শ্রমিক ও তাদের অধিকার বিষয়ে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জারি করা স্মারকলিপিটি নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি পণ্যগুলো তার গুণমান, প্রতিযোগিতামূলক মূল্য ও সময়মতো পৌঁছে দেয়ার কারণে মার্কিন বাজারে প্রবেশাধিকার পায়। বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা খুবই স্মার্ট ও সক্রিয়। আমাদের গতিশীল বেসরকারি খাতের ওপর আমার আস্থা আছে। এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির একটি প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র। আমাদের বেসরকারি খাত তৈরি পোশাক রপ্তানি করে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাত বাংলাদেশি পণ্য কেনে।’
এ সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এমনকি আপনি যুক্তরাষ্ট্রের স্টোরগুলোতে অনেক চীনা পণ্যও পাবেন।
‘প্রেসিডেন্সিয়াল মেমোরেন্ডাম অন অ্যাডভান্সিং ওয়ার্কার এমপাওয়ারমেন্ট, রাইটস অ্যান্ড হাই লেবার স্ট্যান্ডার্ডস গ্লোবালি’ শিরোনামে ১৬ নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের এক স্মারকলিপি জারি করা হয়।
এতে বলা হয়, ‘যারা শ্রমিক ইউনিয়ন নেতাদের, শ্রম অধিকার রক্ষাকারী ও শ্রমিক সংগঠনগুলোকে হুমকি দেয়, ভয় দেখায় এবং হামলা করে তাদের জবাবদিহি করা হবে। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্য জরিমানা ও ভিসা বিধিনিষেধের মতো পদক্ষেপগুলো কার্যকর করতে তারা কাজ করবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কথা বললেও ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস বলছে ভিন্ন কথা।
স্মারকলিপিটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগ পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে বাংলাদেশের ‘শঙ্কিত হওয়ার’ অনেক কারণ আছে জানিয়ে ওয়াশিংটন দূতাবাস বাণিজ্য মন্ত্রনালয়কে এক চিঠিতে জানায়, স্মারকলিপিতে শ্রম অধিকার সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তার পেছনে রাজনীতি রয়েছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন উপায়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের চেষ্টা করবে।
ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাসের চিঠিতে বলা হয়, ‘স্মারকলিপিটি বাংলাদেশের জন্য একটি সংকেত। কারণ শ্রম সমস্যার অজুহাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এতে বর্ণিত যেকোনো ব্যবস্থা নিতে পারে। স্মারকলিপিটি বাংলাদেশের পোশাক খাতেও প্রভাব ফেলতে পারে এবং এটি সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিবেচনা করা উচিত।’
যদিও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের চিঠির বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে সাংবাদিকদের জানান।
এ সময় যুক্তরাষ্ট্র পুরো শ্রম খাতের জন্য উদ্যোগ নিলে বাংলাদেশ অবশ্যই স্বাগত জানাবে উল্লেখ করে মোমেন বলেন, ‘তারা যদি একটি ভালো নীতি গ্রহণ করে তাহলে সেটা হবে একটি মহৎ উদ্যোগ। আমি আশা করি যুক্তরাষ্ট্র ধনী দেশ হওয়ায় জলবায়ু ও অভিবাসন বিষয়ে ভালো উদ্যোগ নেবে।’
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি ইতিবাচক কর্মসূচি নিয়ে আসে, আমরা অবশ্যই এটাকে স্বাগত জানাব। বাংলাদেশ দেখতে চায় সব শ্রমিক ভালোভাবে জীবনযাপন করছে।’
কিছু লোকের মধ্যে দেশপ্রেমের অভাব আছে বলেও মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কোনো প্রচেষ্টা বাংলাদেশ দেখতে চায় না।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ছুটি থেকে ফেরার পর এটি রুটিন বৈঠক। আমরা খুশি যে তিনি ফিরে এসেছেন। নতুন কিছু নয়, শুধু রুটিন মিটিং।’