জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ও তার পরিবার সম্পর্কে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় ব্যাখ্যা চেয়ে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মারুফা আক্তার পপিকে নোটিশ দিয়েছে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগ। গত ২৫ নভেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিজন কুমার চন্দ স্বাক্ষরিত ওই চিঠির একটি কপি নিউজবাংলার হাতে এসেছে।
তবে এখনও কোনো চিঠি পাননি বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মারুফা আক্তার পপি।
মির্জা আজম ও মারুফা আক্তার দুজনই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা। মির্জা আজম আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মারুফা আক্তার পপি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য পদে রয়েছেন। এ ছাড়া জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদেও আছেন পপি।
চিঠিতে মারুফা আক্তার পপিকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, আপনার ব্যবহৃত ফেসবুক আইডি থেকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম সম্পর্কে অযৌক্তিক, ভিত্তিহীন অভিযোগ এবং তার মরহুম পিতা-মাতা এবং পরিবার-পরিজন সম্পর্কে অশালীন বক্তব্য প্রদান করেছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদে থেকে আপনার এই ধরনের বক্তব্য প্রদান অসাংগঠনিক, বিব্রতকর ও সংগঠনের সার্বিক শৃঙ্খলাপরিপন্থী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে এহেন ভূমিকা গ্রহণযোগ্য নয়। সংগঠনের বৃহত্তর স্বার্থে উপরিউক্ত বক্তব্য ও ফেসবুকে স্ট্যাটাসসমূহের উপযুক্ত ব্যাখ্যা সাত দিনের মধ্যে প্রদানের জন্য বলা হলো।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. বাকী বিল্লাহ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ দল। এই দলের প্রত্যেকটি নেতাদের ব্যক্তিগত আচরণ এবং শৃঙ্খলা জনসাধারণ নিবিড়ভাবে প্রত্যক্ষ করে। তাই আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা এবং দলের ভাবমূর্তি যাতে বিনষ্ট না হয় প্রত্যেক নেতার এ বিষয়টি মাথায় রাখা উচিৎ। তিনি (পপি) ও তার অনুসারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাস ও ভিডিও কনটেন্ট নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি সামগ্রিকভাবে বাধাগ্রস্ত করবে বলে মনে হয়। তাই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য মারুফা আক্তার পপির কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে পপির সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমি এখনও চিঠি পাইনি, তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি। আমার ব্যক্তিগত আইডি থেকে স্ট্যাটাস দিয়েছি। তাই মির্জা আজম সাহেব ব্যক্তিগতভাবে আমাকে নোটিশ করতে পারতেন। তা না করে তিনি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক স্বার্থ সিদ্ধির জন্য সংগঠনকে ব্যবহার করছেন। আমার মনে হয়, এটা এক ধরনের সাংগঠনিক ক্রাইম। এ ব্যাপারে আমাকে জবাবদিহি করতে হলে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে আমি জবাব দেব।’
জেলা আওয়ামী লীগ তাকে নোটিশ দিতে পারে কি না- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, কিন্তু তার আগে আমি কেন্দ্রীয় কমিটির তিনবারের সদস্য। আমাকে নোটিশ দিতে পারে কি না- এ বিষয়টি আজম সাহেব ও জেলা আওয়ামী লীগ ব্যাখ্যা করবেন।’
এর আগে, গত ২০ নভেম্বর জামালপুর শহরের মির্জা আজম অডিটোরিয়ামে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে জামালপুর-৫ (সদর) আসনে দলের প্রার্থী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদকে পরিচয় করিয়ে দেন সভার প্রধান অতিথি সংসদ সদস্য মির্জা আজম।
সভায় নেতাদের বক্তব্য শেষে মারুফা আক্তার পপি দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিতে চাইলে সে সময় মির্জা আজম তাকে বসতে বলেন। কয়েকবার বসার জন্য বললেও তিনি স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় মির্জা আজম তাকে ধমক দেন।
ওই ঘটনার পর মারুফা আক্তার পপির সমর্থকরা তার সঙ্গে অসদাচরণের প্রতিবাদে পরদিন (২১ নভেম্বর) সদর উপজেলার নান্দিনা, তিতপল্লা ও বারুয়ামারিতে মানববন্ধন করেন।
এদিকে আজ দুপুরে জামালপুরের মেলান্দহে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিক্ষক ও কর্মচারীদের ব্যানারে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য মারুফা আক্তার পপির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ষড়যন্ত্র ও মির্জা আজমকে নিয়ে কটুক্তির বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।