বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জোনভুক্ত হয়েও সরকারি সুবিধা পান না গাইবান্ধার জেলেরা

বছরের ৮ মাস ২২ দিন ইলিশ ধরায় সরকারের নানা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও জেলেরা তাদের মাছ ধরার এই পেশাটিকে টিকিয়ে রেখেছেন। কিন্তু ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে দেশের অন্যান্য প্রান্তের জেলেরা সরকারি প্রণোদনাসহ বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা ভোগ করলেও দীর্ঘদিন এ ধরনের সুবিধা থেকে দূরে রাখা হয়েছে গাইবান্ধার জেলেদের। এ নিয়ে আক্ষেপের শেষ নেই তাদের।

সারা দেশে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন এবং টেকসই ইলিশ আহরণ নিশ্চিতকল্পে ইলিশ জোন এলাকায় চলমান রয়েছে ‘ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প’। গাইবান্ধাও এই জোনের অর্ন্তভুক্ত। তবে দেশের উত্তরের এ সীমান্তের জেলাকে করা হয়নি প্রকল্পের আওতাভুক্ত। ফলে সরকারের এ প্রকল্পের সব ধরনের সুবিধা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থেকে বঞ্চিত রয়েছে গাইবান্ধার জেলেরা।

বছরের ৮ মাস ২২ দিন ইলিশ ধরায় সরকারের নানা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও জেলেরা তাদের মাছ ধরার এই পেশাটিকে টিকিয়ে রেখেছেন। কিন্তু ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে দেশের অন্যান্য প্রান্তের জেলেরা সরকারি প্রণোদনাসহ বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা ভোগ করলেও দীর্ঘদিন এ ধরনের সুবিধা থেকে দূরে রাখা হয়েছে গাইবান্ধার জেলেদের। এ নিয়ে আক্ষেপের শেষ নেই তাদের।

ইলিশ আহরণে নিয়োজিত জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার ওই প্রকল্পে গাইবান্ধাকে চলতি বছরেই অন্তর্ভুক্তির দাবি তুলেছেন জেলার সচেতনমহলসহ মৎস্য-সংশ্লিষ্টরা।

মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিকরণের লক্ষ্যে মা ইলিশ ও জাটকা সংরক্ষণে মৎস্য সংরক্ষণ আইন বাস্তবায়ন এবং ইলিশ শিকারি জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য মাছ ধরা থেকে শুরু করে জাতীয় এ মাছ বাজারজাতকরণ পর্যন্ত সম্পৃক্ত সকলকেই প্রকল্পের সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে ‘ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প’ হাতে নেয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ২০২০ সালে চালু হওয়া প্রকল্পটি ইলিশ জোন এলাকার দেশের ২৯টি জেলার ১৩৪টি উপজেলায় বাস্তবায়ন করে চলেছে মৎস্য অধিদপ্তর।

প্রকল্পটি যেসব উপজেলায় বাস্তবায়ন হচ্ছে ওই সব এলাকার ইলিশ আহরণ-সংশ্লিষ্ট জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য গরু-ছাগল, ভ্যানগাড়ি, বৈধ জাল বিতরণ এবং নগদ অর্থসহ প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

গাইবান্ধা জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, গাইবান্ধার সদর, সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা ও ফুলছড়ি- এ চার উপজেলা ইলিশ জোনের অন্তর্ভুক্ত এলাকা। ইলিশ জোনের এইসব এলাকায় জেলে রয়েছে অন্তত ৫ হাজার ৫০০ জন। এ ছাড়া সেখানে মাছঘাট রয়েছে ১২১টি, আড়ত ১৬৫টি এবং বাজার রয়েছে ২৫৫টি।

সূত্র জানায়, মা ইলিশ রক্ষায় সরকার ঘোষিত ১২ অক্টোবর হতে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন সারা দেশে ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং দণ্ডনীয় অপরাধ, যা প্রতি বছরই বাস্তবায়ন করা হয়।

ইলিশের প্রধান প্রজননের এ মৌসুমে গাইবান্ধার ইলিশ জোনের চার উপজেলায় যৌথ এবং একক অভিযান পরিচালিত হয়েছে মোট ৬৬টি। অভিযানে চার জেলেকে ৯ দিন এবং দুইজন জেলেকে চারদিন করে জেল দেয়া হয়েছে, যার মধ্যে একজন নৌকার মাঝিও রয়েছেন।

এ ছাড়া একই সময়ে অবৈধভাবে ইলিশ শিকারের দায়ে সাত লাখ টাকার বেশি মূল্যের প্রায় ৫৮ হাজার মিটার ইলিশ ধরার অবৈধ জাল পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে; উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় দুই মণ কেজি মা ইলিশ।

অভিযান সংশ্লিষ্টদের দাবি, যদি এইসব অভিযানে দপ্তরের পর্যাপ্ত জনবল, নিজস্ব আইন বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ এবং নিজস্ব নৌযান থাকত, তবে জাল আটক এবং জেল-জরিমানার পরিমাণ আরও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেত।

বর্তমানে ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ২৩ সেন্টিমিটারের নিচে (জাটকা) ইলিশ মাছ ধরার নিষিদ্ধ কাল চলমান। এর মধ্যে ইলিশ আহরণের নিষিদ্ধ এ সময়ে (১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর) জেলেদের মানিবক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় গাইবান্ধায় চার উপজেলার নদী-সংলগ্ন ইলিশ এলাকাভুক্ত ৫ হাজার ৫০০ জেলে পরিবারের প্রত্যেকের মধ্যে ২৫ কেজি করে মোট ১৩৭ দশমিক ৫০ টন চাল (ভিজিএফ) বিতরণ করা হয়েছে যা প্রকল্প সুবিধার তুলনায় একেবারেই যৎসামান্যই।

অবশ্য গাইবান্ধা সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদ ইলিশ জোনের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এ উপজেলাকে ‘ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা’ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তির জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে জানায় সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়।

গত ৪ অক্টোবর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মারজান সরকার স্বাক্ষরিত ওই পত্রের প্রস্তাবের স্বপক্ষে যুক্তি অংশে বলা হয়েছে, সারা দেশে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন এবং টেকসই ইলিশ আহরণ নিশ্চিতকল্পে ইলিশ জোন এলাকায় ‘ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প’ চলমান। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ইলিশ আহরণে নিয়োজিত জেলেদের আয়বর্ধক বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয় (গরু-ছাগল বিতরণ, ভ্যান বিতরণ ইত্যাদি), বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডও পরিচালিত হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ইলিশ জোনের অন্তর্ভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও গাইবান্ধা সদর উপজেলা এ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় এখানকার জেলেরা সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই অতিসত্বর এ উপজেলাকে ‘ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প’-এ অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।

এ ছাড়া পত্রের উত্তোরণ এবং বাস্তবায়নের সুপারিশ অংশে বলা হয়েছে, ‘ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত গাইবান্ধা জেলা টাস্কফোর্স কমিটি’-র মাধ্যমে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব মৎস্য অধিদপ্তরে প্রেরণ করা গেলে অত্র উপজেলা ‘ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প’-এর অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে।

এ বিষয়ে ফুলছড়ি উপজেলার রসুলপুর নয়াগ্রাম মৎসজীবী (জেলে) সমবায় সমিতির সভাপতি দবির আহম্মেদ বলেন, ‘বছরের বিভিন্ন সময়ে ইলিশ ধরায় সরকারের বাধা-নিষেধ থাকে। অক্টবরের ২২ দিন মা ইলিশ ধরা বন্ধ ছিল। আর এখন ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত টানা ৮ মাস জাটকা ধরা নিষেধ। তার পরও গরীব জেলেরা পেটের দায়ে যখন মাছ ধরতে যায় তখন তাদের জাল পোড়ানো হয়, জেল দেয়া হয়। কিন্তু ইলিশ জোন হওয়া সত্ত্বেও এখানে সরকারি প্রকল্প না থাকাটা চরম বৈষম্যের। প্রকল্পটি চালু হলে এখানকার জেলেদের অনেক উপকার হবে।’

চলতি বছরের মধ্যেই প্রকল্পটিতে গাইবান্ধাকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান তিনি।

গাইবান্ধা নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘গাইবান্ধা দারিদ্র্যপ্রবণ একটি জেলা। এখানকার জেলেরা প্রতিবছরই খরায় পোড়ে, বন্যায় ভাসে। প্রতিনিয়তই তাদেরকে নানা দূর্যোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে বাঁচতে হয়। তাই ইলিশ জোনের জেলার চার উপজেলাকে প্রকল্পটিতে অন্তর্ভুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি।’

সদর উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. মারজান সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ উপজেলাকে ওই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করতে আমি সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। প্রকল্পটি চালু হলে জেলেরা সরকারি অনুদান (গরু-ছাগল, ভ্যান, বৈধ জাল, প্রশিক্ষণ ও নগদ অর্থ ইত্যাদি) পাবে। এতে তাদের আয়বর্ধক বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।’

এ সময় ‘এত দিনেও কেন ইলিশ জোনের এসব উপজেলাকে প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তির জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি?’ প্রশ্নের উত্তরে এ কর্মকর্তা ‘বিষয়টি আমার জানা নেই’ বলে এড়িয়ে যান।

গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আব্দুল আউয়াল মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মা ইলিশ ধরার নিষিদ্ধ সময়ে জেলে পরিবারের মাঝে ২৫ কেজি করে ভিজিএফ-এর চাল দেয়া হয়েছে। ইলিশ জোনের এই চার উপজেলাকে প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করতে বিধি মোতাবেক দ্রুতই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর