বরিশাল-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত পংকজ দেবনাথের অনুসারীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও তালা লাগিয়ে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রোববার সন্ধ্যার পর এ আসনের হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় দোকানে হামলা-ভাঙচুর এবং বন্ধ করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট দুই থানার ওসি ও আওয়ামী লীগ নেতারাও বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
হিজলা উপজেলার হিজলা-গৌরব্দী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘রোববার সন্ধ্যার পর বরিশাল-৪ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শাম্মী আহম্মেদের অনুসারী মাহিম, সিরাজ ও নাদিমের নেতৃত্বে অন্তত ৫০/৬০ জন লোক আসে। তারা তার (ফখরুল) ভাই ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মনির বেপারী ও জসিম মোল্লার ইটের ভাটায় হামলা ও ভাঙচুর চালায়।’
সাবেক এমপি পংকজ দেবনাথের অনুসারী হওয়ায় তাদের ওপর হামলা করা হয় জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘হামলাকারীরা প্রথমে ইটভাটায়, পরে ইউনিয়নের বান্দ্রা বাজারে অবস্থিত আমার ভ্যারাইটিজ স্টোর, ভাই মনিরের মুদি দোকান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য সামসু খাঁর ভ্যারাইটিজ স্টোর, কাসেম হাওলাদারের বেকারি, নাসির খাঁর কাপড়ের দোকানে হামলা-ভাঙচুর করে।’
হামলার ভয়ে বর্তমানে তারা এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন বলে নিউজবাংলাকে জানান ফখরুল।
সন্ধ্যা সাতটার দিকে গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বান্দেরহাট বাজার ব্যবসায়ী কাজী হানিফের দোকানে হামলাকারীরা তালা দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হিজলা উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য অফেনূর বেগম বলেন, ‘আমি পংকজ দেবনাথের অনুসারী। তাই সোমবার সকাল আটটার দিকে শাম্মীর অনুসারী মহসিন কবির, জসিম ও আরিফ এসে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এ সময় তারা আমার ছেলে অন্তুকেও মারধর করে। এ সময় হামলাকারীরা হুমকি দেয়, নির্বাচন শেষ হলে আমার ছেলে শান্তকে হ্যামার (হাতুড়ি) দিয়ে হাত-পা গুঁড়িয়ে দেবে।’
অভিযোগ সম্পর্কে হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ টিপু সিকদার বলেন, ‘দীর্ঘদিনের ক্ষোভের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। তাৎক্ষনিক সবাইকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, এ ধরনের কোনো ঘটনা যেন না ঘটে। সকলেই দলের লোক। তাদের নিয়ে কাজ করতে হবে।’
হিজলা থানার ওসি জুবাইর আহমেদ বলেন, ‘যে সকল স্থানে ঘটনা ঘটেছে প্রত্যেকটি স্থানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। সকলকে অভিযোগ দিতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এদিকে মেহেন্দিগঞ্জের পাতারহাট বন্দরের উত্তর বাজার এলাকায় সাবেক সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথের বাড়ির সামনে পাঁচটি দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে।
এ বিষয়ে দোকানী শ্যামল দেবনাথ জানান, রোববার সন্ধ্যার পর ১০/১৫ জনের একটি দল এসে অকথ্য ভাষায় গালাগাল দিয়ে তার দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে গেছে। হুমকির পর রিপন ও অসীম দেবনাথের চা-বিস্কুটের, সঞ্জয় দেবনাথের পাখির খাবারের, শুভ ও তার (শ্যামল) স্টেশনারি দোকান বন্ধ করা হয়।
সোমবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত দোকান খোলা হয়নি জানিয়ে শ্যামল বলেন, ‘পুলিশ এসেছিল। তারা তথ্য জেনে চলে গেছে।’
এ বিষয়ে মেহেন্দিগঞ্জ থানার ওসি মো. ইয়াসিনুল হক বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। কী ঘটেছে জানতে পাঠিয়েছি। তারা এলে তথ্য পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত দেয়া হবে।’
এ বিষয়ে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহাবউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এ ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়- সেটা সবাইকে বলে দেয়া হয়েছে।’
প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে জানানর জন্য ড. শাম্মী আহম্মেদের নম্বরে কল করা হলে তিনি তা রিসিভ করেননি।