তু পেশা থেকে কোনো আয়ের কথা উল্লেখ করেননি তিনি। অথচ গত পাঁচ বছরে মমতাজ বেগমের আয় বেড়েছে ১০ লাখ ৭৩ হাজার টাকা এবং অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ১৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া এই সময়ের মধ্যে ভারতের আদালতে দুটি প্রতারণার মামলা হয়েছে এ সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে।
কণ্ঠশিল্পী এ সংসদ সদস্যের ২০১৮ ও ২০২৩ সালের হলফনামা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বর্তমানে মমতাজ বেগমের বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান, বাসাভাড়া, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত ও কৃষিসহ অন্যান্য খাত থেকে বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৪৯ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৮ টাকা। আর ২০১৮ সালে বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছিল ৩৮ লাখ ৮৪ হাজার ২৭৬ টাকা; তার মধ্যে গান গেয়ে আয় করেছিলেন ৭ লাখ টাকা। সেই হিসেবে গত পাঁচ বছরে মমতাজ বেগমের আয় বেড়েছে ১০ লাখ ৭৩ হাজার টাকা এবং অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ১৬ লাখ টাকা।
তবে এই পাঁচ বছরে তার ১ কোটি ২৫ লাখ টাকার স্থাবর সম্পদ কমেছে। বাড়েনি নগদ অর্থের পরিমাণও, তবে ঋণের পরিমাণ কমেছে।
অপরদিকে ২০১৪ সালের হলফনামায় মমতাজ বেগম ব্যবসা, ব্যাংক আমানত, সঞ্চয়পত্র, কৃষি ও পেশাসহ অন্যান্য খাত থেকে বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ৭৯ লাখ ২৬ হাজার ৮৩৪ টাকা। তবে ওই হলফনামায় বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট বা দোকানসহ এইসব খাত থেকে কোনো আয় ছিল না তার।
এ ছাড়া সংসদ সদস্য হিসেবে ভাতা ও আনুসঙ্গিক পারিতোষিক বাবদ বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ১৬ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে মমতাজ বেগমের হাতে নগদ ৫ লাখ এবং স্বামীর কাছেও নগদ ৫ লাখ টাকা রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। মধু উজালা কোল্ড স্টোরেজে ৩ কোটি ৫০ লাখ ৭০ হাজার টাকার শেয়ার, ৪৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, নিজ নামে ২৮ লাখ টাকা, ৪৬ লাখ ২০ হাজার এবং ১ কোটি ৩ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের তিনটি দামি গাড়ি রয়েছে। পাশাপাশি নির্ভরশীল ব্যক্তি অর্থাৎ তিন সন্তানের নামে মধু উজালা কোল্ড স্টোরেজে ৬৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকার শেয়ার রয়েছে।
২০১৮ সালের হলফনামায় তার কাছে নগদার্থের পরিমাণ ছিল ৫ লাখ এবং স্বামীর কাছে ছিল ২ লাখ টাকা এবং ২০১৪ সালের হলফনামায় মমতাজ বেগমের নগদার্থের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। তবে স্বামীর নামে কোনো টাকা ছিল না।
২০২৩ সালের হলফনামায় মমতাজ বেগমের নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা অর্থের পরিমাণ ১৮ লাখ ৮৫ হাজার ২১৮ টাকা এবং স্বামীর নামে জমা অর্থের পরিমাণ ১৮ লাখ টাকা। অপরদিকে ২০১৮ সালের হলফনামায় মমতাজ বেগমের নামে ছিল ৮৬ লাখ ৯৯ হাজার ১৯৭ টাকা এবং ২০১৪ সালের হলফনামায় ছিল ৩০ লাখ টাকা।
২০২৩ সালের হলফনামায় মমতাজ বেগমের নামে কৃষিজমির পরিমাণ ছিল ৯০০ শতাংশ। যার অর্জনকালীন মূল্য ছিল ৪৪ লাখ ২ হাজার ৭৩৪ টাকা এবং অকৃষিজমির পরিমাণ ছিল ৫০০ শতাংশ যার অর্জনকালীন মূল্য ছিল ৬৫ লাখ ৬৬ হাজার ৭৭০ টাকা। এ ছাড়াও ঢাকার মাহাখালীতে ৫ তলা একটি বাড়ি আছে যার মূল্য ৬ কোটি ৯৯ লাখ ৯৮ হাজার ৫০০ টাকা এবং সিংগাইরের জয়মন্টপ এলাকায় ২ তলা একটি বাড়ি আছে যার মূল্য ৫৭ লাখ ৫ হাজার ৪৪০ টাকা। তবে ২০১৪ সালের হলফনামায় মমতাজ বেগমের নামে কোনো বাড়ি ছিল না। কিন্তু মমতাজ বেগমের নামে একটি কোল্ড স্টোরেজ ছিল যার মূল্য ছিল ৯০ লাখ টাকা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মমতাজ বেগমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ১০জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। রমমতাজ বেগম তিনবার আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে একবার সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচিত হন তিনি। এবার দিয়ে টানা তিনবার তিনি নৌকার টিকিট পেলেন।