জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হকের মৃত্যুর পর উপাচার্য পদটি শূন্য হয়েছে। তিনি প্রয়াত হওয়ায় নতুন উপাচার্য কে হবেন তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে আলোচনা।
শিক্ষার্থীরা জানায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় একজন যোগ্য অভিভাবক হারিয়েছে। শিক্ষার্থী হিসেবে তার কাছে যেকোনো সময় যেকোনো বিষয়ে গেলে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে শুনতেন। প্রায়ই তিনি শিক্ষার্থীদের নিজের সন্তানের মতো করে জীবন ও ক্যারিয়ার নিয়ে বিভিন্ন আদেশ-উপদেশ দিতেন।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কাজের অগ্রগতি ঠিক রাখতে তারা দ্রুতই নতুন উপাচার্য চান।
এ ছাড়া উপাচার্য কিংবা কোষাধ্যক্ষের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় নিয়োগ হোক জবি থেকেই, বিভিন্ন সময়ে শিক্ষক সমিতিও এ দাবি জানিয়ে আসছে। এখন পদটি শূন্য হওয়ায় তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষককে এ পদে নিয়োগ দেয়া হোক।
এ বিষয়ে জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন শতাধিক অধ্যাপক রয়েছেন। এর মধ্যে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক আছেন ৩০ থেকে ৩৫ জন। আমরা চাই এর মধ্য থেকেই উপাচার্য নিয়োগ হোক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী সবার একই চাওয়া। উপাচার্য প্রয়াত হয়েছেন, এটা সরকারের সংশ্লিষ্টরা নিশ্চয়ই অবগত আছেন। তাদের বিবেচনায় যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ পাবেন।’
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. একেএম লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমরা বিবৃতি দিয়ে উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদ দুটিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চেয়েছি।’
মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সকলেই ভালো করছে এবং সিনিয়র শিক্ষকদের উপাচার্য চাওয়া যৌক্তিক মনে করি।’
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. নূরে আলম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘জবি থেকে উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ মেয়াদ শেষ হলে জবি থেকে নিয়োগ দেয়া হোক এমনটি আমি চাই।’
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজী বলেন, ‘ভিসি স্যার মারা যাওয়ার কারণে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। বিশ্ববিদ্যালয়টির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামালউদ্দিন আহমদ দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করছেন এবং আমি চাই স্যারকে উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হোক।
‘এ ছাড়াও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিনিয়র অধ্যাপকরা আছেন তাদেরকে দায়িত্ব দিলেও আমরা আনন্দিত হব।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগে উপাচার্য অসুস্থ থাকায় কোনো সিন্ডিকেট সভা হয়নি। কিছুদিন আগে অনলাইনে হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে যায়। এদিকে প্রতিষ্ঠানটিতে নেই উপউপাচার্য পদও। তাই দীর্ঘদিন অভিভাবকহীন হয়ে থাকলে অনেক কাজ স্থবির হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিন বলেন, ‘উপাচার্য অসুস্থ থাকার সময় থেকেই সিন্ডিকেট সভা হচ্ছে না। তা ছাড়া নানা ধরনের প্রশাসনিক কাজও বন্ধ হয়ে আছে। একটা বিশ্ববিদ্যালয় এভাবে চলতে পারে না। আমি ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের কাছে বলেছি উপাচার্য নিয়োগের ব্যাপারে যাতে তারা দ্রুত কথা বলেন।’
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শুরুতে অধ্যাপক ইমদাদুল হকের ক্যান্সার ধরা পড়ে। উন্নত চিকিৎসা নিতে গত ১২ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে যান তিনি। পরে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় তিনি ১২ অক্টোবর দেশে ফিরে আসেন। তবে ১১ নভেম্বর ভোরে রাজধানীর বিআরবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।